নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুর্যাল ধ্বংসে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত আলোচিত শিল্পকর্ম ‘অঞ্জলি লহ মম’ সম্প্রতি ধ্বংস করার ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের বরেণ্য কবি, লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক, অধ্যাপক, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল নাগরিকরা।
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মণীন্দ্র গাঙ্গুলীর তত্ত্বাবধানে এবং নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদের শিল্পভাবনার ভিত্তিতে এই মুর্যালটি নির্মিত হয়েছিল। এটি সাধারণ একজন নারীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক মানবিক শিল্পকর্ম, যা আমাদের ললিত কলার ধারায় নারী ও সৃষ্টির সম্মিলিত প্রকাশ ছিল। এই প্রতীকী শিল্পকে ধ্বংস করা শুধু একটির ওপর আঘাত নয়, এটি আমাদের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক, মানবিক ও চিন্তাচেতনার ওপর চরম আঘাত।
সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ধ্বংসের ধারাবাহিকতা
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র এই একটি মুর্যাল নয়—মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, ভাষা আন্দোলনের চিহ্ন, বিভিন্ন বিদ্রোহ-সংগ্রামের শিল্পকর্ম, মাজার, মন্দির, ভাস্কর্য ও অন্যান্য প্রত্নসম্পদ ধ্বংসের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ধ্বংসপ্রবণতা রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় উগ্রতার ফল হিসেবেও বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়।
জাতির লজ্জা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি
এই ধরনের ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সহনশীলতা ও উদারতা বিশ্বদরবারে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এসব ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। উন্নয়নশীল, মানবিক ও মুক্তচিন্তার সমাজ গঠনে এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বড় অন্তরায় বলে বিবৃতি প্রদানকারীরা মনে করেন।
একযোগে প্রতিবাদ
সারাদেশের ১২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক একযোগে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, শিল্প ও সংস্কৃতি বিনষ্ট হলে মানবিকতা ধ্বংস হয়, আর সেখানেই সমাজ হারায় তার মূল চরিত্র।
স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনদের পরিচয়
এই যৌথ বিবৃতিতে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান, কবি ও অধ্যাপক খালেদ হোসেন, লেখক ও সাংবাদিক সালাহউদ্দিন বাদল, কবি অজয় দাশগুপ্ত, শিল্পী রবীন্দ্র মিত্র, চলচ্চিত্র গবেষক বিধান বড়ুয়া, কবি হাসান আলী আব্দুল্লাহ, বিশিষ্ট সুরকার ও গীতিকার ড. তাজুল ইমাম, কবি রুবেল সালাহউদ্দিন, কবি সুব্রত বিশ্বাস, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির ঢালী, চিত্রশিল্পী স্বকৃত মণিমান, লেখক-প্রকাশক মেহেদী হাসান তানিম, গবেষক মো. মাহাদি ওমর, সাংবাদিক মারিয়া সালাম, গীতিকার সাইফুল্লাহ রুমী, সাংবাদিক হাফিজ ইমন, গবেষক শহীদুজ্জামান বেয়ারজ সহ আরও অনেকে।
তাঁরা সকলেই এই ঘটনার প্রতিকারে যথাযথ তদন্ত, দোষীদের শাস্তি এবং ভবিষ্যতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।