মাউন্ট ফুজির মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে ফুজি কিউকো
সময়ের অমোঘ সাক্ষী হয়ে জাপানের ওপর নীরব পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে পবিত্র মাউন্ট ফুজি। এ পর্বতের নিখুঁত ছায়াচিত্র বিশ্ববাসীর মনে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। প্রায় এক শতাব্দী ধরে ফুজি কিউকো কোম্পানি এই পর্বতের মুগ্ধতা বিশ্ববাসীর মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে আসছে। কোম্পানির প্রেসিডেন্ট কোইচিরো হোরিওচি মাউন্ট ফুজিকে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘‘এই অভিজ্ঞতাকে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। মাউন্ট ফুজির সামনে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির বিশালতা ও মহিমা প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করা যায়।’’
মাউন্ট ফুজির পাদদেশে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি
যেখানে মাউন্ট ফুজি দর্শনার্থীদের কাছে মূল আকর্ষণ, সেখানে তার পাদদেশের ফুজি ফাইভ লেকসও সমান জনপ্রিয়। ফুজি কিউকোর প্রতিষ্ঠাতার নাম অনুসারে এই পাঁচটি হ্রদের নাম— ইয়ামানাকা, কাওয়াগুচি, সাইকো, শোজি এবং মোটোসু। এই অঞ্চলটি পর্যটনের এক প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। হোরিওচি বলেন, ‘‘মাউন্ট ফুজির আবেদন চিরকালীন। দিনের বিভিন্ন সময়ে এর ভিন্ন ভিন্ন রূপ পর্যটকদের প্রতিবার নতুন অভিজ্ঞতা দেয়।’’
পরিবহন থেকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন অভিজ্ঞতা
১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠার সময় ফুজি কিউকো প্রথমে রেল অবকাঠামো গড়ে তোলে যাতে স্থানীয় উন্নয়ন সম্ভব হয়। পরবর্তীতে বাস ও মহাসড়ক নির্মাণ করে তা আরও বিস্তৃত করা হয়। হোরিওচি জানান, কোম্পানির দুটি প্রধান লক্ষ্য— স্থানীয় মানুষের জন্য দৈনন্দিন পরিবহন নিশ্চিত করা এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য সহজে যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করা। বর্তমানে তাদের সেবার মধ্যে রয়েছে বাস, ট্রেন, ট্যাক্সি এমনকি নৌযানও। এ ছাড়া, তারা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, কেনাকাটার কেন্দ্র পরিচালনা করে পুরো অঞ্চলের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
হোরিওচি বলেন, ‘‘সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমরা ক্রমাগত নতুন মূল্য সৃষ্টি করছি যাতে এই এলাকা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আমি চাই যাত্রাটাও যেন গন্তব্যের মতোই উপভোগ্য হয়।’’
সাম্প্রতিক সময়ে তারা বিলাসবহুল পরিবহন পরিষেবা চালুর পরিকল্পনাও করছে।
মাউন্ট ফুজিকে ঘিরে এক অলঙ্কারের মালা
ফুজি কিউকো শুধু মাউন্ট ফুজির সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর না করে পুরো অভিজ্ঞতাকে অনন্য করে তুলতে চায়। হোরিওচি বলেন, ‘‘এটি প্রতিষ্ঠাতা দর্শনের প্রতিফলন—বিশ্বের সঙ্গে মাউন্ট ফুজির জাদু ভাগাভাগি করে মানুষকে আজীবন মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা দেওয়া।’’
ফুজি কিউ হাইল্যান্ডের রোলার কোস্টারের প্রথম ঢালু থেকে শুরু করে গলফ কোর্সে দিন কাটানো পর্যন্ত, সর্বত্র মাউন্ট ফুজির সৌন্দর্য অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। ট্রেনের জানালাগুলো এমনভাবে তৈরি যাতে যাত্রার প্রতিটি মুহূর্ত দর্শনীয় হয়। কোম্পানির হোটেল মাউন্ট ফুজি, হাইল্যান্ড রিসোর্ট ও গ্ল্যাম্পিং সুবিধাগুলো অতিথিদের সম্পূর্ণভাবে এই অঞ্চলের সৌন্দর্যে ডুবিয়ে রাখে। পরিবহন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা পুরো অভিজ্ঞতাকে এক সুসংহত অলঙ্কারের মতো গেঁথে তুলেছে।
পরিবেশ রক্ষায় দায়বদ্ধতা
ফুজি কিউকোর ৯৯ বছরের ইতিহাসে পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবহারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ফুজি-কিউ হাইল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কটি এক সময় লাভা ফিল্ড বা আগ্নেয়গিরির শুষ্ক ভূমিতে স্থাপিত হয়, পরে সেখানে মাটি এনে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করা হয়।
হোরিওচি বলেন, ‘‘মাউন্ট ফুজির প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’’ এ কারণে তারা ইলেকট্রিক বাস চালু করেছে, বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
মাউন্ট ফুজি যেমন জাপানের ওপর শান্ত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনিভাবে ফুজি কিউকোও এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। তাদের সেবার আন্তঃসংযোগ পর্যটকদের জন্য এমন এক অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
হোরিওচি বলেন, ‘‘এই মিশন শুরু থেকেই আমাদের পথনির্দেশক, এবং আগামী ১০০ বছরেও তাই থাকবে।’’