গত ৫৩ বছরে দেশের বাজেট ঘোষণা করেছেন ১৩ জন । এদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী,অর্থ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ছাড়াও আছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান । আর সবচেয়ে বেশি এক ডজন বাজেট ঘোষণার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এরপর সাইফুর রহমান এবং শাহ এ এম এস কিবরিয়া । দেশের বাজেট ইতিহাসে টাকার অংকে জাতীয় বাজেটকে এক লাখ কোটি টাকার অংকে নিয়ে যাবার সাহস দেখিয়েছিলেন এএমএ মুহিত। আর ভ্যাট চালু করে রাজস্ব আয়ের শক্তিশালী ভিত্তি তৈরীর জন্য স্মরণীয় থাকবেন সাইফুর রহমান।

২ জুন যে বাজেট ঘোষিত হচ্ছে অর্ন্তবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে,তা জাতির সামনে টেলিভিশন বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ । বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভণর সালেহ উদ্দিন অবশ্য বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের থেকে তার বাজেটের আকার বড় করার সাহস দেখাননি। তার আগে যে ১৩ জন বাজেট উপস্থাপন করেছেন তারা হলেন তাজউদ্দিন আহমেদ , ড. এ আর মল্লিক , জিয়াউর রহমান, মীর্জা নুরুল হুদা,সাইফুর রহমান, এএমএ মুহিত,এম সাইদুজ্জামান , এম এ মুনিম , ড.ওয়াহিদুল হক,অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, শাহ এ এম এস কিবরিয়া , আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং এ এস এম মাহমুদ আলী ।

দেশের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে যিনি নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তার দেয়া বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেটটি ঘোষণা করেছিলেন ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। এরপর আরো দুটি বাজেট দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালের ১৯ জুনের বাজেটটি অতিক্রম করেছিল এক হাজার কোটি টাকার ঘর । এরপর ১৯৭৫ সালের ২৩ জুন বাজেট ঘোষণা করেছিলেন ড. এ আর মল্লিক ।
এর পর তিনটি বাজেট পরপর ঘোষণা করেছিলেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমান। তিনি যথাক্রমে ১৯৭৬ সালের ২৬ জুন ( ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর ) , ১৯৭৭ সালের ২৫ জুন ( ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর) এবং ১৯৭৮ সালের ৩০ জুন ( ১৯৭৮-৭৯ ) বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। পরের ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন মির্জা নুরুল হুদা ১৯৭৯ সালের ২ জুন। এরপর চারটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সেই দুই আলোচিত ব্যাক্তিত্ব যাদের হাতে তৈরী হয়েছিল দেশের সবচেয়ে বেশি বাজেট । এরা দুজন হলেন এম সাইফুর রহমান এবং এএমএ মুহিত । সাইফুর রহমান ১৯৮০ সালের ৭ জুন এবং ১৯৮১ সালের ৬ জুন বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। আর পরের দুবছর বাজেট দিয়েছিলেন এএমএমুহিত। সাইফুর রহমান জাতীয় সংসদে বাজেট দিলেও এমএমুহিত দিয়েছিলেন সামরিক আইন প্রশাসকের পক্ষে । প্রথম জন ১৯৮০ সালের ৭ জুন ও ১৯৮১ সালের ৬ জুন আর অপরজন বাজেট ঘোষণা করেছিলেন ১৯৮২ সালের ৩০ জুন এবং ১৯৮৩ সালের একই দিনে বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরপর দেশের চারটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন দেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এম সাইদুজ্জামান। তিনি ১৯৮৪ সালের ২৭ জুন ( ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছর ) , ১৯৮৫ সালের ৩০ জুন ( ১৯৮৫-৮৬ ) , ১৯৮৬ সালের ৩০ জুন ( ১৯৮৬-৮৭ ) এবং ১৯৮৭ সালের ১৮ জুন ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন এইচ এম এরশাদ । এরপর এম এ মুনিম ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালের বাজেট ঘোষণা করলেও মাঝে ১৯৮৯ সালে বাজেট দিয়েছিলেন ড. ওয়াহিদুল হক ।
এর পর তিনটি বাজেট পরপর ঘোষণা করেছিলেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমান। তিনি যথাক্রমে ১৯৭৬ সালের ২৬ জুন ( ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর ) , ১৯৭৭ সালের ২৫ জুন ( ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর) এবং ১৯৭৮ সালের ৩০ জুন ( ১৯৭৮-৭৯ ) বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। পরের ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন মির্জা নুরুল হুদা ১৯৭৯ সালের ২ জুন। এরপর চারটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সেই দুই আলোচিত ব্যাক্তিত্ব যাদের হাতে তৈরী হয়েছিল দেশের সবচেয়ে বেশি বাজেট । এরা দুজন হলেন এম সাইফুর রহমান এবং এএমএ মুহিত । সাইফুর রহমান ১৯৮০ সালের ৭ জুন এবং ১৯৮১ সালের ৬ জুন বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। আর পরের দুবছর বাজেট দিয়েছিলেন এএমএমুহিত। সাইফুর রহমান জাতীয় সংসদে বাজেট দিলেও এমএমুহিত দিয়েছিলেন সামরিক আইন প্রশাসকের পক্ষে । প্রথম জন ১৯৮০ সালের ৭ জুন ও ১৯৮১ সালের ৬ জুন আর অপরজন বাজেট ঘোষণা করেছিলেন ১৯৮২ সালের ৩০ জুন এবং ১৯৮৩ সালের একই দিনে বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরপর দেশের চারটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন দেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এম সাইদুজ্জামান। তিনি ১৯৮৪ সালের ২৭ জুন ( ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছর ) , ১৯৮৫ সালের ৩০ জুন ( ১৯৮৫-৮৬ ) , ১৯৮৬ সালের ৩০ জুন ( ১৯৮৬-৮৭ ) এবং ১৯৮৭ সালের ১৮ জুন ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন এইচ এম এরশাদ । এরপর এম এ মুনিম ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালের বাজেট ঘোষণা করলেও মাঝে ১৯৮৯ সালে বাজেট দিয়েছিলেন ড. ওয়াহিদুল হক ।

১৯৯১ সাল থেকে আবারো পাচ বছর অর্থনীতির নেতৃত্ব দিয়েছেন সাইফুর রহমান। একজ কড়া অর্থমন্ত্রী হিসেবেই তার পরিচিতি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ এবং ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ১০ বার বাজেট দিয়েছেন সাইফুর রহমান। যিনি পেশাগত জীবনে একজন চাটার্ড একাউনটেন্ট কিন্তু দেশের মানুষের কাছে শ্রদ্ধা পাচ্ছেন সৎ রাজনীতিক হিসেবে। সাইফুর রহমানের সাফল্যের টুপিতেও আছে একডজন বাজেট ঘোষণার সাফল্যের পালক। এর মাঝে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সুনামের সাথে অর্থ মন্ত্রনালয় সামলানো এবং জনবান্ধব বাজেট ঘোষণা করার দায়িত্ব পালন করেছিলেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ফিরেছিল ১৯৯৬ সালে। ফলে পাচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার পর ২০০১ সালের ১৪ জুলাই দেশেমর ইতিহাসে শান্তিপুর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কৃতিত্ব দেখিয়েছিল আওয়ামী লীগ ।
বিএনপি ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দুটি বাজেট দিয়েছিল সেই সরকার। অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে এদুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি ২০০৭ সালের ৭ জুন ২০০৭-৮ এবং ২০০৮ সালের ৯জুন ২০০৮-৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। শেষবার তিনি ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
বিএনপি ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দুটি বাজেট দিয়েছিল সেই সরকার। অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে এদুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি ২০০৭ সালের ৭ জুন ২০০৭-৮ এবং ২০০৮ সালের ৯জুন ২০০৮-৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। শেষবার তিনি ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।

দেশের বাজেটের এরপরের ইতিহাস “ রাবিশখ্যাত ’’ আবুল মাল আব্দুল মুহিতের । একটানা বাজেট দিয়ে পুরো এক দশক। দশদশটি বাজেট দিয়ে যেমন সাহস দেখিয়েছেন বাজেটকে লাখ কোটি টাকার ঘরে নেবার,তেমনি কখনও ক্ষোভ আবার কখনও হাস্যরসে তিনি হয়েছেন আলোচিত অর্থমন্ত্রী । সাইফুর রহমান তিনদফায় ১২টি বাজেট দিলেও একটানা ১০ বছর অর্থমন্ত্রী থেকে নিজেকে এএমএমুহিত নিয়ে গেছের এক অনন্য উচ্চতায়। অথচ শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র । শিল্প-সংস্কৃতির সমঝদার এমন অর্থমন্ত্রী দেশ আর পাবে কি না সেও মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন বটে। তারপরের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দিয়েছিলেন চারটি বাজেট । এসময়ের অর্থনীতি নিয়েই এখন যত অভিযোগ আর বিতর্ক । চাটার্ড একান্ডন্ট পরীক্ষায় কৃতিত্বের কারনে “ লোটাস ’’ উপাধি পেলেও অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল হয়েছিলেন , এমন দাবি তিনি নিজেই করবেন কি না সন্দেহ আছে। আর দেশের সব শেষ অর্থমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী । ২০২৪ সালের জুনে বাজেট দেয়ার পর আগস্ট মাসেই গণঅভুত্থানে বিদায় নিতে হয়েছে তার সরকারকে। তিনি নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন অর্থনীতির অধ্যাপনা দিয়ে কিন্তু অর্থমন্ত্রী সফলতা-ব্যর্থতা বিবেচনার আগেই হয়ে গেছেন পলাতক। বাজেটের আগের ছয়মাসও ভালো কোনো উদাহরন সৃষ্টি করেছিলেন , বলার কোনো সুযোগ নেই। এখন সবাই তাকিয়ে আছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের দিকে । বাজেট বাস্তবায়নে যথেষ্ট সময় হাতে পাবেন কি না , সেও এক বড় প্রশ্ন !