শুরুর দিনগুলো: প্রতিভা থেকে তারকাখ্যাতি
রিস উইদারস্পুন মাত্র ১৪ বছর বয়সে হলিউডে প্রথম বড় চরিত্র পান ‘দ্য ম্যান ইন দ্য মুন’-এ। ২০-এর কোঠায় পৌঁছাতেই তিনি ‘ইলেকশন’, ‘ক্রুয়েল ইন্টেনশনস’ এবং পরে ‘লিগ্যালি ব্লন্ড’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করে তারকাখ্যাতি পান। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি দ্রুত এগিয়ে যান—২১ বছর বয়সে অভিনেতা রায়ান ফিলিপের সঙ্গে পরিচয়, ২৭ বছরেই সংসার ও দুই সন্তানের মা।
২০০৬ সালে ‘ওয়াক দ্য লাইন’-এর জন্য অস্কার জয়ের পর তিনি অভিনয়ে কঠিন সময় পার করেন এবং বিবাহবিচ্ছেদে পড়েন। সেই সংকটই তাঁকে নতুন পথে হাঁটার সাহস দেয়।
নতুন দিগন্ত: অভিনয় থেকে প্রযোজনায়
অভিনয়ে বাধা পেয়ে উইদারস্পুন ক্যামেরার পেছনে কাজ শুরু করেন। তিনি ‘প্যাসিফিক স্ট্যান্ডার্ড’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়েন, যেখানে নারীদের গল্পকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেখান থেকেই ‘ওয়াইল্ড’ ছবিতে অভিনয় ও প্রযোজনার মাধ্যমে তিনি আবারও অস্কার মনোনয়ন পান।
পরবর্তীতে ‘হ্যালো সানশাইন’ প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে বইয়ের ক্লাব, ‘বিগ লিটল লাইস’, ‘ডেইজি জোন্স অ্যান্ড দ্য সিক্স’ এবং ‘দ্য মর্নিং শো’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক প্রযোজনা করেন। ২০২১ সালে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারে কোম্পানিটি বিক্রি হলেও তিনি এখনও এর কার্যক্রমে যুক্ত আছেন।
নারীর নেতৃত্ব ও ভারসাম্যের পাঠ
‘দ্য মর্নিং শো’-এর নতুন মৌসুমে নারী নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা নিয়েও গল্প বলা হয়েছে। উইদারস্পুন মনে করেন, নারীর ক্ষমতায়ন জরুরি হলেও ভারসাম্য দরকার। তাঁর ভাষায়, শুধুমাত্র নারীদের জন্য নয়, পুরুষদেরও এই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে নারী পরিচালক, লেখক বা প্রযোজক হিসেবে সমানভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
নেতৃত্বের শিক্ষা ও কঠিন সময়
শন্ডা রাইমসের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় উইদারস্পুন প্রথম উপলব্ধি করেন, তিনি নিজেও একজন নেতা। যৌন হয়রানির অভিযোগ উত্থাপনে নারীদের সাহস জোগাতে তিনি নিজেই সামনে আসেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একসময় নির্যাতনমূলক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন। তখন আত্মবিশ্বাস ছিল না, কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলেন। তাঁর মতে, জনসমক্ষে ব্যক্তিগত জীবন টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন, বিশেষ করে যখন মিডিয়া সন্তানদের সামনে তাঁকে ‘চিড়িয়াখানার পশু’র মতো তাড়া করত।
পরিবার, খ্যাতি ও সংগ্রাম
খুব অল্প বয়সেই তিনি সংসার ও সন্তান সামলেছেন, যা হলিউডে অস্বাভাবিক। খ্যাতি ও পরিবার একসঙ্গে সামলানো তাঁর জন্য ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ট্যাবলয়েড সংস্কৃতি ও পাপারাজ্জির কারণে সন্তানরা উদ্বেগে ভুগেছে। জেনিফার অ্যানিস্টন ও জেনিফার গার্নারের মতো সহকর্মীরা এই সময়ে তাঁকে মানসিকভাবে সহায়তা করেছেন।
সামাজিক মাধ্যমের সুযোগ ও বইয়ের ক্লাব
সামাজিক মাধ্যম আসার পর তিনি উপলব্ধি করেন, সন্তানদের গোপনীয়তা রক্ষায় এটি একটি হাতিয়ার। একই সঙ্গে এটি বইয়ের ক্লাবকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে। আজও মানুষ তাঁকে ‘লিগ্যালি ব্লন্ড’ ও তাঁর বইয়ের ক্লাবের জন্য সবচেয়ে বেশি মনে রাখে।
ব্যবসায়ী থেকে সংস্কৃতি বিশ্লেষক
অভিনয়ে ব্যর্থতা তাঁকে ব্যবসার খুঁটিনাটি শিখতে বাধ্য করে। তিনি বুঝতে পারেন, নারী-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র ও বইয়ের জন্য বাজারে ঘাটতি আছে। সেখান থেকেই প্রযোজনা ও বইয়ের ক্লাব একত্রে গড়ে ওঠে। তাঁর মতে, খ্যাতির আলোকে অন্যের সাফল্যে ব্যবহার করা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
২০২১ সালে ‘হ্যালো সানশাইন’ বিক্রির সময় তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যেন কোম্পানির নারীরা যথাযথ মূল্য পান। যদিও পরবর্তীতে ক্রেতা সংস্থা ‘ক্যান্ডল মিডিয়া’র সিইও মন্তব্য করেন যে দাম বেশি হয়েছে, উইদারস্পুন বিশ্বাস করেন এই ব্র্যান্ড সময়ের সঙ্গে আরও শক্তিশালী হবে।
ভবিষ্যতের চিন্তা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও নতুন প্রজন্ম
তিনি লক্ষ্য করেছেন, কিশোর প্রজন্ম সিনেমা হলে যায় না। তাই বিনোদনের ধরন বদলাবে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে। তবে তাঁর মতে, প্রযুক্তিকে মানবসচেতনতার সঙ্গে মেলাতে হবে, নইলে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
অভিনয়ে আগ্রহ ও অজানা কাহিনি
এখন অভিনয়ে ফিরতে হলে তাঁকে ভীষণ অনুপ্রাণিত হতে হয়। কারণ ব্যক্তিগত জীবনেই তিনি সন্তুষ্ট। তিনি পুনরাবৃত্তি করতে চান না, বরং নতুন গল্প বলতে চান।
তিনি বলেন, তাঁর জীবনের অনেক ঘটনা এখনো প্রকাশ করেননি। আত্মজীবনী লেখার পরিকল্পনা নেই, তবে সন্তান ও ঘনিষ্ঠরা সব জানেন। অতীত নিয়ে পড়ে না থেকে প্রতিদিন নতুন কিছু করার দিকেই তিনি মনোযোগ দেন।
রিস উইদারস্পুন একাধারে অভিনেত্রী, প্রযোজক, উদ্যোক্তা ও সংস্কৃতি বিশ্লেষক। ব্যক্তিগত সংগ্রাম, নারীর ক্ষমতায়ন, ব্যবসায়িক দূরদর্শিতা এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে খ্যাতি শুধুমাত্র আলো নয়, এটি পরিবর্তনের হাতিয়ারও হতে পারে।