ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়াদের মধ্যে প্রচলিত আধুনিক কিছু বিশ্বাস
মায়া-সভ্যতার নানা স্বকীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে পারলাম। এই বিষয়গুলি প্রধানত বস্তুগত দেখা যায়। কিন্তু এর বাইরে এবার আমরা কিছু ধারণা,বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করব। মায়াদের মধ্যে আইন এবং ন্যায় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লক্ষ্য করা গেছে। ব্যক্তি হিসেবেও মায়ারা আপেক্ষিকভাবে সৎ। ছোটখাটো চুরিও কার্যত অজানা কোনো ব্যাপার। এর প্রমাণ আমরা পাই যখন জানি মায়াদের ঘরে প্রায় সারাদিনই কোনরকম তালাচাবি দেওয়া হয় না। কিন্তু ভারতীয় চিত্রটি অন্যরকম,এখানে জমিদার বা জমি থেকে অনেক দূরে চাষবাস সব কিছুই কিছুটা অনিশ্চিত।
এ প্রসঙ্গে জনৈক পশ্চিমী পণ্ডিত বলেন যদি কেউ ক্ষেতের কিছু দ্রব্য চুরি করে তাহলে ক্ষেতের দেবতা রুষ্ট হন এবং সেই দেবতা- আত্মা তাকে মেরে ফেলে। এই লোকবিশ্বাসসুলভ প্রথাই ক্ষেতের ফসলের মূল চাবি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ভারতীয় সমাজ-সভ্যতার সনাতন প্রথা এই মতকে সমর্থন করে না। ভারতীয় ঐতিহ্য এবং তার শিক্ষা এই কথাই বলতে চায় যে কৃষিসমাজে প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধই মায়া-সমাজের মানুষকে শস্য চুরি থেকে বিরত করেছে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা মাঠে ফসল চুরি না হওয়ার পেছনেও কৃষিসমাজে গড়ে ওঠা মূল্যবোধ কাজ করে।
মায়া–সমাজে দাম্পত্য প্রেমের মূল্যবোধ: মায়া-সমাজের বস্তুগত সভ্যতার বেশ কিছু নিদর্শন আমরা আলোচনা করেছি। কিন্তু এ বাদেও তাদের মধ্যে মানবিক ও মূল্যবোধগত কিছু বৈশিষ্ট। লক্ষ করা গেছে। এসবের মধ্যে পারিবারিক জীবনে দাম্পত্য সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য। দাম্পত্য প্রেম এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালবাসা, স্নেহ, মায়ামমতা, অনুভূতি লক্ষ্যণীয়। মা-বাবা ছেলে-মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই যত্ন করে। শিশুদের দুধ খাওয়ানো এবং ছোটদের ঘুম পাড়াবার জন্য নানা ধরনের গান গায়। শিশুদের সামাজিক শিক্ষাদানে কঠিন নিয়মকানুনের চেয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ, ঐতিহ্য বেশি কাজ করে।
(চলবে)
মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৫১)