সারাক্ষণ রিপোর্ট
চিপ কেনার হিড়িক কেন?
মার্কিন সরকার আরও কড়া রপ্তানি-নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে—এ ভয়ে চীনের বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো আগেই বিপুল পরিমাণে নিভিডিয়ার নতুন এইচ২০ গ্রাফিকস চিপ কিনে ফেলেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অর্ডারের মোট মূল্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে।
মজুতের আকার ও ব্যয়
- বাইটড্যান্স,আলিবাবা ও টেনসেন্ট প্রায় ১০ লাখটি এইচ২০ চিপ বুক করেছে, যা এক বছরের চাহিদা মেটাতে পারে।
• মোট অর্ডারের দাম প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার; নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগেই বেশিরভাগ চালান হাতে এসেছে।
• বাইটড্যান্স ছিল সবচেয়ে বেশি চিপ কেনা প্রতিষ্ঠান।
চাহিদা এত বেড়ে গেল কেন?
ডিপসিকের মতো বড় ভাষা-মডেল বাজারে আসার পর চীনে এআই কম্পিউটিংয়ের চাহিদা ঝড়ের গতিতে বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে টেনসেন্ট ‘উইচ্যাট’-এ ডিপসিক যোগ করায় চাহিদা আরও উচ্ছ্বাস পায়। তাই নিষেধাজ্ঞা আসার আগে সবাই দ্রুত চিপ সংগ্রহ করেছে।
চিপ জোগাড়ের বিকল্প পথ
- বিদেশি বাজার থেকে সরাসরি এইচ২০ আনার চেষ্টা
•বিদেশে সহায়ক কোম্পানি বা অংশীদার গড়ে তোলা
• টেলিকম ও অন্যান্য শিল্প-অংশীদারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ
ডেটা সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা অপরিবর্তিত
নতুন নিয়ম সত্ত্বেও আলিবাবা, বাইটড্যান্স ও টেনসেন্ট এ বছর আরও ডেটা সেন্টার বানানোর লক্ষ্য বদলায়নি। আলিবাবা ইতিমধ্যে ১৩ টি দেশে সাইট চালু করেছে; বাইটড্যান্সও ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উপস্থিতি বাড়াচ্ছে।
দেশীয় সমাধানের সন্ধান
চীনা অপারেটররা দ্রুত হুয়াওয়ের অ্যাসেন্ড-চিপভিত্তিক ‘ক্লাউডম্যাট্রিক্স ৩৮৪’ প্ল্যাটফর্ম পরীক্ষা করছে। এতে ৩৮৪ টি অ্যাসেন্ড চিপ থাকে, যা নিভিডিয়ার সর্বশেষ উচ্চ-ক্ষমতার সিস্টেমের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।
এইচ২০ আসলে কতটা শক্তিশালী?
এইচ২০ হল মূল এইচ১০০-এর অপেক্ষাকৃত দুর্বল সংস্করণ।
• প্রশিক্ষণে সক্ষমতা মাত্র ১০ শতাংশ,
• ইনফারেন্সে (আউটপুট বের করা) সক্ষমতা প্রায় ২০ শতাংশ।
তবু দাম কম আর ছোট-মাঝারি মডেল চালাতে যথেষ্ট হওয়ায় চীনে এটি জনপ্রিয়।
বিশেষজ্ঞদের সতর্ক-বার্তা
হংকং-ভিত্তিক এআই প্রকৌশলী ইউজিন লি বলছেন—
• এইচ২০ ইনফারেন্সের জন্য ভালো,
• কিন্তু বড়-মাপের মডেল শেখাতে আগের মজুত করা এইচ১০০ ও এইচ৮০০ দরকার,
• সেই মজুত শেষ হলে চীনের এআই উন্নয়ন ধাক্কা খেতে পারে।
নিভিডিয়ার চিন্তা
- রপ্তানি-কাঠিন্যে আগামী ত্রৈমাসিকে নিভিডিয়ার আয় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমতে পারে।
•সিইও জেনসেন হুয়াং জানিয়েছেন, তিনি বেইজিং সফরে গিয়ে ‘চীন বাজার ধরে রাখতে সবকিছু’ করবেন।
• ২০২৫ অর্থবছরে কোম্পানির ১৩.১ শতাংশ আয় চীন থেকে এলেও প্রকৃত চালানে অংশ মাত্র ২ শতাংশের নিচে।
শেষ কথা
চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টরা আগাম চিপ কিনে সাময়িক নিরাপদ হয়েছে। তবে মজুত ফুরিয়ে গেলে বা নিয়ম আরও কঠোর হলে, দেশীয় সমাধান ছাড়া টিকতে পারবে না—আর নিভিডিয়াকেও চীনের জন্য নতুন বিকল্প আনতে হবে।