সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতির হিসাব করতে জরিপ শুরু করেছে পাঞ্জাব সরকার। তবে এ উদ্যোগ ঘিরে সরকারি জোটের দুই প্রধান শরিক—পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি)—এর মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দিয়েছে। পিপিপি চাইছে বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম (বিআইএসপি)-এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হোক, অন্যদিকে পিএমএল-এন সরকার বলছে নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করেই ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে।
দ্বন্দ্বের সূচনা
শনিবার পাঞ্জাব সরকার সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতির হিসাব করতে জরিপ শুরু করেছে। কিন্তু এ নিয়ে সরকারি জোটের দুই প্রধান দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি)-এর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
পিপিপি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে আহ্বান জানিয়েছে যেন বন্যার্তদের তাৎক্ষণিক সহায়তা বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম (বিআইএসপি)-এর মাধ্যমে দেওয়া হয়। অপরদিকে পিএমএল-এন নেতৃত্বাধীন পাঞ্জাব সরকার বলছে তারা নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করবে।
পিপিপির দাবি
ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পিপিপির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন খান, সিনেটর পালওয়াশা খান ও খাইবার পাখতুনখোয়ার নেতা আলী শাহ বাচা অভিযোগ করেন, বিআইএসপি-এর কাছে ইতিমধ্যে সঠিক তথ্যভাণ্ডার রয়েছে যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দ্রুত সহায়তা দিতে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
হুমায়ুন খান বলেন, মানুষ মারাত্মক কষ্টে আছে, আর বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি নিজে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পালওয়াশা খান বলেন, জোটের অংশীদার হয়েও পিএমএল-এন নেতাদের অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা দুঃখজনক। তার ভাষায়, “পাঞ্জাব একক কোনো দলের নয়, যেমন অন্য কোনো প্রদেশও এক দলের সম্পত্তি নয়।”
তিনি প্রস্তাব করেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর বিদ্যুৎ বিল সাময়িকভাবে মওকুফ করা হোক। এছাড়া তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বিআইএসপি নামটি শুনলেই এত ব্যথা কেন?”
আলী শাহ বাচার সমালোচনা
তিনি শুধু পিএমএল-এন নয়, খাইবার পাখতুনখোয়ার পিটিআই সরকারকেও ব্যর্থতার অভিযোগে দোষারোপ করলেন। তার মতে, সেখানে পাহাড়ি এলাকায় আকস্মিক মেঘভাঙা বৃষ্টিতে পুরো গ্রাম ভেসে গেছে, শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। অথচ কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকার শুধু একদিন গিয়ে চেক বিতরণ করে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, “যখনই পিএমএল-এন সমস্যায় পড়ে, তখনই তারা পিপিপিকে মনে করে।”
জরিপ কার্যক্রম
পাঞ্জাব সরকার জানিয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চার মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ২,২০০টি জরিপ দল গঠন করা হয়েছে। এসব দলে সেনাবাহিনীসহ রাজস্ব, কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও জেলা প্রশাসনের ১০ হাজার সদস্য কাজ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানান, জরিপ শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
- পুরো ঘর ধ্বংস হলে ১০ লাখ রুপি
- আংশিক ক্ষতিতে ৫ লাখ রুপি
- গবাদিপশুর ক্ষতিতে ৫ লাখ রুপি
- কৃষিজমিতে প্রতি একরে ২০ হাজার রুপি (সর্বোচ্চ ১২ একর পর্যন্ত)
তিনি বলেন, “এই জরিপ দলগুলোই আমার চোখ, কান ও হাত। আমরা নিশ্চিত করব যাতে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত বাদ না পড়ে।”
মরিয়ম নওয়াজের অবস্থান
পিপিপি ও পিটিআইয়ের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “কেউ কাজ করলে জনগণের জানার অধিকার আছে, তাই ক্যামেরা থাকতেই হবে।” তার ভাষায়, পাঞ্জাব কাজ করছে, অন্য প্রদেশগুলো সমালোচনায় ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, “বিআইএসপি ডেটা দিয়ে প্রত্যেককে ১০ হাজার রুপি দিলেই কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।”
ঋণ বিতর্ক
বিআইএসপি ইস্যুর মধ্যেই আরেক বিতর্ক শুরু হয়েছে। সিনিয়র পিপিপি নেতা নাদিম আফজাল চান অভিযোগ করেছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩৮ দিনে (১ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০২৫) পাঞ্জাব সরকার স্টেট ব্যাংক থেকে ৪০৫ বিলিয়ন রুপি ঋণ নিয়েছে।
এ অভিযোগের জবাবে পাঞ্জাবের তথ্যমন্ত্রী আজমা বোখারি হুমকি দেন, চান সাহেবের বিরুদ্ধে মানহানি ও সাইবার অপরাধ আইনে মামলা করবেন। তিনি বলেন, এ অভিযোগ মিথ্যা প্রচারণা এবং ইতিমধ্যেই ২৬ আগস্ট গণমাধ্যমকে প্রকৃত তথ্য জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঞ্জাবে জরিপ কার্যক্রম শুরু হলেও, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, অভিযোগ-প্রত্যাহার ও পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক মন্তব্যে জোটের ভেতরের সংকট আবারও প্রকাশ পেয়েছে।