সারাক্ষণ রিপোর্ট
গত মাসে এনভিডিয়ার প্রধান জেনসেন হুয়াং বেইজিংয়ে নেমে জানিয়ে দেন—বিশ্বের শীর্ষ এআই চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি চীনা বাজার ‘অটলভাবে’ সেবা দেবে। কিন্তু আমেরিকা নতুন রপ্তানি-নিয়ন্ত্রণ জারি করে চীনে তাদের সর্বাধুনিক প্রসেসর H20 বিক্রি নিষিদ্ধ করে। আরও কড়া নিয়ম আসছে। ২০২২‑এর শুরু থেকে আমেরিকা উন্নত সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে চীনের ওপর লাগাম টানতে চায়।
আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ ও এনভিডিয়ার পাল্টা পদক্ষেপ
● ২০২২‑এ বড় সিদ্ধান্ত: নির্দিষ্ট গাণিতিক ক্ষমতা ও মেমোরি ব্যান্ডউইথ ছাড়িয়ে গেলে চিপ চীনে বিক্রি নিষিদ্ধ।
● এনভিডিয়া পাল্টা দিল H800—সীমার ঠিক নিচে থাকা ‘চীনা সংস্করণ’।
● পরের বছর মানদণ্ড আরও শক্ত; এবার শুধু প্রসেসিং ক্ষমতার ওপরেই নিষেধাজ্ঞা। এর ফল H20 মডেল।
ছায়াপথে গড়ে ওঠা জোগানচক্র
নিষেধ সত্ত্বেও এই সীমাবদ্ধ চিপগুলি চীনা ডেভেলপারদের হাতে পৌঁছায়। কেউ মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরের ডেটা সেন্টার ভাড়া করে, কেউ আবার গোপন দালালের হাত ঘুরে সরাসরি চিপ কেনে। এতে আমেরিকার কৌশল ভোঁতা হয়ে পড়ছে।
জহোর, মালয়েশিয়া: বিকল্প দরজা
● সস্তা জমি ও বিদ্যুতের কারণে জহোর এখন ডেটা সেন্টারের আঁতুড়ঘর।
● ২০২১‑এর শুরুতে মাত্র ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতা এখন ১,৫০০ মেগাওয়াটের পথে (২০২৪)।
● চীনা টেক জায়ান্ট বাইটডান্সসহ অনেকেই এখানে ক্লাউড ভাড়া নিয়ে নিষিদ্ধ চিপে হাত পাচ্ছে।
● ২০২৭‑এ অঞ্চলটির অর্ধেক ডেটা সেন্টারে থাকবে এনভিডিয়া‑জাত এআই চিপ (সেমি‑অ্যানালিসিসের হিসাব)।
সরাসরি চোরাচালান
চিপ নামিয়ে আনা হয় তৃতীয় দেশ ঘুরিয়ে। ভুয়া কাগজপত্র, ভুল লেবেলিং—সবই চলেছে। গবেষণা সংস্থা আইএআইপিএস অনুমান করে, ২০২৪‑এ চীনের এআই প্রশিক্ষণ ক্ষমতার ১০‑৫০ শতাংশই চোরাই আমেরিকান চিপের অবদান।
বিকল্প বাজারের উত্থান
চীনে বিক্রি কমে ২২ থেকে ১৩ শতাংশে নেমেছে, অথচ সিঙ্গাপুরে দ্বিগুণের বেশি—এখন মোট বিক্রির ১৮ শতাংশ, আমেরিকার পরই দ্বিতীয়। মার্চ ২০২৫‑এ তাইওয়ান থেকে মালয়েশিয়ায় জিপিইউ রফতানি আগের মাসের তুলনায় তিনগুণ হয়ে ২ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। চাহিদা বাড়ায় ধূসর বাজার সোনার খনি—H100‑এর মতো নিষিদ্ধ চিপ ৩০‑৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়।
রাশিয়া ও অন্যান্য গন্তব্য
ভারতের কয়েকটি কোম্পানি রাশিয়ায় চিপ পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে। এক মুম্বাই‑ভিত্তিক ফার্ম ২০২৪‑এ ডেল‑সার্ভার (এনভিডিয়া‑সহ) ৩২২ মিলিয়ন ডলার মূল্যে রফতানি করেছে।
এনভিডিয়ার চ্যালেঞ্জ
● বছরে ছয় মিলিয়নের বেশি এআই চিপ বিক্রি—শেষ ব্যবহারকারী নজরদারি প্রায় অসম্ভব।
● হার্ডওয়্যার‑স্তরে ‘ডিজেবল’ প্রযুক্তি এনভিডিয়া অনাবশ্যক ঝুঁকি বলছে; সফটওয়্যার টেলিমেট্রির প্রস্তাব করছে।
নতুন নিয়ন্ত্রণ, পুরোনো সমস্যা
বাইডেন প্রশাসনের জটিল তালিকা বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন সহজ নিয়ম আনতে চায়। তবে দুর্বল জনবল—দক্ষিণ‑পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলেশিয়ার পুরো অঞ্চলের জন্য মাত্র একজন আমেরিকান রপ্তানি‑নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা—ব্যবস্থাটিকে ভোঁতা করে রাখবে।
চিপের গতিপথ ঠেকাতে আইনি ও প্রযুক্তিগত বাধা যথেষ্ট নয়। এনভিডিয়া সব চিপের হদিস রাখতে পারবে না, বিএআইএস সব সার্ভার খুঁজে দেখতে পারবে না। ফাঁকফোকর থেকেই যাবে। তাই চীনের আগে থাকতে চাইলে আমেরিকার আসল পথ নতুন উদ্ভাবন—কড়া দড়াবাঁধা নয়। ।