০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

ওড়িশা: ‘বিয়েতে বোমা’ হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় শিক্ষক যাবজ্জীবন দণ্ডিত

ঘটনার পটভূমি

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের বলাঙ্গীর জেলার পাতনগড় শহরে এক বিবাহোত্তর বিস্ফোরণে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌম্য শেখর সাহু ও তার বড় পিসিমা নিহত হন। নতুন জামাই ও তার বাড়ির সবাই দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি চলাকালীন একটি প্যাকেজ পৌঁছায়, যা “বিয়ের উপহার” হিসেবে পৌঁছানো হয়েছিল। প্যাকেজটি খুলতেই মর্মান্তিক বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে ২৬ বছর বয়সী সৌম্য ও ৮৫ বছর বয়সি জেমামানি সাহু প্রাণ হারান, আর খোলা প্যাকেজ থেকে দগ্ধ হন সৌম্যের স্ত্রী রীমা, যাঁর কানে শব্দচাপের আঘাত ও মানসিক ট্রমাও হয়।

পরিকল্পনা ও বিস্তৃত তদন্ত

বিস্ফোরণের পর পুলিশ দীর্ঘ অনুসন্ধান চালায়। মৃতদেহের মা, যিনি স্থানীয় কলেজে অধ্যাপিকা, জানান যে মামলার প্রাথমিক তদন্তে প্যাকেজের রসিদে লেখা প্রেরকের নাম ‘এস কে শর্মা’ বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু পরে একটি গোপন চিঠি পুলিশ প্রধানকে পৌঁছে যায়, যেখানে নাম ছিল ‘এস কে সিনহা’ এবং দেখা দেয় পেছনে মিশানো ‘বিশ্বাসঘাত’ ও ‘অর্থ’ শব্দদ্বয়ের বর্ণনা।

অভিযোগ ছিল—পেশাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেশ কাটিয়ে উঠতে না পেরে শিক্ষক পঞ্জিলাল মেহেরই চশমায় প্রেরণ করেছিলেন এই বিস্ফোরক প্যাকেজটি। মেহের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, দীপাবলির সময় জমিয়ে রাখা আতশবাজি থেকে বিস্ফোরক উপাদান বের করে তিনি নিজেই বসিয়েছেন বোমা, ভিন্ন নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে রায়পুর থেকে কুরিয়ারে পাঠিয়েছিলেন।

চাবিকাঠি তথ্য ও গ্রেপ্তার

চিঠির হস্তলিপি ও কথার ধরন বিশ্লেষণ করে পুলিশ বুঝতে পারে, মেহেরই পাঠিয়েছিলেন কৌশলগত ভুল-সূত্র তুলে ধরার জন্য চিঠি। এছাড়া তদন্তে তল্লাশি চালিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরক চালিত প্যাকেজটি বাসে করে রায়পুর থেকে ওড়িশা পর্যন্ত ৬৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছিল। অবশেষে ২০২৫ সালে পঞ্জিলাল মেহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি তখন ৫৬ বছর বয়সী ও স্থানীয় এক কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ।

বিচার ও দণ্ড

স্থানীয় আদালত হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক ব্যবহার অভিযোগে মেহেরকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। যদিও আদালত ঘটনার চরিত্র ‘ভয়ঙ্কর ও নিঃসহায়’ বলে স্বীকার করেছিলেন, তবুও এটি ‘অত্যন্ত বিরল’ অপরাধ হিসাবে গণ্য না করে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভূমিকা

বিবিসি ওই সময় দুই পর্বে এই ‘বিয়ের বোমা’ মামলার গভীর অনুসন্ধান ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে এখানে আলোচ্য কেসটির রহস্য উন্মোচন করেছিল, যা পরবর্তীতে বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরিণাম ও প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় সমাজে এই হত্যাকাণ্ড শোকের লহর সৃষ্টি করলেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ফলে ক্ষত ঘরানো শুরু হয়েছে। নিহত সৌম্য ও জেমামানি সাহুর পরিবার এখনও সংশয় ও ট্রমার শিকার, আর তারা আইনপ্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে একটু স্বস্তি অনুভব করছেন।

ওড়িশা: ‘বিয়েতে বোমা’ হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় শিক্ষক যাবজ্জীবন দণ্ডিত

০৮:৩০:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

ঘটনার পটভূমি

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের বলাঙ্গীর জেলার পাতনগড় শহরে এক বিবাহোত্তর বিস্ফোরণে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌম্য শেখর সাহু ও তার বড় পিসিমা নিহত হন। নতুন জামাই ও তার বাড়ির সবাই দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি চলাকালীন একটি প্যাকেজ পৌঁছায়, যা “বিয়ের উপহার” হিসেবে পৌঁছানো হয়েছিল। প্যাকেজটি খুলতেই মর্মান্তিক বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে ২৬ বছর বয়সী সৌম্য ও ৮৫ বছর বয়সি জেমামানি সাহু প্রাণ হারান, আর খোলা প্যাকেজ থেকে দগ্ধ হন সৌম্যের স্ত্রী রীমা, যাঁর কানে শব্দচাপের আঘাত ও মানসিক ট্রমাও হয়।

পরিকল্পনা ও বিস্তৃত তদন্ত

বিস্ফোরণের পর পুলিশ দীর্ঘ অনুসন্ধান চালায়। মৃতদেহের মা, যিনি স্থানীয় কলেজে অধ্যাপিকা, জানান যে মামলার প্রাথমিক তদন্তে প্যাকেজের রসিদে লেখা প্রেরকের নাম ‘এস কে শর্মা’ বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু পরে একটি গোপন চিঠি পুলিশ প্রধানকে পৌঁছে যায়, যেখানে নাম ছিল ‘এস কে সিনহা’ এবং দেখা দেয় পেছনে মিশানো ‘বিশ্বাসঘাত’ ও ‘অর্থ’ শব্দদ্বয়ের বর্ণনা।

অভিযোগ ছিল—পেশাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেশ কাটিয়ে উঠতে না পেরে শিক্ষক পঞ্জিলাল মেহেরই চশমায় প্রেরণ করেছিলেন এই বিস্ফোরক প্যাকেজটি। মেহের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, দীপাবলির সময় জমিয়ে রাখা আতশবাজি থেকে বিস্ফোরক উপাদান বের করে তিনি নিজেই বসিয়েছেন বোমা, ভিন্ন নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে রায়পুর থেকে কুরিয়ারে পাঠিয়েছিলেন।

চাবিকাঠি তথ্য ও গ্রেপ্তার

চিঠির হস্তলিপি ও কথার ধরন বিশ্লেষণ করে পুলিশ বুঝতে পারে, মেহেরই পাঠিয়েছিলেন কৌশলগত ভুল-সূত্র তুলে ধরার জন্য চিঠি। এছাড়া তদন্তে তল্লাশি চালিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরক চালিত প্যাকেজটি বাসে করে রায়পুর থেকে ওড়িশা পর্যন্ত ৬৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছিল। অবশেষে ২০২৫ সালে পঞ্জিলাল মেহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি তখন ৫৬ বছর বয়সী ও স্থানীয় এক কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ।

বিচার ও দণ্ড

স্থানীয় আদালত হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক ব্যবহার অভিযোগে মেহেরকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। যদিও আদালত ঘটনার চরিত্র ‘ভয়ঙ্কর ও নিঃসহায়’ বলে স্বীকার করেছিলেন, তবুও এটি ‘অত্যন্ত বিরল’ অপরাধ হিসাবে গণ্য না করে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভূমিকা

বিবিসি ওই সময় দুই পর্বে এই ‘বিয়ের বোমা’ মামলার গভীর অনুসন্ধান ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে এখানে আলোচ্য কেসটির রহস্য উন্মোচন করেছিল, যা পরবর্তীতে বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরিণাম ও প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় সমাজে এই হত্যাকাণ্ড শোকের লহর সৃষ্টি করলেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ফলে ক্ষত ঘরানো শুরু হয়েছে। নিহত সৌম্য ও জেমামানি সাহুর পরিবার এখনও সংশয় ও ট্রমার শিকার, আর তারা আইনপ্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে একটু স্বস্তি অনুভব করছেন।