০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৮০)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
  • 23
শ্রী নিখিলনাথ রায়
তবে ব্রাহ্মণদিগের বিশেষ আদেশ তাঁহাদের ধৰ্ম্মগ্রন্থে লিখিত আছে, সে সকলের বিষয় আমি, কিছুই অবগত নহি। আহারের পূর্ব্বে স্নান করা আবশ্যক কিনা, এই কথার উত্তরে কান্ত বাবু বলেন যে, আহারের পূর্ব্বে মানাহ্নিক করা নিয়ম বটে। কিন্তু যে স্থলে লোকে স্নান করিতে পারে না, সে স্থলে আহারের পূর্ব্বে আহ্নিক করিতে হয়। ছোট জাতিরা স্নান না করিয়াও আহার করিয়া থাকে। উহার পর কান্ত বাবুকে শেষ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় যে, যদি দুর্ভাগ্যক্রমে তোমাকে কারাবাস করিতে হয়, তাহা হইলে তোমার জাতিনাশ হওয়ার বিপদ ঘটিতে পারে কি না?
তাহাতে তিনি উত্তর দেন যে, শুধু কারাবাস করিলে জাতিনাশের ভয় নাই, তবে খুন ডাকাতি প্রভৃতি করিয়া কারাবাস করিলে জাতি যাইবার সম্ভাবনা আছে। কান্ত বাবুর এই সকল উক্তি হইতে বেশ বুঝা যায় যে, তিনি বাস্তবিকই নীচলোকদিগের বিচার করিতেন, কারণ শাস্ত্রজ্ঞান না থাকিলে কখন ব্রাহ্মণাদি জাতির বিচার করা সম্ভবপর হয় না। যাহা হউক, জাতিঘটিত বিচারালয়ের একটি প্রধান পদে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, তাঁহার গৌরবের যে একটি নিদর্শন, ইহা আবশ্য স্বীকার করিতে হইবে। হেষ্টিংসের যে কয়েকটি প্রিয়পাত্র ছিলেন, তন্মধ্যে কান্তবাবু শান্ত-প্রকৃতি ও অপেক্ষাকৃত ধর্মভীরু বলিয়া বোধ হয়।
যদিও অর্থের প্রলোভনে তাঁহার জীবনে পদে পদে তাঁহাকে সৎপথ হইতে বিচলিত হইতে দেখা যায়, তথাপি দেবী সিংহ ও গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের জায় তিনি অত্যাচারী বা পূর্ণমাত্রায় প্রবঞ্চক ছিলেন না। দেশের যাবতীয় লোকের সর্ব্বনাশ সংঘটন করিতে হইবে বলিয়া, তিনি কোম্পানীর দেওয়ানী লইতে স্বীকৃত হন নাই; তাঁহার অপারগতা তাহার প্রধান কারণ হইলেও উপরোক্ত কারণটি অন্যতম। পরে উক্ত দেওয়ানী সুবিখ্যাত গঙ্গাগোবিন্দের প্রতি অর্পিত হওয়ায়, তিনি বঙ্গদেশে আপনার নাম চিরস্মরণীয় করিয়া গিয়াছেন। অর্থলালসা প্রবল থাকায়, কান্তবাবুকে অনেকগুলি অসৎকম্ম করিতে হইয়াছিল; প্রবল অর্থলালসাবশে তিনি স্বীয় প্রভু হেষ্টিংসের মনস্তষ্টি-সম্পাদনার্থ প্রায়শঃ কর্তব্যাকর্তব্য বিবেচনা করিতেন না।
যদিও অর্থলালদার জন্য কান্তবাবু সাধুসমাজে নিন্দিত হইয়াছেন, তথাপি সে সময়ের কথা ভাবিতে গেলে, তাঁহাদিগের দোষের মাত্রা অতাধিক মনে না করাই যুক্তিসঙ্গত। যে সময়ে সাধারণ লোকসমাজে উৎকোচগ্রহণ, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা প্রভৃতি বিশেষ দোষ বলিয়া গণ্য হইত না; সে সময়ের লোকেরা ঐরূপ কোন অপরাধ করিলে তাঁহাদিগকে ক্ষমা করাই উচিত। তবে দোষ চিরকালই নিন্দনীয়। তৎসম্বন্ধে সময়াসময় বিবেচনা করা যাইতে পারে না; সত্যের অনুরোধে কান্ত বাবুর সম্বন্ধে আমাদিগকে দুই একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলিতে হইয়াছে। হেষ্টিংস কান্ত বাবুর কার্য্যে সন্তুষ্ট হইয়া, তাঁহাকে রাজোপাধি প্রদান করিতে প্রতিশ্রুত হন।

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৮০)

১১:০০:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
শ্রী নিখিলনাথ রায়
তবে ব্রাহ্মণদিগের বিশেষ আদেশ তাঁহাদের ধৰ্ম্মগ্রন্থে লিখিত আছে, সে সকলের বিষয় আমি, কিছুই অবগত নহি। আহারের পূর্ব্বে স্নান করা আবশ্যক কিনা, এই কথার উত্তরে কান্ত বাবু বলেন যে, আহারের পূর্ব্বে মানাহ্নিক করা নিয়ম বটে। কিন্তু যে স্থলে লোকে স্নান করিতে পারে না, সে স্থলে আহারের পূর্ব্বে আহ্নিক করিতে হয়। ছোট জাতিরা স্নান না করিয়াও আহার করিয়া থাকে। উহার পর কান্ত বাবুকে শেষ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় যে, যদি দুর্ভাগ্যক্রমে তোমাকে কারাবাস করিতে হয়, তাহা হইলে তোমার জাতিনাশ হওয়ার বিপদ ঘটিতে পারে কি না?
তাহাতে তিনি উত্তর দেন যে, শুধু কারাবাস করিলে জাতিনাশের ভয় নাই, তবে খুন ডাকাতি প্রভৃতি করিয়া কারাবাস করিলে জাতি যাইবার সম্ভাবনা আছে। কান্ত বাবুর এই সকল উক্তি হইতে বেশ বুঝা যায় যে, তিনি বাস্তবিকই নীচলোকদিগের বিচার করিতেন, কারণ শাস্ত্রজ্ঞান না থাকিলে কখন ব্রাহ্মণাদি জাতির বিচার করা সম্ভবপর হয় না। যাহা হউক, জাতিঘটিত বিচারালয়ের একটি প্রধান পদে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, তাঁহার গৌরবের যে একটি নিদর্শন, ইহা আবশ্য স্বীকার করিতে হইবে। হেষ্টিংসের যে কয়েকটি প্রিয়পাত্র ছিলেন, তন্মধ্যে কান্তবাবু শান্ত-প্রকৃতি ও অপেক্ষাকৃত ধর্মভীরু বলিয়া বোধ হয়।
যদিও অর্থের প্রলোভনে তাঁহার জীবনে পদে পদে তাঁহাকে সৎপথ হইতে বিচলিত হইতে দেখা যায়, তথাপি দেবী সিংহ ও গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের জায় তিনি অত্যাচারী বা পূর্ণমাত্রায় প্রবঞ্চক ছিলেন না। দেশের যাবতীয় লোকের সর্ব্বনাশ সংঘটন করিতে হইবে বলিয়া, তিনি কোম্পানীর দেওয়ানী লইতে স্বীকৃত হন নাই; তাঁহার অপারগতা তাহার প্রধান কারণ হইলেও উপরোক্ত কারণটি অন্যতম। পরে উক্ত দেওয়ানী সুবিখ্যাত গঙ্গাগোবিন্দের প্রতি অর্পিত হওয়ায়, তিনি বঙ্গদেশে আপনার নাম চিরস্মরণীয় করিয়া গিয়াছেন। অর্থলালসা প্রবল থাকায়, কান্তবাবুকে অনেকগুলি অসৎকম্ম করিতে হইয়াছিল; প্রবল অর্থলালসাবশে তিনি স্বীয় প্রভু হেষ্টিংসের মনস্তষ্টি-সম্পাদনার্থ প্রায়শঃ কর্তব্যাকর্তব্য বিবেচনা করিতেন না।
যদিও অর্থলালদার জন্য কান্তবাবু সাধুসমাজে নিন্দিত হইয়াছেন, তথাপি সে সময়ের কথা ভাবিতে গেলে, তাঁহাদিগের দোষের মাত্রা অতাধিক মনে না করাই যুক্তিসঙ্গত। যে সময়ে সাধারণ লোকসমাজে উৎকোচগ্রহণ, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা প্রভৃতি বিশেষ দোষ বলিয়া গণ্য হইত না; সে সময়ের লোকেরা ঐরূপ কোন অপরাধ করিলে তাঁহাদিগকে ক্ষমা করাই উচিত। তবে দোষ চিরকালই নিন্দনীয়। তৎসম্বন্ধে সময়াসময় বিবেচনা করা যাইতে পারে না; সত্যের অনুরোধে কান্ত বাবুর সম্বন্ধে আমাদিগকে দুই একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলিতে হইয়াছে। হেষ্টিংস কান্ত বাবুর কার্য্যে সন্তুষ্ট হইয়া, তাঁহাকে রাজোপাধি প্রদান করিতে প্রতিশ্রুত হন।