১০:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • 8

সমুদ্র কখনও বাধা নয়, বরং এক নির্মল সেতু—সংস্কৃতি, স্বপ্ন আর সম্ভাবনার। তাইওয়ানের সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ইয়াং ইউ-শুয়ান তেমনই এক সেতুবন্ধনের গল্প লিখছেন চীনের ফুচিয়ান প্রদেশে।

তাইপেইয়ের আলো-ঝলমলে জীবন থেকে ফুচিয়ানের গ্রামীণ জনপদে এসে নিজের প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগের মাধ্যমে এক অন্যরকম জীবন বুনে চলেছেন ইয়াং। তার প্রতিষ্ঠানের নাম—ফুচিয়ান শিয়ানশিয়ান কালচারাল অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ। লক্ষ্য একটাই—গ্রামের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।

‘আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের বলতাম—মেইনল্যান্ড চীন ঘুরে দেখো, শেখো ও বোঝো। তারপর একদিন নিজেই ভাবলাম, শুধু বলা কেন, আমিও যাই!’—বললেন ইয়াং।

ক্লাসিক্যাল সাহিত্য, নকশার নান্দনিকতা ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগে ডক্টরেট করা এই নারী ২০১৯ সালে সপরিবারে চলে আসেন ফুচিয়ানের শিয়ামেনে। গ্রামকে ঘিরে তার ভাবনা নিছক কোনো ‘প্রকল্প’ নয়—এ এক প্রণয়!

তিনি শুধু একটি কোম্পানি চালান না, বরং গ্রামবাসীদের পাশে থেকে তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়কে টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন করে গড়ে তুলতে সহায়তা করেন। তার দল তৈরি করেছে সৃজনশীল হোমস্টে, গ্রামীণ ক্যাফে, প্রবীণদের জন্য উন্মুক্ত পার্ক—সবই ঐতিহ্যের রঙে রাঙানো।

ইতিমধ্যে চাংচৌ ও লংইয়ান শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে তার উদ্যোগ। ২০২৫ সালের ‘স্ট্রেইটস ইয়ুথ ফোরাম’-এ ইয়াংয়ের কোম্পানি ‘সেরা তাইওয়ান উদ্যোগ’ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে। ফুচিয়ান প্রদেশের পক্ষ থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য নীতিগত সহায়তার অংশ এটি।

এমনকি প্রতিমাসে ২,০০০ ইউয়ান হাউজিং ভাতা ও অফিস ভাড়ায় ৫০% ছাড় পাচ্ছেন তিনি। নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য বার্ষিক ১২ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত প্রণোদনাও ঘোষণা করা হয়েছে। এই সহায়তার ফলে সম্প্রতি শিয়ামেনে একটি ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছেন ইয়াং।

‘নিজের বাসা কেনার পর যেন বুঝলাম—এবার আমি সত্যিই এখানে বসতি গেড়ে ফেলেছি,’ বলেন তিনি।

দুই সন্তানের মা ইয়াং এখন আর শুধু শিক্ষিকা নন—একজন মায়ের মতোই গ্রামের মানুষদের দেখভাল করছেন। তার ছেলে-মেয়েরা স্থানীয় স্কুলেই পড়ছে, মূল ভূখণ্ডের শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।

তার প্রতিষ্ঠানে তাইওয়ান থেকে আগত এক ডজনের বেশি কর্মী কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই পাড়ের তরুণদের সমান হারে নিয়োগ দিই। এতে অফিসে এক ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।’

তাইওয়ানের আরও তরুণদের তিনি আহ্বান জানান, যেন তারা সাহস করে এগিয়ে আসে। ‘নীতিগত সহায়তা আমাদের কাঁধের বোঝা হালকা করে দিয়েছে। এখন আমরা মন দিয়ে সেই কাজগুলো করতে পারছি, যা সত্যিই করতে চাই।’

সমুদ্রের ওপার থেকে আসা স্বপ্ন এখন ফুচিয়ানের মাটিতে ঘর বাঁধছে। নতুন প্রজন্মের হাতে তৈরি হচ্ছে চিরন্তন বন্ধনের এক নিরবচ্ছিন্ন গল্প—যেখানে সংস্কৃতি শুধু সেতু নয়, হয়ে উঠেছে হৃদয়ের ঠিকানা।

সিএমজি বাংলা

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২)

সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা

০৭:০০:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

সমুদ্র কখনও বাধা নয়, বরং এক নির্মল সেতু—সংস্কৃতি, স্বপ্ন আর সম্ভাবনার। তাইওয়ানের সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ইয়াং ইউ-শুয়ান তেমনই এক সেতুবন্ধনের গল্প লিখছেন চীনের ফুচিয়ান প্রদেশে।

তাইপেইয়ের আলো-ঝলমলে জীবন থেকে ফুচিয়ানের গ্রামীণ জনপদে এসে নিজের প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগের মাধ্যমে এক অন্যরকম জীবন বুনে চলেছেন ইয়াং। তার প্রতিষ্ঠানের নাম—ফুচিয়ান শিয়ানশিয়ান কালচারাল অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ। লক্ষ্য একটাই—গ্রামের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।

‘আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের বলতাম—মেইনল্যান্ড চীন ঘুরে দেখো, শেখো ও বোঝো। তারপর একদিন নিজেই ভাবলাম, শুধু বলা কেন, আমিও যাই!’—বললেন ইয়াং।

ক্লাসিক্যাল সাহিত্য, নকশার নান্দনিকতা ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগে ডক্টরেট করা এই নারী ২০১৯ সালে সপরিবারে চলে আসেন ফুচিয়ানের শিয়ামেনে। গ্রামকে ঘিরে তার ভাবনা নিছক কোনো ‘প্রকল্প’ নয়—এ এক প্রণয়!

তিনি শুধু একটি কোম্পানি চালান না, বরং গ্রামবাসীদের পাশে থেকে তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়কে টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন করে গড়ে তুলতে সহায়তা করেন। তার দল তৈরি করেছে সৃজনশীল হোমস্টে, গ্রামীণ ক্যাফে, প্রবীণদের জন্য উন্মুক্ত পার্ক—সবই ঐতিহ্যের রঙে রাঙানো।

ইতিমধ্যে চাংচৌ ও লংইয়ান শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে তার উদ্যোগ। ২০২৫ সালের ‘স্ট্রেইটস ইয়ুথ ফোরাম’-এ ইয়াংয়ের কোম্পানি ‘সেরা তাইওয়ান উদ্যোগ’ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে। ফুচিয়ান প্রদেশের পক্ষ থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য নীতিগত সহায়তার অংশ এটি।

এমনকি প্রতিমাসে ২,০০০ ইউয়ান হাউজিং ভাতা ও অফিস ভাড়ায় ৫০% ছাড় পাচ্ছেন তিনি। নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য বার্ষিক ১২ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত প্রণোদনাও ঘোষণা করা হয়েছে। এই সহায়তার ফলে সম্প্রতি শিয়ামেনে একটি ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছেন ইয়াং।

‘নিজের বাসা কেনার পর যেন বুঝলাম—এবার আমি সত্যিই এখানে বসতি গেড়ে ফেলেছি,’ বলেন তিনি।

দুই সন্তানের মা ইয়াং এখন আর শুধু শিক্ষিকা নন—একজন মায়ের মতোই গ্রামের মানুষদের দেখভাল করছেন। তার ছেলে-মেয়েরা স্থানীয় স্কুলেই পড়ছে, মূল ভূখণ্ডের শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।

তার প্রতিষ্ঠানে তাইওয়ান থেকে আগত এক ডজনের বেশি কর্মী কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই পাড়ের তরুণদের সমান হারে নিয়োগ দিই। এতে অফিসে এক ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।’

তাইওয়ানের আরও তরুণদের তিনি আহ্বান জানান, যেন তারা সাহস করে এগিয়ে আসে। ‘নীতিগত সহায়তা আমাদের কাঁধের বোঝা হালকা করে দিয়েছে। এখন আমরা মন দিয়ে সেই কাজগুলো করতে পারছি, যা সত্যিই করতে চাই।’

সমুদ্রের ওপার থেকে আসা স্বপ্ন এখন ফুচিয়ানের মাটিতে ঘর বাঁধছে। নতুন প্রজন্মের হাতে তৈরি হচ্ছে চিরন্তন বন্ধনের এক নিরবচ্ছিন্ন গল্প—যেখানে সংস্কৃতি শুধু সেতু নয়, হয়ে উঠেছে হৃদয়ের ঠিকানা।

সিএমজি বাংলা