ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথে অনুষ্ঠিত বিখ্যাত সংগীত উৎসব ভিক্টোরিয়াস ফেস্টিভ্যালে হঠাৎ করেই তৈরি হয় বিতর্ক। সেখানে আইরিশ ফোক ব্যান্ড দ্য মেরি ওয়ালোপার্স মঞ্চে তাদের পরিবেশনা চালাচ্ছিলেন। দর্শক যখন তাল মিলিয়ে গান গাইছিল, তখন ব্যান্ডের সদস্যরা মঞ্চে একটি ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে দেখান এবং সঙ্গে সঙ্গে স্লোগান তোলেন—“Free Palestine।”
ঘটনার পর মুহূর্তেই মঞ্চের সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। ব্যান্ড দাবি করে, তাদের পরিবেশনা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আয়োজকরা প্রথমদিকে বলেছিলেন, “ব্যান্ড বৈষম্যমূলক স্লোগান তুলেছিল, তাই সাউন্ড বন্ধ করা হয়েছিল।”
ব্যান্ডের প্রতিক্রিয়া
দ্য মেরি ওয়ালোপার্স অভিযোগ জানায়, আয়োজকদের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্রমাণ প্রকাশ করে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যায়—
- • একজন স্টেজ ক্রু মঞ্চে উঠে পতাকা সরানোর চেষ্টা করেন।
- • ঠিক সেই সময়েই সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়।
- • পর্দার বাইরে এক ব্যক্তিকে শোনা যায় বলতে:“পতাকা না সরালে তোমরা বাজাতে পারবে না।”
- • ব্যান্ডের একজন গিটারিস্ট জিজ্ঞেস করেন:“আমরা কি চালিয়ে যেতে পারব?” কিন্তু কোনো স্পষ্ট উত্তর মেলে না।
ব্যান্ডের সদস্যরা আরও বলেন, তারা ছয় বছর ধরে বিশ্বজুড়ে মঞ্চে গান গাইছেন, কিন্তু এর আগে কখনো এমন ঘটনার মুখোমুখি হননি।

আয়োজকদের ব্যাখ্যা ও ক্ষমাপ্রার্থনা
প্রথমে আয়োজকরা দাবি করেন, মঞ্চে রাজনৈতিক স্লোগান ও পতাকা প্রদর্শন তাদের দীর্ঘদিনের নীতির বিরুদ্ধে। তবে শিল্পীদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার তারা সম্মান করেন।
বিতর্ক বাড়তে থাকায় আয়োজকরা পরে দ্বিতীয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানে তারা স্বীকার করেন, ঘটনাটি সঠিকভাবে সামলানো হয়নি। তাদের ভাষায়—“নীতি যথাসময়ে ও সংবেদনশীলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি, ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
তারা স্বীকার করেন, দর্শকের সামনে আসলেই দ্য মেরি ওয়ালোপার্সের সাউন্ড বন্ধ করা হয়েছিল, যা ভুল ছিল। একই সঙ্গে আয়োজকরা ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মানবিক ত্রাণ প্রচেষ্টায় তারা বড় অঙ্কের অর্থ অনুদান দেবেন।
অন্যান্য শিল্পীদের প্রতিবাদ
এই ঘটনার পর উৎসবকে কেন্দ্র করে একের পর এক শিল্পী অবস্থান বর্জন করেন।
- • বিখ্যাত ব্যান্ড দ্য লাস্ট ডিনার পার্টি এক বিবৃতিতে জানায়, “দ্য মেরি ওয়ালোপার্সকে চুপ করানোর সিদ্ধান্তে আমরা ক্ষুব্ধ। এটি সরাসরি রাজনৈতিক সেন্সরশিপ।”

- • আরেকটি জনপ্রিয় ব্যান্ড দ্য একাডেমিক এবং দ্য ক্লিফোর্ডস অভিযোগ করে যে, “যে উৎসব শিল্পীর কণ্ঠ রুদ্ধ করে,সেখানে তারা আর কখনো পরিবেশনা করবেন না।”
- • প্রভাবশালী ব্যান্ড ভ্যাম্পায়ার উইকেন্ড-এর গায়ক এজরা কোয়েনিগ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “যদি শুধু একটি পতাকা দেখানোর কারণে কোনো শিল্পীকে শাস্তি দেওয়া হয়,সেটি ভুল। তাদের কাছে অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
ব্রিটেনে সংগীত ও রাজনৈতিক বক্তব্য প্রায়ই একসাথে এসেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে বিভিন্ন শিল্পী তাদের অবস্থান মঞ্চে প্রকাশ করেছেন। কয়েক মাস আগে গ্লাস্টনবুরি ফেস্টিভ্যালেও একাধিক শিল্পী প্রকাশ্যে প্রো ফিলিস্তিনি স্লোগান তুলেছিলেন, যা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
এই ঘটনার ফলে আবারও প্রশ্ন উঠেছে—সংগীত মঞ্চ কি শুধুই বিনোদনের জায়গা, নাকি শিল্পীরা রাজনৈতিক ও মানবিক অবস্থান জানানোর স্বাধীন মঞ্চও বটে?

সারসংক্ষেপ
দ্য মেরি ওয়ালোপার্স ফিলিস্তিনি পতাকা প্রদর্শন করায় ভিক্টোরিয়াস ফেস্টিভ্যালে তাদের পরিবেশনা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ব্যান্ডের অভিযোগ, এটি রাজনৈতিক সেন্সরশিপ, এবং ভিডিও প্রমাণে ঘটনাটি পরিষ্কার।
আয়োজকরা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ক্ষমা চান এবং অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন।
একাধিক জনপ্রিয় ব্যান্ড ও শিল্পী প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান বর্জন করেন।
ব্রিটিশ সংগীত অঙ্গনে রাজনৈতিক বক্তব্য ও শিল্পী স্বাধীনতার প্রশ্ন আবারও আলোচনায় উঠে আসে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















