০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
ডেমোক্র্যাটদের নীতির ব্যর্থতা যেভাবে মামদানিকে জয়ী করল মার্কো রুবিওর উপস্থিতিতে ডিআরসি-রুয়ান্ডা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর কংগ্রেসের বহু নেতা ইন্দিরা জি ও জেপি-র সংলাপ চেয়েছিলেন, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল তা হতে দেয়নি হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২) ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৭) সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ? ‘আকাশ হয়ে যাই’ মিউজিক ভিডিতে প্রশংসিত পূর্ণিমা বৃষ্টি সাউথ চায়নান মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ইরান আক্রমনে লাভ ক্ষতি

পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছে

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 15

ফারহান বুখারি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা যখন ২৪ নভেম্বর রাজধানী ইসলামাবাদে মিছিল করার নির্দেশ পান, তখন থেকেই শহরের জনজীবন কার্যত থমকে যায়।

সরকারকে বাধ্য হয়ে ইন্টারনেট বন্ধ করতে হয়েছে, রাজধানীতে যাওয়ার প্রধান সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, স্কুলগুলো বন্ধ, এবং কঠোর নিরাপত্তা অভিযানের ফলে শত শত বিরোধী কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার সকালে খানের সমর্থকরা পিছু হটতে শুরু করলেও, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের ওপর বিশাল চাপ তৈরি হয়েছে। কারাগারে থাকলেও ইমরান খান পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে আবারও আবির্ভূত হয়েছেন, এবং তার সমর্থকরা তার নির্দেশে আন্দোলনে প্রস্তুত।

এই প্রতিবাদ গত ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত সংসদীয় নির্বাচনের পর সবচেয়ে বড় আন্দোলন। সেই নির্বাচন ইমরান খান এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) “কারচুপি” হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

এই সপ্তাহের অস্থিরতায় অনেকেই গত আগস্টে বাংলাদেশের শক্তিশালী নেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার মতো পরিবর্তনের আশঙ্কা করছেন।

বর্তমান অস্থিরতা সরকার এবং সেনাবাহিনীর জন্য দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। একদিকে, কারাবন্দি ইমরান খান এখনো শক্তিশালী এবং জনপ্রিয়। অন্যদিকে, পাকিস্তান অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা থেকে বঞ্চিত।

খানের সমর্থকরা, যারা আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে প্রাদেশিক সরকার পরিচালনা করছে, বারবার সেই অঞ্চলকে ব্যবহার করে নতুন করে আন্দোলন সংগঠিত করছে।

খান রাওয়ালপিন্ডির কারাগারে থাকলেও তার সমর্থকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তারা তার মুক্তি এবং নতুন নির্বাচন দাবি করছেন।

বর্তমানে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, যা দেশের রাজনীতিতে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে, দৃশ্যত শাহবাজ শরিফের প্রতি অনুগত। তবে, আরও বড় কোনো সংকট বা চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে, কঠোরপন্থী জঙ্গিদের সাথে সংশ্লিষ্ট সহিংসতা দেশের দুর্বল নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের একটি ট্রেন স্টেশনে হামলা এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে শিয়া মুসলিমদের ওপর এক দিনে ৪০ জনেরও বেশি নিহতের ঘটনা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের উপর নির্ভর করছে:

প্রথমত, ইমরান খান এবং তার শত শত সমর্থককে কারাগারে রাখার কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। তাদের মুক্তি এবং একটি জাতীয় আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন বিতর্ক থেকে উত্তরণ এবং বৈধতার স্বীকৃতির জন্য নতুন নির্বাচন প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত, আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সহিংসতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বিশেষত বেলুচিস্তান প্রদেশে, যেখানে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) প্রকল্পগুলি ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতার মুখোমুখি। এইসব সমস্যার সমাধানে জাতীয় ঐক্য এবং দৃঢ় নিরাপত্তা নীতির প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য কঠোর সংস্কার দরকার। রাজস্ব এবং কর ব্যবস্থা দুর্বল এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সমান। শক্তিশালী আর্থিক খাতের ওপর কর চাপানো হলেও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ভূমি-মালিকরা এখনও আয়কর দিতে বাধ্য নয়। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

পরিস্থিতি শান্ত করার মাধ্যমে পাকিস্তানকে একটি স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য, পাকিস্তানের আফগানিস্তানের সঙ্গে অবস্থান এবং ভারতের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সংঘাত উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। কারাবন্দি ইমরান খানের প্রভাব এবং তার সমর্থকদের আন্দোলন অবশ্যই দ্রুত সমাধান করতে হবে।

ডেমোক্র্যাটদের নীতির ব্যর্থতা যেভাবে মামদানিকে জয়ী করল

পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছে

০৮:০০:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

ফারহান বুখারি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা যখন ২৪ নভেম্বর রাজধানী ইসলামাবাদে মিছিল করার নির্দেশ পান, তখন থেকেই শহরের জনজীবন কার্যত থমকে যায়।

সরকারকে বাধ্য হয়ে ইন্টারনেট বন্ধ করতে হয়েছে, রাজধানীতে যাওয়ার প্রধান সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, স্কুলগুলো বন্ধ, এবং কঠোর নিরাপত্তা অভিযানের ফলে শত শত বিরোধী কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার সকালে খানের সমর্থকরা পিছু হটতে শুরু করলেও, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের ওপর বিশাল চাপ তৈরি হয়েছে। কারাগারে থাকলেও ইমরান খান পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে আবারও আবির্ভূত হয়েছেন, এবং তার সমর্থকরা তার নির্দেশে আন্দোলনে প্রস্তুত।

এই প্রতিবাদ গত ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত সংসদীয় নির্বাচনের পর সবচেয়ে বড় আন্দোলন। সেই নির্বাচন ইমরান খান এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) “কারচুপি” হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

এই সপ্তাহের অস্থিরতায় অনেকেই গত আগস্টে বাংলাদেশের শক্তিশালী নেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার মতো পরিবর্তনের আশঙ্কা করছেন।

বর্তমান অস্থিরতা সরকার এবং সেনাবাহিনীর জন্য দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। একদিকে, কারাবন্দি ইমরান খান এখনো শক্তিশালী এবং জনপ্রিয়। অন্যদিকে, পাকিস্তান অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা থেকে বঞ্চিত।

খানের সমর্থকরা, যারা আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে প্রাদেশিক সরকার পরিচালনা করছে, বারবার সেই অঞ্চলকে ব্যবহার করে নতুন করে আন্দোলন সংগঠিত করছে।

খান রাওয়ালপিন্ডির কারাগারে থাকলেও তার সমর্থকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তারা তার মুক্তি এবং নতুন নির্বাচন দাবি করছেন।

বর্তমানে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, যা দেশের রাজনীতিতে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে, দৃশ্যত শাহবাজ শরিফের প্রতি অনুগত। তবে, আরও বড় কোনো সংকট বা চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে, কঠোরপন্থী জঙ্গিদের সাথে সংশ্লিষ্ট সহিংসতা দেশের দুর্বল নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের একটি ট্রেন স্টেশনে হামলা এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে শিয়া মুসলিমদের ওপর এক দিনে ৪০ জনেরও বেশি নিহতের ঘটনা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের উপর নির্ভর করছে:

প্রথমত, ইমরান খান এবং তার শত শত সমর্থককে কারাগারে রাখার কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। তাদের মুক্তি এবং একটি জাতীয় আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন বিতর্ক থেকে উত্তরণ এবং বৈধতার স্বীকৃতির জন্য নতুন নির্বাচন প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত, আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সহিংসতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বিশেষত বেলুচিস্তান প্রদেশে, যেখানে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) প্রকল্পগুলি ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতার মুখোমুখি। এইসব সমস্যার সমাধানে জাতীয় ঐক্য এবং দৃঢ় নিরাপত্তা নীতির প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য কঠোর সংস্কার দরকার। রাজস্ব এবং কর ব্যবস্থা দুর্বল এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সমান। শক্তিশালী আর্থিক খাতের ওপর কর চাপানো হলেও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ভূমি-মালিকরা এখনও আয়কর দিতে বাধ্য নয়। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

পরিস্থিতি শান্ত করার মাধ্যমে পাকিস্তানকে একটি স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য, পাকিস্তানের আফগানিস্তানের সঙ্গে অবস্থান এবং ভারতের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সংঘাত উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। কারাবন্দি ইমরান খানের প্রভাব এবং তার সমর্থকদের আন্দোলন অবশ্যই দ্রুত সমাধান করতে হবে।