যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ভিসা–অনিশ্চয়তা ও ব্যয়বৃদ্ধির মাঝেও ইউরোপে উচ্চশিক্ষার নতুন ঠিকানা হিসেবে আয়ারল্যান্ড দ্রুতই নজর কেড়ে নিচ্ছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশটিতে মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০,৪০০–এ পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। ভারতীয় শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই আয়ারল্যান্ডকে “নতুন গেটওয়ে” বানিয়ে ফেলেছে; তবে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও কি একই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে?
নীতিগত স্থিতিশীলতা ও স্থায়ী বাসস্থান পথে অগ্রাধিকার
কানাডা-যুক্তরাজ্য যেখানে কোটা ও কঠোর অভিবাসন নীতি প্রয়োগ করছে, আয়ারল্যান্ড সেখানে স্বচ্ছ নিয়ম বজায় রেখেছে: স্নাতকোত্তর শেষে দুই বছরের ‘স্টে-ব্যাক ভিসা’ ও স্পনসর্ড চাকরিতে টানা পাঁচ বছর পূর্ণ হলে স্থায়ী নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও শিক্ষার্থী-ভর্তি বাড়াতে ঢালাও আলোচনা চলছে।
কম ব্যয়ে মানসম্মত ডিগ্রি
বার্ষিক টিউশন ও আবাসনসহ গড় খরচ ৩০-৪০ হাজার ইউরো, যা যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ সাশ্রয়ী। প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানমুখী ডিগ্রি নিয়েই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি; এসব খাতে আয়ারল্যান্ডের শিল্প-বিশ্ববিদ্যালয় অংশীদারিত্বও দৃঢ়।
ভিসা সাফল্যের হারের স্বস্তি
আইরিশ শিক্ষার্থী ভিসার প্রত্যাখ্যান হারমাত্র ১-৪ শতাংশ—অর্থাৎ সাফল্য প্রায় ৯৬ শতাংশ। শিক্ষা উপদেষ্টাদের মতে, এটি বাংলাদেশের পর্যটন/শিক্ষা ভিসা সাফল্যের গড় হারকেও ছাড়িয়ে গেছে, ফলে ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বর্তমান ধারা
সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ না হলেও শিক্ষা-কাউন্সিলর ও আইডিপি-এর তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে আয়ারল্যান্ডগামী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে; ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আবেদনকারীর সংখ্যা হাজারের ঘর ছুঁয়েছে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইউনেস্কো তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে ৫২,৭৯৯ জন বাংলাদেশি বিদেশে পড়েছেন, যেখান থেকে ইউরোপের অংশ দ্রুত বাড়ছে।
কাজের সুযোগ ও বিনিয়োগের রিটার্ন
অধ্যয়ন-কালের মধ্যে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা ও ছুটিতে ৪০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি আছে; ঘণ্টাপ্রতি ১০-১৫ ইউরো আয়ে বছরে ১০-১৫ হাজার ইউরোর খরচের বড় অংশ মিটে যায়। এ ছাড়া গুগল, মেটা, মাইক্রোসফট, বস্টন সায়েন্টিফিকের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ইউরোপীয় সদর দপ্তর ডাবলিনে হওয়ায় ইন্টার্নশিপ থেকে স্থায়ী চাকরির সেতু মজবুত।
চ্যালেঞ্জ কোথায়?
- ভিসা আবেদনে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ (১১,০০০ ইউরোর সাম্প্রতিক সীমা) বাড়ানো হয়েছে, যা নিম্ন-মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
- আবাসন সংকট: ডাবলিনে শিক্ষার্থী আবাসনের গড় ভাড়া প্রতি মাসে ৮০০-১,০০০ ইউরো, যা সামগ্রিক ব্যয় বাড়ায়।
- ইংরেজি দক্ষতার পরীক্ষায় (TOEFL ইত্যাদি) কাঙ্ক্ষিত স্কোর না পেলে ভিসা ঝুঁকি বাড়ে।
পরামর্শ ও সম্ভাবনার মূল্যায়ন
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা পছন্দে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ‘সেফ বেট’ হিসেবে আয়ারল্যান্ড জায়গা করে নিচ্ছে। কম ভিসা প্রত্যাখ্যান, স্থিতিশীল অভিবাসন নীতি ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী ব্যয়ের কারণে বিশেষজ্ঞরা আয়ারল্যান্ডকে “নতুন গেটওয়ে” বলছেন। তবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যথাযথ কোর্স নির্বাচন ও ভিসা নথি প্রস্তুতিতে পেশাদার পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
বর্তমান নীতিপরিবেশ, ভিসা-সাফল্য ও চাকরির বাজার বিচার করলে আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবসম্মত এবং সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠছে। তাই উপযুক্ত প্রস্তুতি ও সঠিক তথ্য নিয়ে এগোতে পারলে ইউরোপে উচ্চশিক্ষার নতুন দরজা হিসেবে আয়ারল্যান্ড সত্যিই কার্যকর বিকল্প হতে পারে।