০২:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
হলিউডের ‘হাইল্যান্ডার’ রিবুটে যোগ দিলেন কোরিয়ান তারকা জিওন জং-সিও অক্ষরের রহস্য: কেন ‘Q’-এর প্রয়োজন ‘U’ — ভাষার আত্মার এক বিস্ময়কর ইতিহাস নাসার চন্দ্র মিশনের গতি ফেরাতে ‘সবকিছু করবে’ ব্লু অরিজিন” ট্রাম্প বনাম সুপ্রিম কোর্ট: শুল্ক সংকটে নতুন আইনি লড়াই সম্ভাব্য বাজার ধসের পূর্বাভাস: ওয়াল স্ট্রিটও জানে না কখন আসবে পতন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫২) শেয়ারবাজারে ধস অব্যাহত: ডিএসই-তে লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে সিটি ব্যাংক ও ইউনিসেফের চুক্তি: প্রান্তিক যুবকদের সবুজ দক্ষতায় সক্ষম করে তুলতে উদ্যোগ বিবিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমাপ্রার্থনা: ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্পাদনায় ‘বিচারের ভুল’ স্বীকার দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ, আহত বহু

আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কি নতুন সুযোগের দ্বার?

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ভিসা–অনিশ্চয়তা ও ব্যয়বৃদ্ধির মাঝেও ইউরোপে উচ্চশিক্ষার নতুন ঠিকানা হিসেবে আয়ারল্যান্ড দ্রুতই নজর কেড়ে নিচ্ছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশটিতে মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০,৪০০–এ পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। ভারতীয় শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই আয়ারল্যান্ডকে “নতুন গেটওয়ে” বানিয়ে ফেলেছে; তবে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও কি একই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে?

নীতিগত স্থিতিশীলতা ও স্থায়ী বাসস্থান পথে অগ্রাধিকার
কানাডা-যুক্তরাজ্য যেখানে কোটা ও কঠোর অভিবাসন নীতি প্রয়োগ করছে, আয়ারল্যান্ড সেখানে স্বচ্ছ নিয়ম বজায় রেখেছে: স্নাতকোত্তর শেষে দুই বছরের ‘স্টে-ব্যাক ভিসা’ ও স্পনসর্ড চাকরিতে টানা পাঁচ বছর পূর্ণ হলে স্থায়ী নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও শিক্ষার্থী-ভর্তি বাড়াতে ঢালাও আলোচনা চলছে।

কম ব্যয়ে মানসম্মত ডিগ্রি
বার্ষিক টিউশন ও আবাসনসহ গড় খরচ ৩০-৪০ হাজার ইউরো, যা যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ সাশ্রয়ী। প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানমুখী ডিগ্রি নিয়েই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি; এসব খাতে আয়ারল্যান্ডের শিল্প-বিশ্ববিদ্যালয় অংশীদারিত্বও দৃঢ়।

ভিসা সাফল্যের হারের স্বস্তি
আইরিশ শিক্ষার্থী ভিসার প্রত্যাখ্যান হারমাত্র ১-৪ শতাংশ—অর্থাৎ সাফল্য প্রায় ৯৬ শতাংশ। শিক্ষা উপদেষ্টাদের মতে, এটি বাংলাদেশের পর্যটন/শিক্ষা ভিসা সাফল্যের গড় হারকেও ছাড়িয়ে গেছে, ফলে ঝুঁকি তুলনামূলক কম।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বর্তমান ধারা
সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ না হলেও শিক্ষা-কাউন্সিলর ও আইডিপি-এর তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে আয়ারল্যান্ডগামী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে; ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আবেদনকারীর সংখ্যা হাজারের ঘর ছুঁয়েছে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইউনেস্কো তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে ৫২,৭৯৯ জন বাংলাদেশি বিদেশে পড়েছেন, যেখান থেকে ইউরোপের অংশ দ্রুত বাড়ছে।

কাজের সুযোগ ও বিনিয়োগের রিটার্ন
অধ্যয়ন-কালের মধ্যে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা ও ছুটিতে ৪০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি আছে; ঘণ্টাপ্রতি ১০-১৫ ইউরো আয়ে বছরে ১০-১৫ হাজার ইউরোর খরচের বড় অংশ মিটে যায়। এ ছাড়া গুগল, মেটা, মাইক্রোসফট, বস্টন সায়েন্টিফিকের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ইউরোপীয় সদর দপ্তর ডাবলিনে হওয়ায় ইন্টার্নশিপ থেকে স্থায়ী চাকরির সেতু মজবুত।

 

চ্যালেঞ্জ কোথায়?

  • ভিসা আবেদনে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ (১১,০০০ ইউরোর সাম্প্রতিক সীমা) বাড়ানো হয়েছে, যা নিম্ন-মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • আবাসন সংকট: ডাবলিনে শিক্ষার্থী আবাসনের গড় ভাড়া প্রতি মাসে ৮০০-১,০০০ ইউরো, যা সামগ্রিক ব্যয় বাড়ায়।
  • ইংরেজি দক্ষতার পরীক্ষায় (TOEFL ইত্যাদি) কাঙ্ক্ষিত স্কোর না পেলে ভিসা ঝুঁকি বাড়ে।

পরামর্শ ও সম্ভাবনার মূল্যায়ন
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা পছন্দে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ‘সেফ বেট’ হিসেবে আয়ারল্যান্ড জায়গা করে নিচ্ছে। কম ভিসা প্রত্যাখ্যান, স্থিতিশীল অভিবাসন নীতি ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী ব্যয়ের কারণে বিশেষজ্ঞরা আয়ারল্যান্ডকে “নতুন গেটওয়ে” বলছেন। তবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যথাযথ কোর্স নির্বাচন ও ভিসা নথি প্রস্তুতিতে পেশাদার পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বর্তমান নীতিপরিবেশ, ভিসা-সাফল্য ও চাকরির বাজার বিচার করলে আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবসম্মত এবং সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠছে। তাই উপযুক্ত প্রস্তুতি ও সঠিক তথ্য নিয়ে এগোতে পারলে ইউরোপে উচ্চশিক্ষার নতুন দরজা হিসেবে আয়ারল্যান্ড সত্যিই কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

হলিউডের ‘হাইল্যান্ডার’ রিবুটে যোগ দিলেন কোরিয়ান তারকা জিওন জং-সিও

আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কি নতুন সুযোগের দ্বার?

০৪:৫০:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ভিসা–অনিশ্চয়তা ও ব্যয়বৃদ্ধির মাঝেও ইউরোপে উচ্চশিক্ষার নতুন ঠিকানা হিসেবে আয়ারল্যান্ড দ্রুতই নজর কেড়ে নিচ্ছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশটিতে মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০,৪০০–এ পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। ভারতীয় শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই আয়ারল্যান্ডকে “নতুন গেটওয়ে” বানিয়ে ফেলেছে; তবে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও কি একই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে?

নীতিগত স্থিতিশীলতা ও স্থায়ী বাসস্থান পথে অগ্রাধিকার
কানাডা-যুক্তরাজ্য যেখানে কোটা ও কঠোর অভিবাসন নীতি প্রয়োগ করছে, আয়ারল্যান্ড সেখানে স্বচ্ছ নিয়ম বজায় রেখেছে: স্নাতকোত্তর শেষে দুই বছরের ‘স্টে-ব্যাক ভিসা’ ও স্পনসর্ড চাকরিতে টানা পাঁচ বছর পূর্ণ হলে স্থায়ী নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও শিক্ষার্থী-ভর্তি বাড়াতে ঢালাও আলোচনা চলছে।

কম ব্যয়ে মানসম্মত ডিগ্রি
বার্ষিক টিউশন ও আবাসনসহ গড় খরচ ৩০-৪০ হাজার ইউরো, যা যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ সাশ্রয়ী। প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানমুখী ডিগ্রি নিয়েই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি; এসব খাতে আয়ারল্যান্ডের শিল্প-বিশ্ববিদ্যালয় অংশীদারিত্বও দৃঢ়।

ভিসা সাফল্যের হারের স্বস্তি
আইরিশ শিক্ষার্থী ভিসার প্রত্যাখ্যান হারমাত্র ১-৪ শতাংশ—অর্থাৎ সাফল্য প্রায় ৯৬ শতাংশ। শিক্ষা উপদেষ্টাদের মতে, এটি বাংলাদেশের পর্যটন/শিক্ষা ভিসা সাফল্যের গড় হারকেও ছাড়িয়ে গেছে, ফলে ঝুঁকি তুলনামূলক কম।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বর্তমান ধারা
সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ না হলেও শিক্ষা-কাউন্সিলর ও আইডিপি-এর তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে আয়ারল্যান্ডগামী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে; ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আবেদনকারীর সংখ্যা হাজারের ঘর ছুঁয়েছে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইউনেস্কো তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে ৫২,৭৯৯ জন বাংলাদেশি বিদেশে পড়েছেন, যেখান থেকে ইউরোপের অংশ দ্রুত বাড়ছে।

কাজের সুযোগ ও বিনিয়োগের রিটার্ন
অধ্যয়ন-কালের মধ্যে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা ও ছুটিতে ৪০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি আছে; ঘণ্টাপ্রতি ১০-১৫ ইউরো আয়ে বছরে ১০-১৫ হাজার ইউরোর খরচের বড় অংশ মিটে যায়। এ ছাড়া গুগল, মেটা, মাইক্রোসফট, বস্টন সায়েন্টিফিকের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ইউরোপীয় সদর দপ্তর ডাবলিনে হওয়ায় ইন্টার্নশিপ থেকে স্থায়ী চাকরির সেতু মজবুত।

 

চ্যালেঞ্জ কোথায়?

  • ভিসা আবেদনে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ (১১,০০০ ইউরোর সাম্প্রতিক সীমা) বাড়ানো হয়েছে, যা নিম্ন-মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • আবাসন সংকট: ডাবলিনে শিক্ষার্থী আবাসনের গড় ভাড়া প্রতি মাসে ৮০০-১,০০০ ইউরো, যা সামগ্রিক ব্যয় বাড়ায়।
  • ইংরেজি দক্ষতার পরীক্ষায় (TOEFL ইত্যাদি) কাঙ্ক্ষিত স্কোর না পেলে ভিসা ঝুঁকি বাড়ে।

পরামর্শ ও সম্ভাবনার মূল্যায়ন
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা পছন্দে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ‘সেফ বেট’ হিসেবে আয়ারল্যান্ড জায়গা করে নিচ্ছে। কম ভিসা প্রত্যাখ্যান, স্থিতিশীল অভিবাসন নীতি ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী ব্যয়ের কারণে বিশেষজ্ঞরা আয়ারল্যান্ডকে “নতুন গেটওয়ে” বলছেন। তবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যথাযথ কোর্স নির্বাচন ও ভিসা নথি প্রস্তুতিতে পেশাদার পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বর্তমান নীতিপরিবেশ, ভিসা-সাফল্য ও চাকরির বাজার বিচার করলে আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবসম্মত এবং সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠছে। তাই উপযুক্ত প্রস্তুতি ও সঠিক তথ্য নিয়ে এগোতে পারলে ইউরোপে উচ্চশিক্ষার নতুন দরজা হিসেবে আয়ারল্যান্ড সত্যিই কার্যকর বিকল্প হতে পারে।