০৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া উনসানে সমুদ্র সৈকতের রিসোর্ট উদ্বোধন: পর্যটনে বাজি ধরছে উত্তর কোরিয়া ওএমএস ও টিসিবি ডিলার নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান এসএসসি টেস্টের দুই দিনে শ্রীলঙ্কার রাজত্ব রাসেল ভাইপারের হুমকি: শহরেও ঢুকছে বিপজ্জনক সাপ! মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি: মহাকাশে পাঠানো হলো গাঁজা গাছের বীজ ২০২৫ সালের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ আইসল্যান্ড, শীর্ষ দশে সিঙ্গাপুর নৌকার বাংলাদেশ: জেলা-জেলা ঘিরে এক ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট বা পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কী? কীভাবে এটি করা হয়? নেতানিয়াহুর বিচার বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের

‘মনে হয়েছে এটা একাত্তরকে মুছে ফেলার চেষ্টার একটা স্টেপ’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার বিচার প্রক্রিয়াসহ নানা দিক নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক৷

ডয়চে ভেলে: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মনবতাবিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ, হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ ছাড়াও সুনির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে সেখানে। আপনি অভিযোগগুলো কিভাবে দেখছেন?

মাহবুব শফিক: আমাদের যে আইসিটি আইন, সেটি আসলে করা হয়েছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ- সেটাকে কেন্দ্র করে। এ্টা সেই সময়ে কনফাইন্ড ছিল। সংবিধানে একটা প্রটেকশন দেয়া ছিল যে, সেটা ওই সময়ের জন্য। পরবর্তীতেতে ওই আইন যখন বলবৎ করা হয়, ট্রাইব্যুনাল করা হয়, ট্রায়েল করা হয়, সেটা কিন্তু ওই ১৯৭১ সালকে ধরেই করা হয়েছে। এবং সেটাই কিন্তু ছিল। আমরা ভেবেছিলাম এই আইনটি ওই সময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধক্ষেত্রে যে অপরাধ, তার জন্য আইনটি। আমরা কিন্তু কখনো চিন্তা করিনি এর পরবর্তীতে কোনো ইস্যুকে ধরে আইসটিতে ট্রায়াল করা যায়।  সেটিকে আনার জন্য তারা আইনটি সংশোধন করেছে নির্দিষ্ট কিছু অপরাধকে চিন্তা করে এবং এই সময়ে জুলাইকে মাথায় রেখে তারা করেছে। এটি কতটুকু আইনসঙ্গত হয়েছে সেটি কিন্তু একটি সাংবিধানিক ইস্যু। সেটা কিন্তু ডিসাইড করার বিষয় আছে।

ট্রাইব্যুনালের যিনি চিফ প্রসিকিউটর, তিনি তো এক সময় এই ট্রাইব্যুনালেই আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন। এতে কি  নিয়মের কোনো লঙ্ঘন হয়েছে ? এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হয় কিনা…

আইনগতভাবে আমাদের এখানে ইস্যুটা হলো এরকম- আমি যেই পক্ষে কাজ করবো,তার অপরপক্ষে গিয়ে কাজ করতে পারবো না। আমার অ্যাপয়ন্টমেন্ট যদি বাদীর পক্ষে হয়, আমি বিবাদীর পক্ষে কাজ করাতে পারবো না। এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট এই কারণে, ওনারা যেহেতু সেই সময়ে ডিফেন্সের হয়ে কাজ করেছেন, এখন এসে প্রসিকিউশনের হয়ে কাজ করাটা আইনগতভাবে পশ্নবিদ্ধ। এই প্রশ্নগুলো কিন্তু উঠেছিল। আমাদের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকী সাহেব, তিনি মারা গেছেন, তিনি এই প্রশ্নগুলো তুলে একটা আবেদন করেছিলেন। তার শুনানি হয়েছিল। প্রশ্নগুলো স্পষ্টভাবে এসেছিল। কিন্তু কোর্ট সেটা আমলে নেয়নি। ওই আদেশ কোনো আইনগত ফোরাম না থাকায় চ্যালেঞ্জ করা যায়নি। তবে ভবিষ্যতে হয়তো এটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে আমি মনে করি।

তাদের বাইরেও তো প্রসিকিউটর নিয়োগের সুযোগ ছিল। তারপরও তাদেরকেই কেন নিয়োগ দেয়া হলো?

এখানে কোনো পলিটিক্যাল উইল বা ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এটা একাত্তরে যে ঘটনা ঘটেছে ,সেটির প্রতিশোধ হিসাবে চিন্তা করা হচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্নও এসেছে এখন। সেটি হয়তোবা হতে পারে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাহেব বলেছেন, ‘‘এই বিচার কোনো প্রতিশোধের জন্য নয়, এটা হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা এবং আগামী প্রজন্মকে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দেয়া।” এই বিচারের মধ্যে কি কোনো প্রতিশোধের বীজ আছে?

আমার মনে হয় এখানে ‘নয়’ শব্দটি সার্কাস্টিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।আসলে এখানে ইনার মিনিংটা হলো অন্য। আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে আমার মনে হয়েছে, এটা একাত্তরকে মুছে ফেলার একটা চেষ্টার একটা স্টেপ বা প্রথম স্টেপ হিসেবে ধরতে পারি।

চিফ প্রসিকিউটর আরো বলেছেন, ‘আমরা প্রমাণ করতে চাই একটি সভ্য সমাজ, যেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকবে, সেখানে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ্য করা হবে না। যে দেশে বিচার থাকবে, সেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না”-আইনের এই য মহান বাক্যগুলো তা  এই ট্রাব্যুনালের মধ্য দিয়ে আপনি প্রতিষ্ঠার কতটা সুযোগ দেখছেন?

আরেকটি বিষয় যা আমার আগেই বলা দরকার ছিল৷ এখানে একটু বলি। এই একই বিষয় নিয়ে কিন্তু পেনাল কোডেও মামলা চলছে। যাদের এখানে আসামি করা হয়েছে, তাদের কিন্তু পেনাল কোডেও মামলার আসামি করা হয়েছে। সেই মামলাগুলোও চলছে। সেখানেও তদন্ত হচ্ছে। রিপোর্ট দিচ্ছে। একই বিষয়ে দুইটি জায়গায় মামলা চলতে পারে কিন না? যদি সেটা চলে, আমাদের সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদে আছে ডাবল জিওপার্ডি। একই বিষয়ে একই লোককে বা একই ব্যক্তিকে দুইবার ট্রায়াল করা যাবে না। সেটির কোনো ব্যাত্যয় হচ্ছে কিনা সেটিও দেখার বিষয় আছে।

আবারো প্রশ্নটি করি, যে এই ট্রাবুন্যাল ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কতটা ভূমিকা রাখবে?

যদি প্রতিশোধমূলক চিন্তা থেকে হয় বা আইনের শাসনের পূর্ব শর্ত হলো আমাদের সংবিধানের যে বিধানগুলো আছে, সেগুলো সমুন্নত রাখা, সেগুলোকে সত্যিকার অর্থে প্রয়োগ করা। যদি একই ব্যক্তিকে নিয়ে দুইটি জায়গায় একই বিষয় নিয়ে মামলা চালাতে উৎসাহিত করা হয়, তাহলে তাকে আমি আইনের পরিপন্থী বলে মনে করি।

সমন্বয়করা কেউ কেউ মেটিকিউলাস প্ল্যানের কথা বলছেন। আবার বলছেন এই মেট্রোরেলে হামলা না হলে আন্দোলন সফল হতোনা। আবার ৫ আগেস্টের পরেও অনেক ঘটনা ঘটেছে।

খুবই ইন্টারেস্টিংলি শেখ হাসিনার মামলাটি ডাইরেক্টলি টিভিতে দেখানো হচ্ছে। সেখানে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল সাহেব ইন্টারেস্টিংলি ওখানে বার বার বলেছেন , মেট্রোরেলে আগুন দেয়া, পুলিশ হত্যা বা ধ্বসাত্মক যে কাজকর্ম সেটি শেখ হাসিনাই করেছেন-এরকম একটি উক্তি দিয়েছেন। যেখানে সমন্বয়করা কেউ কেউ বলেছেন এটা যদি করা না হতো তাহলে বিপ্লব সফল হতোনা। এটা একেবারেই কন্ট্রাডিকটরি। এই কন্ট্রাডিকশন নিয়ে তারা সামনে কীভাবে আগাবে, এটি আসলে সামনে বের হয়ে আসবে মেটিকিউলাস প্ল্যান বলতে তারা কী বোঝাচ্ছেন। এটা একাত্তরের প্রতিশোধ ছিল কিনা- এটা আসলে ভবিষ্যতই বলবে। ইতিহাস এটাকে প্রকাশ করবে।

টবি ক্যাডম্যান তো ওই সময়ে জামায়াতের পরামর্শক ছিলেন। এখন তো চিফ প্রসিকিউটরের পরামর্শক নিযুক্ত হয়েছেন। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

এটিও কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের আরেকটি উদাহরণ হলো। এটিও পার্ট অব আ মেটিকিউলাস প্ল্যান কিনা সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

জাসিংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কথা উঠেছিল। পরে এখানে সেটা নাকচ করে দেয়া হলো। সেটার কারণ কী হতে পারে?

ওইখানে বিচারের জন্য যদি যেতো, তাহলে নিরপেক্ষভাবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারতো। মেটিকিউলাস প্ল্যানের এভিডেন্সগুলো হয়তো আরো শক্তভাবে আসতো। সেই কারণে হয়তো ওনারা সেটা নাকচ করেছেন।

দ্রুত বিচারের দাবী আছে। কিন্তু নিয়মিত  আইনগত কোর্সের বাইরে গিয়ে দ্রæত বিচার করলে তাতে ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্ত হবে , না নিশ্চিত হবে?

আইনের কতগুলো বেসিক কথা আছে। জাস্টিস হারিড, জাস্টিস বারিড, জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড। কোনোটিই করা ঠিক নয়। সত্যিকার অর্থে আইনের প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করা হোক। বাদী, বিবাদী উভয়ই যৌক্তিক সময় পাক। এবং সত্যটি বেরিয়ে আসুক এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক। এবং সেটাই হওয়া উচিত।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একই সঙ্গে পাঁচটি অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে। তিনি হত্যার নির্দেশদাতা, গুলি ও হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশদাতা আবার সরসরি তিনটি হত্যাকাণ্ডেরও অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগগুলো আপনি কীভাবে দেখেন?

আইসিটি আইনটা খুবই স্পেশাল ল। একেকটি কাউন্ট হিসাবে ওনারা যদি এনে থাকেন, সেটা আইনের দৃষ্টিতে কতটা সঠিক হবে, সেটা তো যাচাই হবেই এখানে। এখানে ডিফেন্স লইয়াররা থাকবেন, বিচারকরা আছেন- তারা তো সেটা দেখবেন।

যারা আটক হয়েছেন তাদের আইনজীবীরা তো এখানে আছেন৷ শেখ হাসিনার সঙ্গে একই মামলার আসামি আছেন। তারা কি চাপমুক্তভাবে কাজ করতে পারছেন?

অনেক ক্ষেত্রে ডিফেন্স লইয়ারদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। পাওয়ার যদি কোর্টে দেখাতে পারে, তবেই অ্যালাও করা হচ্ছে।এইসব বিষয় কিন্তু আছে। এটা অনেকটা ওয়ান ইলেভেনের সময় যে ক্যাঙ্গারু কোর্ট ছিল, সেটাকে মনে করিয়ে দেয় আমাদের। যেখানে লইয়াদের ঢুকতে বাধা দেয়া হতো, প্রতিটি বই চেক করা হতো- এগুলো আছে।

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া সরসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে। কোনো বিচার প্রক্রিয়া সরাসরি সম্প্রচার বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এটা বিচারের স্বচ্ছতা কতটা নিশ্চিত করবে?

পৃথিবীর কোনো দেশেই কিন্তু কোনো জুডিশিয়াল প্রসিডিং এভাবে ওপেনলি দেখানো হয় না। যেমন, অ্যামেরিকায় স্কেচ দিয়ে বোঝানো হয়। তারা কী বলেছে সেটাও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু লাইভ টেলিকাস্ট পৃথিবীর কোনো দেশেই প্রাকটিস হিসাবে নেই। এতে  আসলে কোর্ট, পাবলিক প্রভাবিত করার সম্ভাবনা থেকে যায়। বা কিছুটা মিডিয়া ট্রায়ালেরও বিষয়টিও এখানে উঠে আসে। এটা সঠিক হলে সবার জন্যই করার দরকার ছিল। অন্যদের ক্ষেত্রে তারা করছেন না। শেখ হাসিনার  মামলাটির বেলায়ই তারা করছেন। এটিও ডিসক্রিমিনেশন। এটা  আইনগতভাবে জুডিশিয়ারিকে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা। বা পাবলিক ওপিনিয়ন নিয়ে সেটাকে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা। এটা না করাই শ্রেয়া।

ভিডাব্লিউ ডটকম

 

৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া

‘মনে হয়েছে এটা একাত্তরকে মুছে ফেলার চেষ্টার একটা স্টেপ’

০৯:০৩:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার বিচার প্রক্রিয়াসহ নানা দিক নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক৷

ডয়চে ভেলে: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মনবতাবিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ, হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ ছাড়াও সুনির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে সেখানে। আপনি অভিযোগগুলো কিভাবে দেখছেন?

মাহবুব শফিক: আমাদের যে আইসিটি আইন, সেটি আসলে করা হয়েছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ- সেটাকে কেন্দ্র করে। এ্টা সেই সময়ে কনফাইন্ড ছিল। সংবিধানে একটা প্রটেকশন দেয়া ছিল যে, সেটা ওই সময়ের জন্য। পরবর্তীতেতে ওই আইন যখন বলবৎ করা হয়, ট্রাইব্যুনাল করা হয়, ট্রায়েল করা হয়, সেটা কিন্তু ওই ১৯৭১ সালকে ধরেই করা হয়েছে। এবং সেটাই কিন্তু ছিল। আমরা ভেবেছিলাম এই আইনটি ওই সময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধক্ষেত্রে যে অপরাধ, তার জন্য আইনটি। আমরা কিন্তু কখনো চিন্তা করিনি এর পরবর্তীতে কোনো ইস্যুকে ধরে আইসটিতে ট্রায়াল করা যায়।  সেটিকে আনার জন্য তারা আইনটি সংশোধন করেছে নির্দিষ্ট কিছু অপরাধকে চিন্তা করে এবং এই সময়ে জুলাইকে মাথায় রেখে তারা করেছে। এটি কতটুকু আইনসঙ্গত হয়েছে সেটি কিন্তু একটি সাংবিধানিক ইস্যু। সেটা কিন্তু ডিসাইড করার বিষয় আছে।

ট্রাইব্যুনালের যিনি চিফ প্রসিকিউটর, তিনি তো এক সময় এই ট্রাইব্যুনালেই আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন। এতে কি  নিয়মের কোনো লঙ্ঘন হয়েছে ? এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হয় কিনা…

আইনগতভাবে আমাদের এখানে ইস্যুটা হলো এরকম- আমি যেই পক্ষে কাজ করবো,তার অপরপক্ষে গিয়ে কাজ করতে পারবো না। আমার অ্যাপয়ন্টমেন্ট যদি বাদীর পক্ষে হয়, আমি বিবাদীর পক্ষে কাজ করাতে পারবো না। এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট এই কারণে, ওনারা যেহেতু সেই সময়ে ডিফেন্সের হয়ে কাজ করেছেন, এখন এসে প্রসিকিউশনের হয়ে কাজ করাটা আইনগতভাবে পশ্নবিদ্ধ। এই প্রশ্নগুলো কিন্তু উঠেছিল। আমাদের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকী সাহেব, তিনি মারা গেছেন, তিনি এই প্রশ্নগুলো তুলে একটা আবেদন করেছিলেন। তার শুনানি হয়েছিল। প্রশ্নগুলো স্পষ্টভাবে এসেছিল। কিন্তু কোর্ট সেটা আমলে নেয়নি। ওই আদেশ কোনো আইনগত ফোরাম না থাকায় চ্যালেঞ্জ করা যায়নি। তবে ভবিষ্যতে হয়তো এটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে আমি মনে করি।

তাদের বাইরেও তো প্রসিকিউটর নিয়োগের সুযোগ ছিল। তারপরও তাদেরকেই কেন নিয়োগ দেয়া হলো?

এখানে কোনো পলিটিক্যাল উইল বা ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এটা একাত্তরে যে ঘটনা ঘটেছে ,সেটির প্রতিশোধ হিসাবে চিন্তা করা হচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্নও এসেছে এখন। সেটি হয়তোবা হতে পারে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাহেব বলেছেন, ‘‘এই বিচার কোনো প্রতিশোধের জন্য নয়, এটা হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা এবং আগামী প্রজন্মকে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দেয়া।” এই বিচারের মধ্যে কি কোনো প্রতিশোধের বীজ আছে?

আমার মনে হয় এখানে ‘নয়’ শব্দটি সার্কাস্টিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।আসলে এখানে ইনার মিনিংটা হলো অন্য। আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে আমার মনে হয়েছে, এটা একাত্তরকে মুছে ফেলার একটা চেষ্টার একটা স্টেপ বা প্রথম স্টেপ হিসেবে ধরতে পারি।

চিফ প্রসিকিউটর আরো বলেছেন, ‘আমরা প্রমাণ করতে চাই একটি সভ্য সমাজ, যেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকবে, সেখানে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ্য করা হবে না। যে দেশে বিচার থাকবে, সেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না”-আইনের এই য মহান বাক্যগুলো তা  এই ট্রাব্যুনালের মধ্য দিয়ে আপনি প্রতিষ্ঠার কতটা সুযোগ দেখছেন?

আরেকটি বিষয় যা আমার আগেই বলা দরকার ছিল৷ এখানে একটু বলি। এই একই বিষয় নিয়ে কিন্তু পেনাল কোডেও মামলা চলছে। যাদের এখানে আসামি করা হয়েছে, তাদের কিন্তু পেনাল কোডেও মামলার আসামি করা হয়েছে। সেই মামলাগুলোও চলছে। সেখানেও তদন্ত হচ্ছে। রিপোর্ট দিচ্ছে। একই বিষয়ে দুইটি জায়গায় মামলা চলতে পারে কিন না? যদি সেটা চলে, আমাদের সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদে আছে ডাবল জিওপার্ডি। একই বিষয়ে একই লোককে বা একই ব্যক্তিকে দুইবার ট্রায়াল করা যাবে না। সেটির কোনো ব্যাত্যয় হচ্ছে কিনা সেটিও দেখার বিষয় আছে।

আবারো প্রশ্নটি করি, যে এই ট্রাবুন্যাল ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কতটা ভূমিকা রাখবে?

যদি প্রতিশোধমূলক চিন্তা থেকে হয় বা আইনের শাসনের পূর্ব শর্ত হলো আমাদের সংবিধানের যে বিধানগুলো আছে, সেগুলো সমুন্নত রাখা, সেগুলোকে সত্যিকার অর্থে প্রয়োগ করা। যদি একই ব্যক্তিকে নিয়ে দুইটি জায়গায় একই বিষয় নিয়ে মামলা চালাতে উৎসাহিত করা হয়, তাহলে তাকে আমি আইনের পরিপন্থী বলে মনে করি।

সমন্বয়করা কেউ কেউ মেটিকিউলাস প্ল্যানের কথা বলছেন। আবার বলছেন এই মেট্রোরেলে হামলা না হলে আন্দোলন সফল হতোনা। আবার ৫ আগেস্টের পরেও অনেক ঘটনা ঘটেছে।

খুবই ইন্টারেস্টিংলি শেখ হাসিনার মামলাটি ডাইরেক্টলি টিভিতে দেখানো হচ্ছে। সেখানে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল সাহেব ইন্টারেস্টিংলি ওখানে বার বার বলেছেন , মেট্রোরেলে আগুন দেয়া, পুলিশ হত্যা বা ধ্বসাত্মক যে কাজকর্ম সেটি শেখ হাসিনাই করেছেন-এরকম একটি উক্তি দিয়েছেন। যেখানে সমন্বয়করা কেউ কেউ বলেছেন এটা যদি করা না হতো তাহলে বিপ্লব সফল হতোনা। এটা একেবারেই কন্ট্রাডিকটরি। এই কন্ট্রাডিকশন নিয়ে তারা সামনে কীভাবে আগাবে, এটি আসলে সামনে বের হয়ে আসবে মেটিকিউলাস প্ল্যান বলতে তারা কী বোঝাচ্ছেন। এটা একাত্তরের প্রতিশোধ ছিল কিনা- এটা আসলে ভবিষ্যতই বলবে। ইতিহাস এটাকে প্রকাশ করবে।

টবি ক্যাডম্যান তো ওই সময়ে জামায়াতের পরামর্শক ছিলেন। এখন তো চিফ প্রসিকিউটরের পরামর্শক নিযুক্ত হয়েছেন। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

এটিও কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের আরেকটি উদাহরণ হলো। এটিও পার্ট অব আ মেটিকিউলাস প্ল্যান কিনা সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

জাসিংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কথা উঠেছিল। পরে এখানে সেটা নাকচ করে দেয়া হলো। সেটার কারণ কী হতে পারে?

ওইখানে বিচারের জন্য যদি যেতো, তাহলে নিরপেক্ষভাবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারতো। মেটিকিউলাস প্ল্যানের এভিডেন্সগুলো হয়তো আরো শক্তভাবে আসতো। সেই কারণে হয়তো ওনারা সেটা নাকচ করেছেন।

দ্রুত বিচারের দাবী আছে। কিন্তু নিয়মিত  আইনগত কোর্সের বাইরে গিয়ে দ্রæত বিচার করলে তাতে ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্ত হবে , না নিশ্চিত হবে?

আইনের কতগুলো বেসিক কথা আছে। জাস্টিস হারিড, জাস্টিস বারিড, জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড। কোনোটিই করা ঠিক নয়। সত্যিকার অর্থে আইনের প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করা হোক। বাদী, বিবাদী উভয়ই যৌক্তিক সময় পাক। এবং সত্যটি বেরিয়ে আসুক এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক। এবং সেটাই হওয়া উচিত।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একই সঙ্গে পাঁচটি অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে। তিনি হত্যার নির্দেশদাতা, গুলি ও হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশদাতা আবার সরসরি তিনটি হত্যাকাণ্ডেরও অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগগুলো আপনি কীভাবে দেখেন?

আইসিটি আইনটা খুবই স্পেশাল ল। একেকটি কাউন্ট হিসাবে ওনারা যদি এনে থাকেন, সেটা আইনের দৃষ্টিতে কতটা সঠিক হবে, সেটা তো যাচাই হবেই এখানে। এখানে ডিফেন্স লইয়াররা থাকবেন, বিচারকরা আছেন- তারা তো সেটা দেখবেন।

যারা আটক হয়েছেন তাদের আইনজীবীরা তো এখানে আছেন৷ শেখ হাসিনার সঙ্গে একই মামলার আসামি আছেন। তারা কি চাপমুক্তভাবে কাজ করতে পারছেন?

অনেক ক্ষেত্রে ডিফেন্স লইয়ারদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। পাওয়ার যদি কোর্টে দেখাতে পারে, তবেই অ্যালাও করা হচ্ছে।এইসব বিষয় কিন্তু আছে। এটা অনেকটা ওয়ান ইলেভেনের সময় যে ক্যাঙ্গারু কোর্ট ছিল, সেটাকে মনে করিয়ে দেয় আমাদের। যেখানে লইয়াদের ঢুকতে বাধা দেয়া হতো, প্রতিটি বই চেক করা হতো- এগুলো আছে।

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া সরসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে। কোনো বিচার প্রক্রিয়া সরাসরি সম্প্রচার বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এটা বিচারের স্বচ্ছতা কতটা নিশ্চিত করবে?

পৃথিবীর কোনো দেশেই কিন্তু কোনো জুডিশিয়াল প্রসিডিং এভাবে ওপেনলি দেখানো হয় না। যেমন, অ্যামেরিকায় স্কেচ দিয়ে বোঝানো হয়। তারা কী বলেছে সেটাও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু লাইভ টেলিকাস্ট পৃথিবীর কোনো দেশেই প্রাকটিস হিসাবে নেই। এতে  আসলে কোর্ট, পাবলিক প্রভাবিত করার সম্ভাবনা থেকে যায়। বা কিছুটা মিডিয়া ট্রায়ালেরও বিষয়টিও এখানে উঠে আসে। এটা সঠিক হলে সবার জন্যই করার দরকার ছিল। অন্যদের ক্ষেত্রে তারা করছেন না। শেখ হাসিনার  মামলাটির বেলায়ই তারা করছেন। এটিও ডিসক্রিমিনেশন। এটা  আইনগতভাবে জুডিশিয়ারিকে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা। বা পাবলিক ওপিনিয়ন নিয়ে সেটাকে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা। এটা না করাই শ্রেয়া।

ভিডাব্লিউ ডটকম