ফ্রানচেসকা রেগালাডো
মিয়ানমারের মান্দালয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কেন্দ্রস্থল বিশিষ্ট ৭.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককেও, যেটি কেন্দ্রস্থল থেকে ১,০০০ কিলোমিটার দূরে, এই ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে; ব্যাহত হয়েছে ব্যবসা ও গণপরিবহন ব্যবস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (USGS) তথ্যমতে, ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে (থাইল্যান্ডে ১টা ২০ মিনিটে) সংঘটিত হয় এবং এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের ১৭ কিলোমিটার উত্তরে। থাই আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ভূমিকম্প স্থলভাগে হওয়ায় সুনামির আশঙ্কা কম। প্রথম কম্পনের ১২ মিনিট পর ৬.৪ মাত্রার একটি পরাঘাত (আফটারশক) রেকর্ড করা হয়।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার জানিয়েছে, “কিছু মানুষ মারা গেছে এবং অনেকে আহত হয়েছে”, যাদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি। সাগাইং, মান্দালে ও রাজধানী নেইপিদো অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে রক্তদানের জন্য জরুরি আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সাগাইং, মান্দালে, মাগওয়ে, উত্তর-পূর্ব শান রাজ্য, নেইপিদো ও বাগো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের বরাতে তারা জানিয়েছে, “পরবর্তী ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত পরাঘাত অনুভূত হতে পারে, তাই জনগণকে নিরাপদ স্থানে অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে,সামরিক জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং নেইপিদোতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছেন।
মিয়ানমার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে গৃহযুদ্ধের কবলে রয়েছে।
মান্দালেতে বসবাসকারী এক নারী, যার নাম প্রকাশ করা হয়নি, বলেন,”অনেক ভবন ধসে পড়েছে,আমি সাগাইংয়ে থাকা আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।ফোন লাইনও বন্ধ।”
একজন পুরুষ জানান, শহরের রাজপ্রাসাদের আশেপাশে অনেক ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং মান্দালে ও সাগাইংকে সংযুক্তকারী ঔপনিবেশিক যুগের একটি সেতু নদীতে ধসে পড়েছে।
ইয়াঙ্গুনের এক বাসিন্দা বলেন, তিনি মান্দালেতে থাকা নিজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।”আমি খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। আমার বাবা-মা মান্দালেতে একটি পুরনো ভবনে থাকেন।”
ব্যাংককে, চাতুচাক জেলায় নির্মাণাধীন ৩০ তলা স্টেট অডিট অফিস ভবন ধসে পড়েছে, এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে এবং ৯০ জন আটকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় নির্মাণ শ্রমিকরা দৌড়ে পালাচ্ছেন।
এই ভবনটি ছিল জনপ্রিয় চাতুচাক বাজারের পাশে। হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত জানা যায়নি।থাইল্যান্ডের রাজধানীর অন্যান্য সুউচ্চ ভবন কেঁপে ওঠে, ফলে কর্মজীবী, বাসিন্দা ও পর্যটকেরা অফিস,হোটেল,কনডোমিনিয়াম ও দূতাবাস থেকে বেরিয়ে যান। ফুমথাম জানান, ব্যাংকক বিশেষভাবে ভূমিকম্পে সংবেদনশীল, কারণ শহরটি নরম মাটির ওপর নির্মিত।
ভূমিকম্পের পর মান্দালেতে ধসে পড়া একটি ভবনের ছবিও সামনে এসেছে।
থাই স্টক এক্সচেঞ্জ বিকেল ২টা থেকে সব ধরনের লেনদেন স্থগিত করে। ব্যাংককের বিএটিএস (BTS) স্কাইট্রেন ও পাতাল মেট্রোপলিটন র্যাপিড ট্রানজিট (MRT) সিস্টেমের সব স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন শিনাওয়াত্রা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফুকেট থেকে ঘোষণা দেন, ব্যাংকককে জরুরি অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সরকারি সংস্থাগুলোকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে নিয়মিত আপডেট দিতে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রযুক্তি ও অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ভূমিকম্পে তাদের কার্যক্রমে খুব বেশি বিঘ্ন ঘটেনি। ডেল্টা ইলেকট্রনিকস জানায়, তাদের উৎপাদন এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকলেও পরে তা পুনরায় চালু হয়েছে। কিনপো, কোয়ান্টা ও লাইট জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন লাইন প্রভাবিত হয়নি।
নিসান মোটর ব্যাংককের পূর্বাঞ্চলে তাদের প্ল্যান্ট থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিতে উৎপাদন বন্ধ করে। হোন্ডার আয়ুত্থায়ার প্ল্যান্ট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পরে পুনরায় চালু হয়। টয়োটার গেটওয়ে প্ল্যান্ট স্বাভাবিকভাবেই চালু ছিল। ব্যাংককের বিমানবন্দরগুলো অক্ষত রয়েছে।
থাই আবহাওয়া বিভাগের মহাপরিচালক জানান, ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মা হং সন প্রদেশ থেকে ৩২৬ কিলোমিটার দূরে। ফেসবুক লাইভে তিনি জনগণকে খোলা স্থানে অবস্থান করার এবং কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করার আহ্বান জানান।
ভূমিকম্পের কম্পন দক্ষিণ-পশ্চিম চীন ও ভিয়েতনামেও অনুভূত হয়েছে।