জরিপের চিত্র
জাপানে শিশু-সহ নিম্নআয়ের পরিবারগুলোর ৯০ শতাংশেরও বেশি বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। আন্তর্জাতিক এনজিও সেভ দ্য চিলড্রেন জাপানের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জুন মাসে পরিচালিত এই জরিপে মোট ৭ হাজার ৮৫৬টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যেখানে ১৪ হাজারেরও বেশি শিশু রয়েছে। অধিকাংশ পরিবার একক অভিভাবকের এবং তারা এই সংস্থার খাদ্য সহায়তার জন্য আবেদন করেছিল।
মৌলিক অধিকার হুমকির মুখে
কানাগাওয়া ইউনিভার্সিটি অব হিউম্যান সার্ভিসেস-এর সহকারী অধ্যাপক কোটোনে তানাকা প্রতিবেদনে লিখেছেন, “প্রত্যেক শিশুর বেঁচে থাকা, বেড়ে ওঠা ও নিরাপদ থাকার অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু প্রতিদিনের খাবার নিয়ে অনিশ্চয়তা সেই মৌলিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই দ্রুত সরকারি খাদ্য সহায়তা কিংবা সরাসরি নগদ অর্থ প্রদানের মতো পদক্ষেপ জরুরি।”
সংকটের মাত্রা
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৮.৯ শতাংশ জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় শিশুদের খাদ্য সংকট বেড়েছে। প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবার আর্থিক কারণে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। প্রায় ৯ শতাংশ বলেছেন, ক্ষুধা ভুলিয়ে রাখতে তারা শিশুদের বেশি পানি খাওয়ান।
৮৩.৪ শতাংশ পরিবার মনে করেন, খাদ্য ঘাটতি শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ জানিয়েছেন, শিশুরা সহজে অসুস্থ হয়ে পড়ে, অনেকে আবার শীর্ণ। ৩৫ শতাংশেরও বেশি বলেছেন, ক্ষুধার কারণে শিশুরা মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না ও দুর্বল থাকে। গুরুতর ক্ষেত্রে ৮.২ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারে না।
চালের উচ্চমূল্য
চালের দাম বাড়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে। প্রায় অর্ধেক পরিবার জানিয়েছে, স্কুলের মধ্যাহ্নভোজন ছাড়া তাদের শিশু প্রায় চাল খায় না। প্রায় ৭৫ শতাংশ পরিবার গত বছরের তুলনায় কম চাল খাচ্ছে।
আর্থিক চাপে পরিবার
জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশই একক অভিভাবকের এবং তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই ৩০ থেকে ৪০ দশকের নারী। দুই সদস্যের পরিবারের মাসিক খাদ্য বাজেট গড়ে ৩২ হাজার ইয়েন (২১৮ মার্কিন ডলার), আর মোট খরচ ১ লাখ ৩৪ হাজার ইয়েন। তিন সদস্যের পরিবারের ক্ষেত্রে খাদ্য বাজেট ৪১ হাজার ইয়েন এবং মোট ব্যয় প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ইয়েন।
এনজিওর আহ্বান
সেভ দ্য চিলড্রেন জাপান বলেছে, “এই জরিপ থেকে আমরা দৃঢ়ভাবে অনুভব করেছি যে পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও গুরুতর হয়েছে।” সংস্থাটি আরও জানায়, “এই ফলাফল আমাদের প্রত্যেককে—এবং জাপান সরকারকে—শিশু দারিদ্র্য দূর করতে কী করা জরুরি সে বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।