হামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি
গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও গুলিবর্ষণে শনিবার ভোর থেকে অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
মধ্য গাজায় একটি বাড়িতে হামলায় অন্তত ১১ জন মারা গেছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে এক পরিবারের ৯ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় সহায়তা চাইতে যাওয়া অন্তত ৬ জনকেও হত্যা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের ঘোষণা ও সামরিক অভিযান
ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে তারা গাজা উপত্যকার অন্তত ১২০টি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ব্যবহৃত ভবন, যোদ্ধা এবং অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক স্থল অভিযান মূলত গাজা সিটিকে কেন্দ্র করে চলছে। ইসরায়েলের দাবি, এটিই হামাসের শেষ ঘাঁটি।
গাজার মানবিক সংকট
জাতিসংঘের সহায়তায় পরিচালিত সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে। শহর থেকে কয়েক লাখ মানুষ পালিয়ে গেছে, তবে আরও কয়েক লাখ এখনো সেখানে মানবিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। হাসপাতালসহ জরুরি সেবাগুলো ভেঙে পড়েছে।
একজন বাসিন্দা সালওয়া সুবহি বকর বলেন, “আমাদের বলা হয় ওদিকে যেতে, আবার ফিরে আসতে। মানুষ রাস্তায় ছড়িয়ে আছে। আমরা কোথায় যাব?”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান
আন্তর্জাতিক মহল থেকে নতুন করে যুদ্ধবিরতির দাবি উঠেছে। জাতিসংঘে এই সপ্তাহেই বহু দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পে অনড় রয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্যে প্রতিবাদ জানিয়ে বহু প্রতিনিধি সভা ত্যাগ করেন। নেতানিয়াহু আবারও ঘোষণা দেন, হামাসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবি করেছেন, তাঁর দল বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছেছে। তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
এই পরিকল্পনায় বন্দিদের মুক্তি, বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি, তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথের কথা উল্লেখ রয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।
চুক্তির চ্যালেঞ্জ ও দ্বন্দ্ব
প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় গাজার জনসংখ্যাকে বহাল রাখা, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, গাজার পূর্ণ সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহার এবং জনগণকে চরমপন্থা-হ্রাস করার প্রক্রিয়ার কথাও বলা হয়েছে।
তবে বাস্তবায়নের জন্য ইসরায়েল ও হামাস—দুই পক্ষকেই এখন পর্যন্ত দেওয়া প্রতিশ্রুতির চেয়ে বড় ছাড় দিতে হবে।
যুদ্ধের পটভূমি ও প্রাণহানি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরু হয়।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৬৫ হাজার ৫৪৯ জন নিহত হয়েছেন।
বিদেশি সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে গাজায় প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। ফলে প্রকৃত পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে
৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলার দুই বছর পূর্তি ঘনিয়ে এসেছে। ইসরায়েল ও গাজা—দুই জায়গাতেই বহু মানুষ আশা করছেন, যুদ্ধের তৃতীয় বছরে যেন তাদের আর ভোগ করতে না হয়।