সারাক্ষণ রিপোর্ট
ভূমিকম্পে নির্মাণাধীন ৩০ তলা সরকারি ভবনের ধস
ব্যাংককের চাতুচাক জেলায় একটি নির্মাণাধীন ৩০ তলা সরকারি ভবন হঠাৎ ধসে পড়েছে। শুক্রবার বিকেলে এই ঘটনায় অন্তত ৮১ জন শ্রমিক ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই। এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
ধুলার মেঘে আচ্ছন্ন এলাকা, আতঙ্কিত মানুষ
ভবন ধসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ব্যাংককের রাস্তায় ধুলোর মেঘ ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত মানুষ দৌড়ে পালাতে শুরু করে। নির্মাণস্থলের আশপাশে থাকা অনেকে গাড়িতে উঠে পালান, কেউ কেউ পায়ে হেঁটে দৌড়ে যান।
হেলমেট ও উজ্জ্বল কমলা জ্যাকেট পরা শ্রমিকরা ধুলায় ঢেকে যান। অনেকেই সরে যেতে না পারায় ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে যান।
চাতুচাক মার্কেটের কাছেই ভবনটি ধসে পড়ে। উদ্ধারকর্মীরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছান, তখন বিশাল ধ্বংসস্তুপ ও লোহার কাঠামোর ভেতর আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে ব্যস্ত ছিলেন।
আহত ৬৮ জন, আশঙ্কাজনক ৫
থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ইমার্জেন্সি মেডিসিনের নারেনথর্ন সেন্টার জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ৬৮ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের রাজধানী ব্যাংককের সাতটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ করছিলেন
প্রতিবেদন অনুসারে, নির্মাণস্থলে প্রায় ৪০০ জন থাই ও বিদেশি শ্রমিক কাজ করছিলেন। দুর্ঘটনার পরপরই আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
২.১ বিলিয়ন বাথ ব্যয়ে ভবন নির্মাণ
কাম্পেং পেত রোডে নির্মিতব্য ভবনটি ছিল স্টেট অডিট অফিসের জন্য। ১১ রাই জমির উপর গড়ে ওঠা ভবনটির কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে এবং বর্তমানে ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। ভবনটির সর্বোচ্চ তলায় নির্মাণ চলছিল বলে জানান ডেপুটি অডিটর জেনারেল সুত্তিপং বুননিথি।
প্রকল্পের প্রধান ঠিকাদার ছিল আইটিডি-সিআরইসি (ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট এবং চায়না রেলওয়ে নং ১ থাইল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগ)। তদারকির দায়িত্বে ছিল পিএন সিনক্রোনাইজ, ডাব্লিউ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস গ্রুপ ও কেপি কনসালট্যান্টস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট।
‘মাটি দুর্বল, শহর ঝুঁকিপূর্ণ‘
উপপ্রধানমন্ত্রী ফুমথাম জানান, “গত ১০০ বছরে ব্যাংককে এমন ভূমিকম্প হয়নি। তাই ভবিষ্যতে হাসপাতাল, স্কুল ও মন্দিরসহ অন্যান্য ভবনে জরুরি জরিপ চালাতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যাংককের মাটি নরম ও দুর্বল, তাই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে অনেক ভবনে ফাটল দেখা গেছে।”
ভূমিকম্পে কাঁপলো পুরো শহর
৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো ব্যাংকক কেঁপে ওঠে। সাধারণত এমন ভূকম্পন শহরে অনুভূত হয় না, তাই মানুষ বিস্মিত হয়ে যায়।
একজন অফিস কর্মী জানান, “প্রথমে ভাবলাম মাথা ঘুরছে বা মূর্ছা যাচ্ছি। তারপর দেখি লণ্ঠনগুলো দুলছে।”
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি হোটেল ভবন কাঁপছে এবং ছাদের সুইমিং পুল থেকে পানি গড়িয়ে নিচে পড়ছে।
ব্রোকার আত্তাপং সুখিয়িমনই জানান, “আমি একটি মলে ছিলাম। দেখি সাইনবোর্ড নড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে যাই। মনে হচ্ছিল খোলা জায়গায় চলে যেতে হবে — এটা যেন স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।”
স্কুল ও মেলা থেকেও মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়
সিয়াম স্কয়ারের সিয়ামস্কেপ ভবনে কিছু শিক্ষার্থী ভূমিকম্পের সময় আটকা পড়ে। ভবনের ছাদ ও দেয়ালে ফাটল ধরে এবং কিছু স্থাপনা ভেঙে পড়ে। তবে পরে সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানানো হয়েছে।
ক্লং টোই জেলায় অবস্থিত কুইন সিরিকিত ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার (কিউএসএনসিসি) থেকেও শত শত মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তখন থাইল্যান্ডের জাতীয় বইমেলা চলছিল।
থাইল্যান্ডের পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, আপাতত বইমেলা বন্ধ রাখা হয়েছে।