প্রদর্শনীর সারসংক্ষেপ
২০২৫ সালের টার্নার প্রাইজ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ব্র্যাডফোর্ডের কার্টরাইট হল আর্ট গ্যালারিতে। এখানে যুদ্ধের ছায়া, ব্যক্তিগত স্মৃতি, লোকসংস্কৃতি ও সহিংসতার নানা রূপ শিল্পকর্মের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। চারজন শিল্পীর কাজ আলাদা আলাদা আবহ তৈরি করেছে প্রদর্শনীজুড়ে।
রেনে ম্যাটিচের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক শিল্প
রেনে ম্যাটিচের ইনস্টলেশনে ভেসে আসে ঘণ্টাধ্বনি, পুরোনো ভক্তিগীতি, নিনা সিমোনের কণ্ঠ ও কর্মী বেল হুকসের বার্তা। কাচের পেছনে সাজানো ছোট ছোট ছবিতে ফুটে উঠেছে ক্লাব দৃশ্য, প্রতিবাদ মিছিল, গ্রাফিতি, এমনকি এক শিশুর স্নানের মুহূর্ত।
দর্শক দেখতে পান হাসপাতালের এক বৃদ্ধ, লিপস্টিক আর সিগারেট, আবার কোথাও স্মরণিকা বইয়ের একটি পাতা—“ড্যাড, আওয়ার হিরো, ভিআইপি, লেজেন্ড।” এসবই শিল্পীর জীবন থেকে নেওয়া। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক অনুভূতি মিশে তৈরি হয়েছে সংযত অথচ আত্মপ্রকাশমূলক কাজ।

মোহাম্মদ সামির সহিংসতার ইঙ্গিত
মোহাম্মদ সামির চিত্রকর্মে সহিংসতার আভাস প্রবল। ভাঙা বাসনের নিচে বিস্ফোরিত আকাশ, পানিতে ভেসে থাকা কাপড় যেন ডুবে যাওয়া কারও শেষ মুহূর্ত, কিংবা সূর্যমুখীর ক্ষেতে টেনে আনার দাগ।
আরও আছে ঝড়ো হাওয়ায় দুলতে থাকা নারিকেল গাছের বিস্তৃত দৃশ্য, যেখানে সবুজ লেজার রশ্মি জঙ্গলকে বিদ্ধ করছে। সামি গত বছর এসব চিত্র ব্লেনহেইম প্যালেসে প্রদর্শন করেছিলেন, যেখানে অতীত সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে বর্তমানের সহিংসতার সংঘর্ষ স্পষ্ট হয়েছিল।
জেডি শার শামানিক আবহ
কানাডায় জন্ম নেওয়া কোরিয়ান শিল্পী জেডি শার ইনস্টলেশন যেন সমুদ্রের ভেতরের রহস্যময় জগৎ। ঝুলন্ত কৃত্রিম ঝিনুক থেকে ভেসে আসে ঘণ্টাধ্বনি, তিমির গান, পুরোনো টেলিফোনের সুর। স্বর্ণাভ মসৃণ মেঝেতে হাঁটার সময় দর্শকদের বিশেষ জুতো পরে প্রবেশ করতে হয়।

দেয়ালে ভেসে ওঠে সমুদ্রতলের আলো, আর ঝিনুকের মতো কাঠামো থেকে ঝুলে থাকে ছোট ছোট শামানিক ঘণ্টা। চিত্রগুলোতে দেখা যায় কোরিয়ান লোককাহিনির চরিত্র, কঙ্কালসদৃশ সংগীতশিল্পী, ডলফিন, স্কুইড ও কচ্ছপ। তবে এই কাজ অনেকের কাছে অতিরিক্ত জটিল ও বিলাসিতার প্রতীক মনে হয়েছে। এর দীর্ঘ শিরোনামই সব বলে দেয়—“মুনলিট কনফেশন্স অ্যাক্রস ডিপ সি একোজ: ইয়োর অ্যানসেস্টর্স আর হোয়েলস, অ্যান্ড আর্থ রিমেম্বার্স এভরিথিং।”
নেনা কালুর ব্যতিক্রমী ভাস্কর্য
গ্লাসগোতে জন্ম নেওয়া নেনা কালু বিভিন্ন উপকরণ—টেপ, প্লাস্টিক, কাপড়, কেবল টাই, ভিএইচএস টেপ, কার্ডবোর্ড—ব্যবহার করে তৈরি করেন তার ভাস্কর্য। তার কাজের ধরণ বারবার বাঁধা, মোড়ানো ও জট তৈরি করা হলেও প্রতিবারই ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন রূপ নেয়।
কালু অটিস্টিক এবং সীমিতভাবে কথা বলেন। তবে তার সহকারী চার্লট হলিনশেড জানিয়েছেন, শিল্পকর্মে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তার নিজের হাতে। কখনো ভাস্কর্যগুলো প্রসারিত হয়ে উঠে দাঁড়ায়, কখনো আবার ভেতরে মোচড় দিয়ে সঙ্কুচিত হয়।
তার আঁকাগুলোতেও রয়েছে একই ধরণের ঘূর্ণাবর্ত ও পুনরাবৃত্তি। এগুলো শক্তিশালী, ছন্দময়, উদ্দেশ্যমূলক ও আকর্ষণীয়। বিশেষজ্ঞরা তার শিল্পকে ফিলিডা বার্লোর ভিজ্যুয়াল আর্ট ও শীলা হিকসের ফাইবার আর্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এই বছরের প্রদর্শনীতে বৈচিত্র্যময় শিল্পকর্ম দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত হলেও, নেনা কালুর কাজ আলাদা ও অনন্য মাত্রা তৈরি করেছে। তার সৃজনশীলতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রমাণ করে তিনি ২০২৫ সালের টার্নার প্রাইজ পাওয়ার উপযুক্ত প্রার্থী।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















