আনন্দের ভিড়ে মিতব্যয়ের হিসাব
রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে ক্রিসমাস মার্কেটগুলোতে ভিড় জমছে, অথচ দেশটি কাটাচ্ছে কৃচ্ছ্রসাধন ও উচ্চ জীবনযাত্রা ব্যয়ের সময়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্কয়ারগুলো আলোয় সাজানো, সারি সারি স্টলে বিক্রি হচ্ছে গ্লিন্টওয়াইন, মিষ্টান্ন আর হস্তশিল্পের উপহার। পরিবারগুলো শিশুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ছবি তুলছে, ক্যারল শুনছে—কিন্তু অনেকেই কিনার চেয়ে বেশি দেখছে। উৎসবের আবহ স্পষ্ট, তবে কথাবার্তায় বারবার উঠে আসে বাড়তি বিল, কমে যাওয়া ক্রয়ক্ষমতা আর পরের মাসের হিসাব।
স্টল মালিকরা বলছেন, আগের বছরের তুলনায় ভিড় কম না হলেও প্রতি গ্রাহকের কেনাকাটার পরিমাণ কমে গেছে। কেউ কেউ ছোট সাইজের আইটেম এনেছেন, আবার কেউ মেনু থেকে কিছু পণ্য বাদ দিয়ে দাম ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। অনেক অভিভাবক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন—শিশুদের নিয়ে বড় কোনো মার্কেটে একদিন ভালোভাবে সময় কাটাবেন, কিন্তু একাধিক জায়গায় ঘোরা বা অজস্র কেনাকাটা করবেন না। তবু আলো আর গান–বাজনা অনেকের জন্য কয়েক ঘণ্টার মানসিক অবসর; অর্থকষ্টের মাঝেও শিশুদের সামনে স্বাভাবিক উৎসবের ছবি তুলে ধরতে চান তারা।
ঐতিহ্য, রাজনীতি ও আনন্দের মূল্য
বাজেট ঘাটতি কমাতে রোমানিয়া সরকার নানা কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ নিয়েছে; ফলে সরকারি খাত ও জনগণের আয়ে চাপ পড়ছে। একই সময়ে শহর কর্তৃপক্ষ উৎসবের আলোকসজ্জা ও আয়োজনের পেছনে উল্লেখযোগ্য ব্যয় করেছে—তাদের যুক্তি, দৃশ্যমান আনন্দ মানুষকে মানসিক শক্তি দেয় এবং কেন্দ্র এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখে। সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলছেন, মানুষ যখন ভাড়াবাড়ি, গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, তখন এই ব্যয় কতটা ন্যায়সঙ্গত; আবার এ ধরনের মার্কেট বহু ছোট উদ্যোক্তা ও মৌসুমি কর্মীদের জীবিকারও সহায়ক।
উজ্জ্বল আলোকিত স্কয়ার আর সাশ্রয়ী হতে বাধ্য ঘরোয়া বাস্তবতার এই বৈপরীত্য আসলে বৃহত্তর ইউরোপীয় সংকটের প্রতিচ্ছবি—বাজেটের চাপের মধ্যে সামাজিক ঐতিহ্য কীভাবে ধরে রাখা যায়। বুখারেস্টের জন্য এই ক্রিসমাস হয়তো “হিসাবি আনন্দের” মৌসুম হয়ে থাকবে; যেখানে হুটহাট কেনাকাটা কম, বরং একসঙ্গে বেড়ানো, বাসায় রান্না করা খাবার আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। রাতের আলো ঝলমলে বাজারগুলো তাই প্রমাণ করছে, কঠিন সময়েও মানুষ এমন জায়গা খোঁজে, যেখানে অন্তত কিছুক্ষণ সমাজ ও ভবিষ্যৎকে একটু উজ্জ্বল মনে হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















