মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
মাহমুদুল হক
একজাতের স্ত্রীলোক আছে যারা কেবল একজন পুরুষের স্ত্রী হবার মানসেই জন্মায়। উচ্ছে ভাজা, মিষ্টি কুমড়োর ঘন্ট, শজনে ডাঁটার ঝোল, এসবে তাদের হাত পাকানো থাকে। সেলাই-ফোঁড়, পুরানো শাড়ি কাপড়ের বদলে কাপ-ডিশ কেনা, বছর না ফুরোতেই বাচ্চা বিয়ানো, দিব্যি ডুবে থাকে এইসবের ভিতর। ঠিক এই গ্রুপে পড়ে না সিদ্দিকাভাবী। বরং বলা যায়, একটা জলজ্যান্ত হেঁয়ালি; মাড়িচাপা এবং ভিতরগোঁজা কিসিমের। সাতেও নেই পাঁচেও নেই, উপর থেকে কতকটা এই রকমই, অথচ গোটা সংসারটাকে অতি সহজে শক্ত মুঠোর ভিতর পুরে রেখেছে।
ঘরটা থমথমে। ছোট্ট একটা মেয়ে ঘামে চাবচুব হয়ে খাটের একপাশে ন্যাতার মতো প’ড়ে আছে, নাল গড়াচ্ছে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে। খুব সম্ভব পড়শীদের কোনো মেয়ে, নীলাভাবীদের কারো কোনো সন্তানাদি নেই। ঝুপঝাপ পানি ঢালার শব্দ আসছে কুয়োতলা থেকে। থেমে থেমে আবার গুনগুনিয়ে উঠছে নীলাভাবী। কাচের চুড়ি বাজছে। দু’হাত ভরা কাচের চুড়ি নীলাভাবীর। কাচের চুড়ি পরার বেজায় শখ: হামেশাই কুটকাট ক’রে ভাঙে আর মন খারাপ হয়, সেই জন্যেই এতো অনুরাগ নীলাভাবীর।
রজুকে আনতে হবে একদিন। বলেও দেখেছে একবার রজুকে; গায়ে না মেখে সে উড়িয়ে দিয়েছে। ‘তোর খাতিরের জায়গা, আমাকে নিয়ে আবার টানাটানি কেন’ মুখের ওপর বলেছিলো রঞ্জু।
কেমন যেন রুদ্ধশ্বাস, মুখোশপরা এই বাড়িটা; সবসময় গুমোট, ভ্যাপসা গরম। চাপা অসন্তোষের অনচ্ছ আচ্ছাদনের ভার সহ্য করতে না পেরে থেকে থেকে কাতরাচ্ছে বাড়িটা, অহরহ তুলতুলে ভয় হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে; ভালোও লাগবে না হয়তো রঞ্জুর। এ বাড়িতে একমাত্র ব্যতিক্রম হলো নীলাভাবী। নীলাভাবী না থাকলে শ্মশানপুরী হ’য়ে যেত বাড়িটা।
‘খোকাবাবু যে, কখন এলে?’
‘এই তো, কিছুক্ষণ!’
‘পথ ভুলে বুঝি?’
‘কতকটা তাই–‘
Sarakhon Report 



















