কুমড়ার বীজ (Pumpkin seeds) আমাদের দেশে সচরাচর ফেলে দেওয়া হয়। অথচ এই ছোট্ট বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। নিয়মিত খেলে এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের শরীরের জন্য আশ্চর্যজনক উপকারে আসে।
নারীর জন্য উপকারিতা
হরমোনের ভারসাম্য
কুমড়ার বীজে থাকা জিঙ্ক এবং ফাইটোইস্ট্রোজেন নারীদের হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি মাসিকের অনিয়ম কমাতে, মুড সুইং নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মেনোপজ-পরবর্তী নানা উপসর্গ লাঘব করতে সহায়ক।
প্রজনন স্বাস্থ্য
ফোলেট, জিঙ্ক এবং আয়রন নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। গর্ভধারণের প্রস্তুতিতে শরীরকে শক্তিশালী করে এবং জরায়ুর স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
হাড়ের শক্তি
মেনোপজ-পরবর্তী নারীরা হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকিতে থাকেন। কুমড়ার বীজের ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট নারীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
পুরুষের জন্য উপকারিতা
প্রোস্টেট স্বাস্থ্য
কুমড়ার বীজে থাকা জিঙ্ক প্রোস্টেট গ্রন্থির সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি প্রোস্টেটের প্রদাহ (বিপিএইচ বা প্রোস্টেটের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা) কমাতে সাহায্য করে এবং পুরুষদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেওয়া প্রস্রাবজনিত সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করে।
প্রজনন ও উর্বরতা
জিঙ্ক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুক্রাণুর মান উন্নত করে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
শক্তি ও পেশী
প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পেশী বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং শারীরিক শক্তি বাড়ায়।
হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তসঞ্চালন উন্নত করে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
রোগ প্রতিরোধে কুমড়ার বীজ
- • ডায়াবেটিস: ফাইবার ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- • হৃদরোগ: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়।
- • অস্টিওপোরোসিস: হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে কার্যকর।
- • প্রোস্টেট সমস্যায়: পুরুষদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
- • ক্যানসার প্রতিরোধে: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্যানসার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে।
- • হজমজনিত সমস্যা: ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজম শক্তি বাড়ায়।
হাড়, হজম ও হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারিতা
হাড়
ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের জন্য কুমড়ার বীজ হাড়কে মজবুত করে এবং হাড়ক্ষয় রোধ করে।
হজম
ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি অন্ত্র পরিষ্কার রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে।
হৃদযন্ত্র
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তে কোলেস্টেরল কমায় এবং হৃদরোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
কুমড়ার বীজ খাওয়ার সহজ উপায় ও দৈনিক গ্রহণ মাত্রা
খাওয়ার উপায়
- ভেজে হালকা লবণ মিশিয়ে স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া যায়।
- সালাদ, ওটস বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- স্মুদি বা দইয়ের সঙ্গে ব্যবহার করলে পুষ্টিগুণ আরও বাড়ে।
- রান্নায় গুঁড়া করে মসলা বা সুপের টপিং হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
দৈনিক গ্রহণ মাত্রা
বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক ৩০ গ্রাম (প্রায় এক মুঠো) কুমড়ার বীজ খাওয়া নিরাপদ ও উপকারী। তবে অতিরিক্ত খেলে হজমে অস্বস্তি হতে পারে, তাই পরিমিত মাত্রায় খাওয়াই উত্তম।
কুমড়ার বীজ নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে উপকারী। এটি হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে, প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করে, হাড় মজবুত রাখে, হজম ও হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ভালো করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এটি যোগ করলে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।