০২:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

আপনি সাপকে ঘৃণা করতে পারেন – আমি করি না: অ্যারিজোনার র‌্যাটলস্নেক উদ্ধারকারীরা

অ্যারিজোনার মরুভূমির উপকণ্ঠে, রিও ভার্দে ফুটহিলস অঞ্চলে বসবাস করেন ক্রিসটা রেইনাক। তার বারান্দায় তিন ফুট দীর্ঘ একটি সাপ দেখা যাওয়ার পর তিনি ফোন করেন একটি হটলাইনে। ওপার থেকে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় সাপটির লেজে কালো-সাদা দাগ রয়েছে কি না। জানার পর বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন এটি বিষধর ‘ওয়েস্টার্ন ডায়মন্ডব্যাক র‌্যাটলস্নেক’।

রেইনাক আতঙ্কিত হননি। তার দুটি কুকুর ঘরের ভেতর নিরাপদে ছিল। তবে ঘোড়াগুলোর জন্য তিনি চিন্তিত ছিলেন—ঘোড়ারা যদি সাপের দিকে মুখ বাড়ায় এবং কামড় খায়, তবে নাক ফুলে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্টে মৃত্যুও হতে পারে।

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে শুধু স্থানচ্যুত হয়েছে বলে কিছু মেরে ফেলা উচিত।”

মানব-সাপ সংঘাত বাড়ছে

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়; এর মধ্যে প্রায় ৫ জন মারা যায়। পোষা প্রাণীদের জন্য মৃত্যুহার আরও বেশি। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, কামড়ের ঘটনার অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রে র‌্যাটলস্নেক জড়িত ছিল। এমনকি যারা বেঁচে যান, তাদেরও ১০ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন—আঙুল হারানোর মতো ঘটনাও ঘটে।

সম্পত্তি নির্মাণ যতই মরুভূমির গভীরে ঢুকছে, ততই মানুষের সঙ্গে সাপের সংঘাত বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও সাপরা ঠান্ডা জায়গা খুঁজে মানুষের বাগানে চলে আসে। কিন্তু সাপ পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—তাদের হত্যা না করে স্থানান্তর করাই যৌক্তিক এবং টেকসই সমাধান।

র‌্যাটলস্নেক সল্যুশনস: সাপ বাঁচানোর মিশন

অ্যারিজোনার ‘র‌্যাটলস্নেক সল্যুশনস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব সাপ উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। তারা মূলত আবাসিক এলাকায় পাওয়া সাপ ধরতে যায়, যেখানে সাপ এবং মানুষ বা পোষা প্রাণীর মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা থাকে।

ক্রিসটা রেইনাক যখন র‌্যাটলস্নেক দেখতে পান, তখন এই সংস্থাকে ফোন করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন উদ্ধারকারী এসে সাপটিকে সাবধানে একটি বড় বাক্সে পুরে মরুভূমিতে নিয়ে যান, যেখানে পর্যাপ্ত ডেরা ও শিকার থাকায় সাপটি নিরাপদে থাকতে পারবে। সে রাতের আকাশে ছিল কেবল তারার আলো—ছিল না কোনো বারান্দার লাইট।

সাপ হত্যার পরিবর্তে সহাবস্থান

র‌্যাটলস্নেকসহ অন্যান্য সাপ ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, একেকটি সাপ বছরে হাজার হাজার ইঁদুর খেয়ে ফেলে। এমনকি সাপ বীজ বিস্তারে এবং লাইম রোগ হ্রাসে ভূমিকা রাখে—এই রোগটি ইঁদুর ও ছোট স্তন্যপায়ীর মাধ্যমে টিক নামের পরজীবীর মাধ্যমে ছড়ায়।

কিন্তু অনেক প্রজাতির র‌্যাটলস্নেক বিপন্ন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৪০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৭১% র‌্যাটলস্নেকের বাসযোগ্য অঞ্চল সংকুচিত হয়ে যাবে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।

একজন র‌্যাটলস্নেকপ্রেমীর গল্প

২০০৮ সালের আর্থিক মন্দায় চাকরি হারানোর পর ব্রায়ান হিউজ সাপের প্রতি ভালোবাসাকে পেশায় রূপান্তর করেন। আগে থেকেই তিনি সাপ উদ্ধার ও স্থানান্তরের স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন। তিনি ‘র‌্যাটলস্নেক সল্যুশনস’ শুরু করেন এবং এরপর থেকে বছরে প্রায় ১,৫০০ সাপ স্থানান্তর করেছেন—মোট প্রায় ২০ হাজার।

একটি সাপ স্থানান্তরের খরচ প্রায় ১৫০ ডলার। তিনি ও তার সহকর্মীরা প্রতিটি ঘটনার পর বাড়ির মালিককে সাপ সম্পর্কে সচেতন করেন এবং কিভাবে সাপ প্রতিরোধ করা যায় সে পরামর্শ দেন। তারা এমনকি বিশেষ ধাঁচের বেড়াও স্থাপন করেন যাতে ভবিষ্যতে সাপ প্রবেশ না করতে পারে।

জলবায়ু ও আবাস গঠনের ভুলের পরিণতি

অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে প্রায়ই পাথরের স্তূপ বা আর্দ্র ঝোপঝাড় তৈরি হয়, যা সাপের আশ্রয়স্থল হিসেবে উপযোগী। ২০২৩ সালে অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরে ৫৫ দিন ধরে তাপমাত্রা ছিল ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে, যা রেকর্ড। এ সময় সাপরা ঠান্ডা জায়গা খুঁজে মানুষের বাগানে চলে আসে, এবং সংঘাতের হার বাড়ে।

বিজ্ঞান ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে সহাবস্থানের আহ্বান

ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাল পলির সাপবিশেষজ্ঞ এমিলি টেলর বলেন, “র‌্যাটলস্নেক এবং মানুষ একত্রে সহাবস্থান করতে পারে।” তিনিও সাপ উদ্ধার করেন, তবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। তিনি মনে করেন, মরুভূমিতে ব্যাপক আবাসন নির্মাণ মানুষের ও সাপের মধ্যে সংঘাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ক্রিসটা রেইনাক বলেন, “আমরা মরুভূমিতে থাকি, সাপ এ ব্যবস্থারই অংশ।”

টিভি বা সিনেমায় র‌্যাটলস্নেককে প্রায়ই হিংস্র রূপে দেখানো হয়, তবে ব্রায়ান হিউজ জানেন, তারা শুধুই বুনো প্রাণী—বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে এক কঠিন পরিবেশে, যেখানে মানুষ তাদের ঠিকমতো বোঝে না।

তিনি বলেন, “আপনি মনে করেন সাপকে ঘৃণা করতে হবে, মেরে ফেলতে হবে – আমি তা করি না। আমি তাদের বাঁচাতে চাই।”

(এই প্রতিবেদনটি বিবিসি ফিউচার আর্থে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে অনূদিত)

আপনি সাপকে ঘৃণা করতে পারেন – আমি করি না: অ্যারিজোনার র‌্যাটলস্নেক উদ্ধারকারীরা

০৯:৩৬:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

অ্যারিজোনার মরুভূমির উপকণ্ঠে, রিও ভার্দে ফুটহিলস অঞ্চলে বসবাস করেন ক্রিসটা রেইনাক। তার বারান্দায় তিন ফুট দীর্ঘ একটি সাপ দেখা যাওয়ার পর তিনি ফোন করেন একটি হটলাইনে। ওপার থেকে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় সাপটির লেজে কালো-সাদা দাগ রয়েছে কি না। জানার পর বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন এটি বিষধর ‘ওয়েস্টার্ন ডায়মন্ডব্যাক র‌্যাটলস্নেক’।

রেইনাক আতঙ্কিত হননি। তার দুটি কুকুর ঘরের ভেতর নিরাপদে ছিল। তবে ঘোড়াগুলোর জন্য তিনি চিন্তিত ছিলেন—ঘোড়ারা যদি সাপের দিকে মুখ বাড়ায় এবং কামড় খায়, তবে নাক ফুলে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্টে মৃত্যুও হতে পারে।

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে শুধু স্থানচ্যুত হয়েছে বলে কিছু মেরে ফেলা উচিত।”

মানব-সাপ সংঘাত বাড়ছে

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়; এর মধ্যে প্রায় ৫ জন মারা যায়। পোষা প্রাণীদের জন্য মৃত্যুহার আরও বেশি। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, কামড়ের ঘটনার অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রে র‌্যাটলস্নেক জড়িত ছিল। এমনকি যারা বেঁচে যান, তাদেরও ১০ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন—আঙুল হারানোর মতো ঘটনাও ঘটে।

সম্পত্তি নির্মাণ যতই মরুভূমির গভীরে ঢুকছে, ততই মানুষের সঙ্গে সাপের সংঘাত বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও সাপরা ঠান্ডা জায়গা খুঁজে মানুষের বাগানে চলে আসে। কিন্তু সাপ পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—তাদের হত্যা না করে স্থানান্তর করাই যৌক্তিক এবং টেকসই সমাধান।

র‌্যাটলস্নেক সল্যুশনস: সাপ বাঁচানোর মিশন

অ্যারিজোনার ‘র‌্যাটলস্নেক সল্যুশনস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব সাপ উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। তারা মূলত আবাসিক এলাকায় পাওয়া সাপ ধরতে যায়, যেখানে সাপ এবং মানুষ বা পোষা প্রাণীর মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা থাকে।

ক্রিসটা রেইনাক যখন র‌্যাটলস্নেক দেখতে পান, তখন এই সংস্থাকে ফোন করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন উদ্ধারকারী এসে সাপটিকে সাবধানে একটি বড় বাক্সে পুরে মরুভূমিতে নিয়ে যান, যেখানে পর্যাপ্ত ডেরা ও শিকার থাকায় সাপটি নিরাপদে থাকতে পারবে। সে রাতের আকাশে ছিল কেবল তারার আলো—ছিল না কোনো বারান্দার লাইট।

সাপ হত্যার পরিবর্তে সহাবস্থান

র‌্যাটলস্নেকসহ অন্যান্য সাপ ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, একেকটি সাপ বছরে হাজার হাজার ইঁদুর খেয়ে ফেলে। এমনকি সাপ বীজ বিস্তারে এবং লাইম রোগ হ্রাসে ভূমিকা রাখে—এই রোগটি ইঁদুর ও ছোট স্তন্যপায়ীর মাধ্যমে টিক নামের পরজীবীর মাধ্যমে ছড়ায়।

কিন্তু অনেক প্রজাতির র‌্যাটলস্নেক বিপন্ন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৪০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৭১% র‌্যাটলস্নেকের বাসযোগ্য অঞ্চল সংকুচিত হয়ে যাবে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।

একজন র‌্যাটলস্নেকপ্রেমীর গল্প

২০০৮ সালের আর্থিক মন্দায় চাকরি হারানোর পর ব্রায়ান হিউজ সাপের প্রতি ভালোবাসাকে পেশায় রূপান্তর করেন। আগে থেকেই তিনি সাপ উদ্ধার ও স্থানান্তরের স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন। তিনি ‘র‌্যাটলস্নেক সল্যুশনস’ শুরু করেন এবং এরপর থেকে বছরে প্রায় ১,৫০০ সাপ স্থানান্তর করেছেন—মোট প্রায় ২০ হাজার।

একটি সাপ স্থানান্তরের খরচ প্রায় ১৫০ ডলার। তিনি ও তার সহকর্মীরা প্রতিটি ঘটনার পর বাড়ির মালিককে সাপ সম্পর্কে সচেতন করেন এবং কিভাবে সাপ প্রতিরোধ করা যায় সে পরামর্শ দেন। তারা এমনকি বিশেষ ধাঁচের বেড়াও স্থাপন করেন যাতে ভবিষ্যতে সাপ প্রবেশ না করতে পারে।

জলবায়ু ও আবাস গঠনের ভুলের পরিণতি

অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে প্রায়ই পাথরের স্তূপ বা আর্দ্র ঝোপঝাড় তৈরি হয়, যা সাপের আশ্রয়স্থল হিসেবে উপযোগী। ২০২৩ সালে অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরে ৫৫ দিন ধরে তাপমাত্রা ছিল ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে, যা রেকর্ড। এ সময় সাপরা ঠান্ডা জায়গা খুঁজে মানুষের বাগানে চলে আসে, এবং সংঘাতের হার বাড়ে।

বিজ্ঞান ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে সহাবস্থানের আহ্বান

ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাল পলির সাপবিশেষজ্ঞ এমিলি টেলর বলেন, “র‌্যাটলস্নেক এবং মানুষ একত্রে সহাবস্থান করতে পারে।” তিনিও সাপ উদ্ধার করেন, তবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। তিনি মনে করেন, মরুভূমিতে ব্যাপক আবাসন নির্মাণ মানুষের ও সাপের মধ্যে সংঘাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ক্রিসটা রেইনাক বলেন, “আমরা মরুভূমিতে থাকি, সাপ এ ব্যবস্থারই অংশ।”

টিভি বা সিনেমায় র‌্যাটলস্নেককে প্রায়ই হিংস্র রূপে দেখানো হয়, তবে ব্রায়ান হিউজ জানেন, তারা শুধুই বুনো প্রাণী—বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে এক কঠিন পরিবেশে, যেখানে মানুষ তাদের ঠিকমতো বোঝে না।

তিনি বলেন, “আপনি মনে করেন সাপকে ঘৃণা করতে হবে, মেরে ফেলতে হবে – আমি তা করি না। আমি তাদের বাঁচাতে চাই।”

(এই প্রতিবেদনটি বিবিসি ফিউচার আর্থে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে অনূদিত)