পরামর্শক শিল্পে পরিবর্তনের প্রয়োজন
২০শ শতকের শুরুর দিকে ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সি শুরু হওয়ার পর থেকেই এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্তা যেখানে নিজেই কৌশল ঠিক করে দলের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করাতে পারেন, সেখানে কেন তিনি এমন একদল বিদেশফেরত পরামর্শকের কাছে যাবেন, যারা বাস্তবে কোনো ব্যবসা চালাননি, শুধু স্প্রেডশিটে হিসাব করেছেন? তবুও সময়ের সাথে প্রমাণ হয়েছে যে পরামর্শকরা শুধু অলস বা অযোগ্য ম্যানেজারদের সহায়তার জন্যই নন—তারা কার্যকর সমাধানও দেন।
১৯৯০ সালে ম্যাকিন্সি, বিসিজি ও বেইন—এই তিন শীর্ষ কৌশল পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে মোট কর্মীর সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার। বর্তমানে তারা প্রায় ৯০ হাজার লোক নিয়োগ দিয়েছে এবং গত এক দশকে তাদের আয় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কৌশল পরামর্শক নিয়োগ করে, তারা অন্যদের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটায়। কিন্তু এখন এই শিল্প বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখোমুখি। টিকে থাকতে হলে তাদের কাজের ধরনে পুনর্বিবেচনা জরুরি।
অভিজ্ঞতার ভান্ডারই আসল শক্তি
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রধান সম্পদ হলো বিভিন্ন ক্লায়েন্টের একই ধরনের সমস্যার সমাধানের অভিজ্ঞতা। কোনো সিইও-র জীবনে একবার ঘটতে পারে এমন ঘটনা—যেমন বড় কোনো একীভূতকরণ বা কারখানা স্থানান্তর—পরামর্শকদের কাছে অস্বাভাবিক নয়। যদিও সমালোচকেরা বলেন, তারা প্রায়শই কাগজে-কলমে চমৎকার কিন্তু বাস্তবে অপ্রয়োগযোগ্য সমাধান দেন, তবে এই ধারণা এখন পুরনো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা শুধু পরামর্শ নয়, বাস্তবায়নেও সক্রিয় হয়েছে—যেমন ব্যবসার ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা করা। এছাড়া এখন তারা প্রায়ই পারিশ্রমিককে প্রকল্পের সফলতার সাথে যুক্ত করে, যা তাদের স্বার্থকে ক্লায়েন্টের স্বার্থের সাথে মেলায়।
পরামর্শকদের প্রাক্তন কর্মীদের প্রভাব
এই শীর্ষ তিন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা তরুণরা প্রায়শই পেশাগত জীবনে সাফল্য পায়। আলফাবেট থেকে কোকা-কোলা পর্যন্ত বহু বড় প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে রয়েছেন এদের প্রাক্তন কর্মীরা, এবং এসব প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ভালো ফল করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে অনিশ্চয়তা
এআই যুগে এই পরামর্শক শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। অনেক সিনিয়র পার্টনার মনে করেন, এআই তাদের জন্য আশীর্বাদ, কারণ তারা প্রতিটি নতুন ব্যবস্থাপনা প্রবণতাকে কাজে লাগাতে দক্ষ। ইতোমধ্যেই বহু প্রতিষ্ঠান এআই প্রয়োগে সমস্যায় পড়ে তাদের সাহায্য নিচ্ছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের অভ্যন্তরীণ জ্ঞানভান্ডার দিয়ে প্রশিক্ষিত বট ব্যবহার শুরু করেছে, যা প্রকল্পের প্রাথমিক কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে।
তবে প্রশ্ন হলো, যখন এআই মডেলও তাদের তৈরি চটকদার কৌশল কাঠামো তৈরি করতে পারবে, তখন কী হবে? প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন প্যালান্টিয়ার ইতোমধ্যেই এআই বাস্তবায়নে ক্লায়েন্টদের সহায়তা দিচ্ছে, যা প্রচলিত পরামর্শকদের বাজার সংকুচিত করতে পারে। তাই টিকে থাকতে হলে সাধারণ সমাধান থেকে সরে এসে আগেভাগেই বিশেষায়িত দক্ষতা তৈরি এবং পরিবর্তন ব্যবস্থাপনায় পারদর্শিতা জরুরি হবে।
নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে বদল
এতে করে নতুনভাবে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যেই ম্যাকিন্সি, বিসিজি ও বেইন প্রচুর প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিচ্ছে—যেমন প্রোগ্রামার ও ডিজিটাল বিশেষজ্ঞ। বিসিজি এই বিশেষজ্ঞ ব্যবহারে সাফল্য পাওয়ায় এখন ম্যাকিন্সিকে ছাড়িয়ে শীর্ষস্থানে পৌঁছানোর পথে।
দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য বড় পরিবর্তন
আগামী দশকগুলোতে সফল হতে হলে পরামর্শক শিল্পকে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। কিছু সমস্যা, বিশেষ করে প্রযুক্তি-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ, অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সমাধান করানোই শ্রেয় হতে পারে—এটি মেনে নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে বিনয়, যা এই শিল্পের জন্য সহজ নয়। তারা প্রায়ই রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে—এবার সেটি নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।