১০:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মধ্যযুগীয় বইয়ের লোমশ মলাটে অপ্রত্যাশিত রহস্য

  • Sarakhon Report
  • ১২:৩৭:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • 42

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সংক্ষিপ্ত ভূমিকা

মধ্যযুগের কিছু অমূল্য পুঁথির মলাটে আজও ঝুলে আছে খসখসে লোম। দীর্ঘদিন ধরে ওই মলাট গরুছাগল বা হরিণের চামড়া ভেবে রাখা হয়েছিল। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেলবিষয়টা পুরোই অন্য রকম।

অস্বাভাবিক লোমশ মলাটের রহস্য

বেস্টিয়ারি-ধরনের পাণ্ডুলিপিতে সাধারণত পালিশ করা চামড়া ব্যবহূত হত। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের ক্লেয়ারভক্স অ্যাবে প্রস্তুত কিছু বইয়ে লোম এমন রুক্ষ যে তা গবাদি পশুর হওয়ার কথা নয়। কেমব্রিজ ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ম্যাথিউ কলিন্স বলছেনমলাট স্পর্শ করলেই বোঝা যায়এটা গাভীর চামড়া নয়।

ক্লেয়ারভক্স অ্যাবের বিশাল সংগ্রহ

১১১৫ সালে স্থাপিত সিস্টারশিয়ান এ মঠটি মধ্যযুগে অন্যতম বড় গ্রন্থাগার ছিল। প্রায় ১,৪৫০টি পাণ্ডুলিপির অর্ধেক এখনও মূল বাঁধাইয়ে রয়েছে। কাঠের পাতার সঙ্গে পার্চমেন্ট সেলাইয়ের পর উপরে বসানো হয় লোমশ চামড়াযা তখনকার ইউরোপে বিরল উপকরণ।

গবেষণার নমুনা ও পরীক্ষাপদ্ধতি

দলটি ১৬টি বই থেকে ইরেজারের গুঁড়ো দিয়ে ধুলো-সমান টুকরো তুলে নেন। পরে প্রোটিন বিশ্লেষণ ও প্রাচীন ডিএনএ পরীক্ষা চালিয়ে চামড়ার আসল উৎস শনাক্ত করা হয়।

সমুদ্রের অতিথি সিলের চামড়া

রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স-এ প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছেমলাটগুলো গরু-ছাগলের নয়বরং সিলের চামড়া। বেশির ভাগই হারবার সিলএকটি বইয়ে হর্প সিলের চিহ্নও মিলেছে। ডিএনএ তুলনা করে গবেষকেরা ধারণা করছেনওই সিলগুলো স্ক্যান্ডিনেভিয়াস্কটল্যান্ডআইসল্যান্ড বা গ্রীনল্যান্ডের উপকূল থেকে আনা হতে পারে।

কেন সিলের চামড়া লাগানো হল

মধ্যযুগে সিলের মাংস ও চর্বি ছিল খাদ্য-জ্বালানিআর জলরোধী চামড়া ছিল দামী সামগ্রী। কিছু অঞ্চলে সিলস্কিন করও হিসেবে আদায় হত। বই বাঁধাইয়ে সিলস্কিন স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও আয়ারল্যান্ডে দেখা গেলেও ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে তা ছিল দুর্লভক্লেয়ারভক্সের সংগ্রহ তারই ব্যতিক্রমী নজির।

মধ্যযুগীয় বাণিজ্য ও সংস্কৃতিতে নতুন দিগন্ত

এই আবিষ্কার জানায়তৎকালীন ইউরোপের বাণিজ্যপথ কতটা বিস্তৃত ছিল এবং উপকূলীয় শিকার-সম্পদ কীভাবে অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে পৌঁছাত। সিলস্কিন-মলাট শুধু কারিগরি নৈপুণ্যের চিহ্ন নয়এটি মধ্যযুগীয় করব্যবস্থা ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রসঙ্গেও নতুন আলো ফেলে। গবেষকেরা মনে করেনএমন অনুসন্ধান আমাদের ঐতিহাসিক বোঝাপড়া আরো সমৃদ্ধ করবে।

মধ্যযুগীয় বইয়ের লোমশ মলাটে অপ্রত্যাশিত রহস্য

১২:৩৭:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সংক্ষিপ্ত ভূমিকা

মধ্যযুগের কিছু অমূল্য পুঁথির মলাটে আজও ঝুলে আছে খসখসে লোম। দীর্ঘদিন ধরে ওই মলাট গরুছাগল বা হরিণের চামড়া ভেবে রাখা হয়েছিল। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেলবিষয়টা পুরোই অন্য রকম।

অস্বাভাবিক লোমশ মলাটের রহস্য

বেস্টিয়ারি-ধরনের পাণ্ডুলিপিতে সাধারণত পালিশ করা চামড়া ব্যবহূত হত। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের ক্লেয়ারভক্স অ্যাবে প্রস্তুত কিছু বইয়ে লোম এমন রুক্ষ যে তা গবাদি পশুর হওয়ার কথা নয়। কেমব্রিজ ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ম্যাথিউ কলিন্স বলছেনমলাট স্পর্শ করলেই বোঝা যায়এটা গাভীর চামড়া নয়।

ক্লেয়ারভক্স অ্যাবের বিশাল সংগ্রহ

১১১৫ সালে স্থাপিত সিস্টারশিয়ান এ মঠটি মধ্যযুগে অন্যতম বড় গ্রন্থাগার ছিল। প্রায় ১,৪৫০টি পাণ্ডুলিপির অর্ধেক এখনও মূল বাঁধাইয়ে রয়েছে। কাঠের পাতার সঙ্গে পার্চমেন্ট সেলাইয়ের পর উপরে বসানো হয় লোমশ চামড়াযা তখনকার ইউরোপে বিরল উপকরণ।

গবেষণার নমুনা ও পরীক্ষাপদ্ধতি

দলটি ১৬টি বই থেকে ইরেজারের গুঁড়ো দিয়ে ধুলো-সমান টুকরো তুলে নেন। পরে প্রোটিন বিশ্লেষণ ও প্রাচীন ডিএনএ পরীক্ষা চালিয়ে চামড়ার আসল উৎস শনাক্ত করা হয়।

সমুদ্রের অতিথি সিলের চামড়া

রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স-এ প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছেমলাটগুলো গরু-ছাগলের নয়বরং সিলের চামড়া। বেশির ভাগই হারবার সিলএকটি বইয়ে হর্প সিলের চিহ্নও মিলেছে। ডিএনএ তুলনা করে গবেষকেরা ধারণা করছেনওই সিলগুলো স্ক্যান্ডিনেভিয়াস্কটল্যান্ডআইসল্যান্ড বা গ্রীনল্যান্ডের উপকূল থেকে আনা হতে পারে।

কেন সিলের চামড়া লাগানো হল

মধ্যযুগে সিলের মাংস ও চর্বি ছিল খাদ্য-জ্বালানিআর জলরোধী চামড়া ছিল দামী সামগ্রী। কিছু অঞ্চলে সিলস্কিন করও হিসেবে আদায় হত। বই বাঁধাইয়ে সিলস্কিন স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও আয়ারল্যান্ডে দেখা গেলেও ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে তা ছিল দুর্লভক্লেয়ারভক্সের সংগ্রহ তারই ব্যতিক্রমী নজির।

মধ্যযুগীয় বাণিজ্য ও সংস্কৃতিতে নতুন দিগন্ত

এই আবিষ্কার জানায়তৎকালীন ইউরোপের বাণিজ্যপথ কতটা বিস্তৃত ছিল এবং উপকূলীয় শিকার-সম্পদ কীভাবে অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে পৌঁছাত। সিলস্কিন-মলাট শুধু কারিগরি নৈপুণ্যের চিহ্ন নয়এটি মধ্যযুগীয় করব্যবস্থা ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রসঙ্গেও নতুন আলো ফেলে। গবেষকেরা মনে করেনএমন অনুসন্ধান আমাদের ঐতিহাসিক বোঝাপড়া আরো সমৃদ্ধ করবে।