মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে অভ্যন্তরীণ শহরগুলোতে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক শীর্ষ নেতৃত্ব ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে গুরুতর বিভাজন তৈরি হয়েছে। কেউ মনে করেন, ট্রাম্প এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন আসল ইস্যু থেকে দৃষ্টি সরাতে। আবার অনেকে মনে করেন, এ ধরনের পদক্ষেপই আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
“ডিসট্রাকশন” শব্দ নিয়ে দ্বন্দ্ব
ডেমোক্র্যাটদের ভেতরে এখন সবচেয়ে বড় মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে এক শব্দকে ঘিরে—“ডিসট্রাকশন” বা ‘বিভ্রান্তি’।
- কংগ্রেসনাল নেতারা, যেমন চাক শুমার ও হাকিম জেফ্রিজ, বলছেন ট্রাম্পের পদক্ষেপ আসলে মানুষকে প্রকৃত সমস্যা—মুদ্রাস্ফীতি, স্বাস্থ্যখাতে কাটছাঁট, এপস্টেইন ফাইল বিতর্ক—থেকে সরাতে নেওয়া কৌশল।
- কিন্তু অনেক কর্মী ও কৌশলবিদের মতে, এসব পদক্ষেপকেই মূল হুমকি হিসেবে তুলে ধরা উচিত, কারণ এগুলো গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করছে।

অর্থনীতি বনাম গণতন্ত্রের লড়াই
ডেমোক্র্যাট শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, অর্থনৈতিক ইস্যুতেই ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
- জরিপবিদ বেন টালচিন বলেন, “এটা অর্থনীতি, অর্থনীতি, আর অর্থনীতি।”
- তবে প্রবীণ জরিপবিদ সেলিন্ডা লেকের মতে, গণতন্ত্রের জন্য হুমকি উপেক্ষা করা মারাত্মক ভুল হবে। তিনি সতর্ক করেন, ভোটার উপস্থিতি ভয়াবহভাবে কমে যেতে পারে।
নেতৃত্বের কৌশল ও সমালোচনা
শুমার লস অ্যাঞ্জেলসে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর ঘটনাকে “স্বৈরাচারী অতিরিক্ত ক্ষমতার অপব্যবহার” বলেছেন। জেফ্রিজও ওয়াশিংটনে সেনা মোতায়েনকে “অবৈধ ক্ষমতা দখল” বলে অভিহিত করেছেন।
তবুও তারা একইসঙ্গে বলেছেন, এসব আসল ইস্যু নয় বরং “ডিসট্রাকশন।”
- শুমারের দাবি, ট্রাম্প এপস্টেইন বিতর্ক থেকে দৃষ্টি সরাতে চান।
- জেফ্রিজের মতে, ট্রাম্প তাঁর অজনপ্রিয় নীতি ঢাকতে সঙ্কট তৈরি করছেন।
এমন অবস্থান কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়েছে। অনেকের মতে, দলীয় নেতৃত্ব জনগণের উদ্বেগকে হালকাভাবে নিচ্ছে।

দলীয় কৌশলবিদদের দ্বিমত
ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদরা দুই ভাগে বিভক্ত—
- একদল মনে করেন, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ব্যর্থতাকে কেন্দ্র করলেই জয় সম্ভব।
- আরেকদল মনে করেন, স্বৈরাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নিলে দল দুর্বল দেখাবে।
বার্তা-পরামর্শদাতা আনাত শেনকার-ওসোরিও বলেন, শুধু অর্থনীতি নিয়ে পুরনো যুক্তি পুনরাবৃত্তি করলে জনগণ মনোযোগ দেবে না। বরং গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইকে সামনে আনতে হবে।
গভর্নরদের ভূমিকা
কংগ্রেস নেতৃত্বের নীরবতায় তৈরি শূন্যতা ভরাট করছেন কিছু গভর্নর, বিশেষ করে ইলিনয়ের জেবি প্রিৎজকার ও ক্যালিফোর্নিয়ার গ্যাভিন নিউসম।
- প্রিৎজকার ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে “স্বৈরশাসক হওয়ার চেষ্টা করা নেতা” বলেছেন।
- নিউসম একের পর এক মামলা, বক্তৃতা ও উদ্যোগের মাধ্যমে ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “এটাই স্বৈরশাসকদের কাজ।”

গণতান্ত্রিক বার্তা বনাম নির্বাচনী বাস্তবতা
ডেমোক্র্যাট শিবিরে অনেকেই মনে করছেন, কেবল অর্থনীতি নয় বরং ট্রাম্পের গণতন্ত্র-বিরোধী পদক্ষেপগুলোতেও সরব হওয়া দরকার।
- জরিপবিদ আনা গ্রিনবার্গের মতে, নিউসমের মতো নেতারা কর্মীদের হতাশার ভাষা বলছেন, যা দলীয় ভিত্তিকে সক্রিয় করছে।
- অন্যদিকে, অর্থনীতি কেন্দ্রিক প্রচারণারও শক্ত যুক্তি আছে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ভোটারদের আকর্ষণ করতে।
বিশ্ব রাজনীতির অভিজ্ঞতা ও শিক্ষণীয় দিক
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রেনডান নিয়াহানের মতে, গণতান্ত্রিক কাঠামো ভাঙতে চাওয়া নেতাদের মোকাবিলায় বিরোধীরা প্রায়শই অর্থনৈতিক ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু এতে জনগণকে গণতন্ত্রের ঝুঁকি বোঝানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়।
ডেমোক্র্যাট শীর্ষ নেতৃত্ব অর্থনীতিকে কেন্দ্র করতে চাইছে, আর কর্মী ও কিছু নেতা গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইকেই মুখ্য মনে করছেন। এই দ্বন্দ্ব দলকে ২০২৬ সালের নির্বাচনে কৌশলগতভাবে বিভক্ত করেছে।
ট্রাম্পের পদক্ষেপকে “ডিসট্রাকশন” বলার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ডেমোক্র্যাটদের মূল দ্বিধা—তারা কি ভোটের রাজনীতিতে জিততে চাইবেন, নাকি গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামকে সামনে নিয়ে আসবেন?
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















