গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের তিনটি মুখ্য পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানে। প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তেহরানের কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাস থমকে গেছে। তবে হোয়াইট হাউস ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ মূল্যায়নকে ‘সম্পূর্ণ ভ্রান্ত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন: সামান্য পিছিয়ে দেওয়া

• ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা স্বল্প সময়ের জন্যই থমকে গেছে।
• প্রতিবেদনটি এখনো প্রতিরক্ষা দপ্তরের শীর্ষমহলে পৌঁছায়নি; তবে কংগ্রেসের কয়েকটি কমিটি কপি পেয়েছে।
• কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন তথ্য এলে মূল্যায়ন বদলাতে পারে।

হোয়াইট হাউসের কঠোর প্রত্যাখ্যান

• প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট এক্সে লিখেছেন, ‘এই তথাকথিত মূল্যায়ন পুরোপুরি ভুল।’
• তাঁর অভিযোগ, ‘নিম্নস্তরের একজন বেনামী কর্মকর্তা’ তথ্য ফাঁস করে প্রশাসনকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চেয়েছেন।
• জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের দপ্তর ও ডিআইএ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।

ট্রাম্প ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পাল্টা দাবি

• ট্রাম্পের ভাষ্য, ‘টার্গেটগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।’
• প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ যোগ করেন, ‘বোমা হামলায় ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সামর্থ্য চূর্ণ হয়েছে—সমালোচকেরা কেবল সাফল্য খাটো করতে চাইছেন।’

কংগ্রেসে প্রশ্ন ও ব্রিফিং বিলম্ব

• ইরানবিষয়ক নির্ধারিত গোপন ব্রিফিং হঠাৎ স্থগিত হওয়ায় ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা প্রশ্ন তুলেছেন: গোপন তথ্য ও প্রকাশ্য বক্তব্যে কি পার্থক্য রয়েছে?

হামলার ধরন ও ক্ষয়ক্ষতি

• বি–২ স্টেলথ বোমারু বিমানের ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের ১৪টি জিবিইউ-৫৭ ‘বান্কার-বাস্টার’ ফোর্দোর ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রে নিক্ষিপ্ত হয়; সাবমেরিন থেকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় ইসফাহানে।
• নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের টানেলের প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভেতরের কাঠামো ভেঙে পড়েনি; ইরান এখনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
• ধারণা করা হচ্ছে, হামলার আগেই তেহরান কিছু সমৃদ্ধ উপাদান সরিয়ে ফেলেছিল এবং আরেকটি গোপন কেন্দ্রও থাকতে পারে।

আইএইএ-র পর্যবেক্ষণ

• আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানান, ফোর্দোতে ‘গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি’ হলেও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন বাকি।
• নাতাঞ্জের জ্বালানি সমৃদ্ধি প্ল্যান্ট ও ইসফাহানের টানেলমুখ–সহ কয়েকটি স্থাপনায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।

আগের ইসরায়েলি হামলা ও সামগ্রিক প্রভাব

• মার্কিন হামলার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে ইরানের কর্মসূচি ইতিমধ্যে পাঁচ-ছয় মাস পিছিয়েছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রের ধারণা।
• ওই আক্রমণের ঠিক আগে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বিয়ার শেভায় চার জন নিহত হন; এরপরই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

প্রাথমিক গোয়েন্দা রিপোর্ট আর হোয়াইট হাউসের পাল্টা দাবি স্পষ্ট করেছে—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আসলে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই তীব্র মতবিরোধ চলছে। পরবর্তী গোয়েন্দা তথ্য ও আইএইএ-র সম্পূর্ণ পরিদর্শন শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত চিত্র স্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম।