০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণেও চীনের অর্থনীতিতে পুনর্জাগরণ অনিশ্চিত আলিয়া ভাটের ‘এক্সপ্যানশন ইরা’: ঘরোয়া সুপারস্টার থেকে গ্লোবাল, মাল্টি-হাইফেনেট ক্যারিয়ার প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১০) সিউলে ২১তম পারফর্মিং আর্টস মার্কেট: বিশ্বব্যাপী সৃজনশীলতার নতুন দ্বার উন্মোচন ড্যাশবোর্ডে ভরসা করছে বোরবন—ডেটা ও অটোমেশনে ‘ক্রাফট’ বদলাবে কি? আমাজন এমজিএমে ডোয়েন জনসন–বেনি সাফদির ‘Lizard Music’ চীনের গ্রামীণ নারীর জীবনে ডিজিটাল বিপ্লব জাপানে ভিসা ফি বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সমান হবে হার ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে ভারত হয়ে উঠছে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিকল্প আউটসোর্সিং কেন্দ্র বৈশ্বিক মানবিক সহায়তায় নতুন ভূমিকা নিচ্ছে বেইজিং, তবে ‘গণতান্ত্রিক বিকল্প’ও দরকার

নিজের পথে হেঁটেই বিশ্বজয়: হেলেন মিরেনের দীর্ঘ ও উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের রহস্য

হেলেন মিরেনের ক্যারিয়ারের মূলমন্ত্র

‘দ্য থার্সডে মার্ডার ক্লাব’ চলচ্চিত্রের নায়িকা হেলেন মিরেনের দীর্ঘ ও এখনও চলমান সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকা। এই দৃঢ়তা তাঁকে অস্কার, এমি ও টনি পুরস্কারের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।

নিজের পথেই হাঁটার শুরু

রয়্যাল শেক্সপিয়ার কোম্পানিতে কাজ করার সময় হেলেন মিরেনের উপর নির্মিত হয়েছিল ‘ডুইং হার ওন থিং’ নামের একটি তথ্যচিত্র। তখন এটি তাঁকে লজ্জিত করলেও আজ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে স্পষ্ট যে, তিনি সবকিছু করেছেন নিজের মতো করে।

শুরুতেই খ্যাতির সুযোগ থাকলেও মিরেন মূলধারার চলচ্চিত্রের পরিবর্তে পরীক্ষামূলক থিয়েটারের পথে হেঁটেছেন। ব্রিটিশ পরিচালক পিটার ব্রুকের সঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কাজ করেছেন। তাঁর ভাষায়, “আমি মূলত সরে গিয়েছিলাম। আমি আমার দিগন্ত প্রসারিত করতে চেয়েছিলাম।”

ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন

২৩ বছর বয়সে এক হাত-পাঠক তাঁকে বলেছিলেন, ৪৫ বছরের পর তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য পাবেন। তাঁর আত্মজীবনী ‘ইন দ্য ফ্রেম: মাই লাইফ ইন ওয়ার্ডস অ্যান্ড পিকচার্স’-এ মিরেন লিখেছেন, “এটি পুরোপুরি সত্যি হয়েছে।”

এমি-জয়ী ‘প্রাইম সাসপেক্ট’-এ জেন টেনিসন চরিত্রে অভিনয় এবং অস্কার-জয়ী ‘দ্য কুইন’-এ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের চরিত্রে অভিনয় দুটোই এই বয়সের পরে আসে—যা হলিউডে নারীদের জন্য বিরল।

নারীদের ক্যারিয়ারের পরিবর্তিত ধারা

মিরেন বলেন, “গ্রেটা গার্বো ৩৫ বছর বয়সে অবসর নিয়েছিলেন। এখন অনেক নারীর ক্যারিয়ারই শুরু হয় ৩৫-এর পর।” তিনি মনে করেন এই পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে বয়স্ক মানুষদের গল্প বলার মাধ্যমেই তিনি ভিন্নধর্মী চরিত্রে কাজ করছেন।

প্রচলিত ধারা ভেঙে বৈচিত্র্য

‘রেড’, ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজ, ‘শাজাম! ফিউরি অব দ্য গডস’-এর মতো অ্যাকশন ও সুপারহিরো চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। আবার ‘১৯২৩’-এর মতো জনপ্রিয় সিরিজেও নিয়মিত মুখ তিনি। তাঁর মতে, “এটি শুধু দর্শককে বয়স্ক মুখের সঙ্গে পরিচিত করার বিষয়। এটাই আমাদের চেহারা।”

ঐতিহাসিক চরিত্রে সাফল্য

রানী প্রথম ও দ্বিতীয় এলিজাবেথ, গোল্ডা মেয়ার, ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের মতো বাস্তব ব্যক্তিত্বদের চরিত্রে অভিনয় করে মিরেন সমাদৃত হন। তিনি বলেন, “আমি নকল করি না। আমি একজন শিল্পী। এটি আমার প্রতিকৃতি।”

চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে তিনি চিত্রশিল্পীদের আঁকা প্রতিকৃতি খুঁজে বের করেন, যেন একজন গোয়েন্দার মতো চরিত্রের ভেতরের দিকটা বোঝার চেষ্টা করছেন।

‘দ্য থার্সডে মার্ডার ক্লাব’ ও নতুন অধ্যায়

রিচার্ড ওসমানের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ‘দ্য থার্সডে মার্ডার ক্লাব’-এ এলিজাবেথ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিরেন। অবসরের পরও সক্রিয় মানুষের গল্প তুলে ধরে এই ছবিটি এক পুরনো ধারার নতুন রূপ।

তিনি বলেন, “মানুষ ভাবে আপনি পরিকল্পনা করেন। আপনি করেন না। আপনার পছন্দগুলো আপনার নিজের। আর সেই সিদ্ধান্তের পাশে আপনাকে দাঁড়াতেই হবে।”

হলিউডের বদলে যাওয়া দর্শক

আগে সিনেমার প্রধান দর্শক ধরা হতো ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের। এখন স্ট্রিমিং ও সিনেমা হলে বয়স্ক দর্শক বাড়ছে। মিরেন মনে করেন, এর প্রভাব চলচ্চিত্রের ধরণেও পড়ছে।

অবসরের ধারণাকে অস্বীকার

৮০ বছর বয়সেও তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি চলচ্চিত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমার কাজের উদ্দেশ্য হলো চারপাশের পৃথিবীকে প্রতিফলিত করা। যতদিন পারি আমি তা করব।”

দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিজ্ঞতা

২০১৭ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন, তবে ব্রিটিশ নাগরিকত্বও বজায় রাখেন। প্রথম মার্কিন পাসপোর্ট দেখানোর সময় ইমিগ্রেশনের এক কর্মকর্তা তাঁকে বলেছিলেন, “ওয়েলকাম হোম”—যা তাঁর কাছে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল।

প্রযুক্তি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) তার কণ্ঠস্বর বা চেহারা নকল করতে পারে—এটি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তবে একই সঙ্গে ভবিষ্যতের প্রতি কৌতূহলও রয়েছে। “আমি বাঁচতে ভালোবাসি কারণ দেখতে চাই সামনে কী আসে,” বলেন মিরেন।

হেলেন মিরেনের সারা জীবনের দর্শন একেবারে স্পষ্ট—নিজের পথে চলা ও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকা। এই মনোভাবই তাঁকে অস্কার, এমি ও টনি পুরস্কারের ইতিহাসে এক অনন্য স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। এখনো তিনি নতুন চরিত্রে চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন, নতুন গল্পে নিজেকে খুঁজে নিচ্ছেন, এবং দর্শকদের সামনে বয়সের সঙ্গে সাফল্যের এক ভিন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণেও চীনের অর্থনীতিতে পুনর্জাগরণ অনিশ্চিত

নিজের পথে হেঁটেই বিশ্বজয়: হেলেন মিরেনের দীর্ঘ ও উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের রহস্য

০৯:৩০:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হেলেন মিরেনের ক্যারিয়ারের মূলমন্ত্র

‘দ্য থার্সডে মার্ডার ক্লাব’ চলচ্চিত্রের নায়িকা হেলেন মিরেনের দীর্ঘ ও এখনও চলমান সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকা। এই দৃঢ়তা তাঁকে অস্কার, এমি ও টনি পুরস্কারের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।

নিজের পথেই হাঁটার শুরু

রয়্যাল শেক্সপিয়ার কোম্পানিতে কাজ করার সময় হেলেন মিরেনের উপর নির্মিত হয়েছিল ‘ডুইং হার ওন থিং’ নামের একটি তথ্যচিত্র। তখন এটি তাঁকে লজ্জিত করলেও আজ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে স্পষ্ট যে, তিনি সবকিছু করেছেন নিজের মতো করে।

শুরুতেই খ্যাতির সুযোগ থাকলেও মিরেন মূলধারার চলচ্চিত্রের পরিবর্তে পরীক্ষামূলক থিয়েটারের পথে হেঁটেছেন। ব্রিটিশ পরিচালক পিটার ব্রুকের সঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কাজ করেছেন। তাঁর ভাষায়, “আমি মূলত সরে গিয়েছিলাম। আমি আমার দিগন্ত প্রসারিত করতে চেয়েছিলাম।”

ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন

২৩ বছর বয়সে এক হাত-পাঠক তাঁকে বলেছিলেন, ৪৫ বছরের পর তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য পাবেন। তাঁর আত্মজীবনী ‘ইন দ্য ফ্রেম: মাই লাইফ ইন ওয়ার্ডস অ্যান্ড পিকচার্স’-এ মিরেন লিখেছেন, “এটি পুরোপুরি সত্যি হয়েছে।”

এমি-জয়ী ‘প্রাইম সাসপেক্ট’-এ জেন টেনিসন চরিত্রে অভিনয় এবং অস্কার-জয়ী ‘দ্য কুইন’-এ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের চরিত্রে অভিনয় দুটোই এই বয়সের পরে আসে—যা হলিউডে নারীদের জন্য বিরল।

নারীদের ক্যারিয়ারের পরিবর্তিত ধারা

মিরেন বলেন, “গ্রেটা গার্বো ৩৫ বছর বয়সে অবসর নিয়েছিলেন। এখন অনেক নারীর ক্যারিয়ারই শুরু হয় ৩৫-এর পর।” তিনি মনে করেন এই পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে বয়স্ক মানুষদের গল্প বলার মাধ্যমেই তিনি ভিন্নধর্মী চরিত্রে কাজ করছেন।

প্রচলিত ধারা ভেঙে বৈচিত্র্য

‘রেড’, ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজ, ‘শাজাম! ফিউরি অব দ্য গডস’-এর মতো অ্যাকশন ও সুপারহিরো চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। আবার ‘১৯২৩’-এর মতো জনপ্রিয় সিরিজেও নিয়মিত মুখ তিনি। তাঁর মতে, “এটি শুধু দর্শককে বয়স্ক মুখের সঙ্গে পরিচিত করার বিষয়। এটাই আমাদের চেহারা।”

ঐতিহাসিক চরিত্রে সাফল্য

রানী প্রথম ও দ্বিতীয় এলিজাবেথ, গোল্ডা মেয়ার, ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের মতো বাস্তব ব্যক্তিত্বদের চরিত্রে অভিনয় করে মিরেন সমাদৃত হন। তিনি বলেন, “আমি নকল করি না। আমি একজন শিল্পী। এটি আমার প্রতিকৃতি।”

চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে তিনি চিত্রশিল্পীদের আঁকা প্রতিকৃতি খুঁজে বের করেন, যেন একজন গোয়েন্দার মতো চরিত্রের ভেতরের দিকটা বোঝার চেষ্টা করছেন।

‘দ্য থার্সডে মার্ডার ক্লাব’ ও নতুন অধ্যায়

রিচার্ড ওসমানের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ‘দ্য থার্সডে মার্ডার ক্লাব’-এ এলিজাবেথ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিরেন। অবসরের পরও সক্রিয় মানুষের গল্প তুলে ধরে এই ছবিটি এক পুরনো ধারার নতুন রূপ।

তিনি বলেন, “মানুষ ভাবে আপনি পরিকল্পনা করেন। আপনি করেন না। আপনার পছন্দগুলো আপনার নিজের। আর সেই সিদ্ধান্তের পাশে আপনাকে দাঁড়াতেই হবে।”

হলিউডের বদলে যাওয়া দর্শক

আগে সিনেমার প্রধান দর্শক ধরা হতো ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের। এখন স্ট্রিমিং ও সিনেমা হলে বয়স্ক দর্শক বাড়ছে। মিরেন মনে করেন, এর প্রভাব চলচ্চিত্রের ধরণেও পড়ছে।

অবসরের ধারণাকে অস্বীকার

৮০ বছর বয়সেও তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি চলচ্চিত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমার কাজের উদ্দেশ্য হলো চারপাশের পৃথিবীকে প্রতিফলিত করা। যতদিন পারি আমি তা করব।”

দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিজ্ঞতা

২০১৭ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন, তবে ব্রিটিশ নাগরিকত্বও বজায় রাখেন। প্রথম মার্কিন পাসপোর্ট দেখানোর সময় ইমিগ্রেশনের এক কর্মকর্তা তাঁকে বলেছিলেন, “ওয়েলকাম হোম”—যা তাঁর কাছে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল।

প্রযুক্তি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) তার কণ্ঠস্বর বা চেহারা নকল করতে পারে—এটি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তবে একই সঙ্গে ভবিষ্যতের প্রতি কৌতূহলও রয়েছে। “আমি বাঁচতে ভালোবাসি কারণ দেখতে চাই সামনে কী আসে,” বলেন মিরেন।

হেলেন মিরেনের সারা জীবনের দর্শন একেবারে স্পষ্ট—নিজের পথে চলা ও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকা। এই মনোভাবই তাঁকে অস্কার, এমি ও টনি পুরস্কারের ইতিহাসে এক অনন্য স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। এখনো তিনি নতুন চরিত্রে চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন, নতুন গল্পে নিজেকে খুঁজে নিচ্ছেন, এবং দর্শকদের সামনে বয়সের সঙ্গে সাফল্যের এক ভিন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।