১০:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

পোষা প্রাণী ঘরে থাকলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি বাড়ে?

পোষা প্রাণীর সান্নিধ্যে বড় হয়ে ওঠা শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা হয়েছে- প্রতীকী ছবি

পোষা প্রাণীর উপস্থিতি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এটা অ্যালার্জি, একজিমা বা চুলকানি এবং এমনকি থাইরয়েড সংক্রান্ত রোগ, টাইপ ওয়ান ডায়বেটিসের মতো অটোইমিউনো ডিজিজের ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারে বলে গবেষকরা দাবি করছেন।

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে আমিশ সম্প্রদায়ের মতো সম্প্রদায়ের কথাও উল্লেখ করা দরকার।

অষ্টাদশ শতকে মধ্য ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় চলে আসা আমিশরা তাদের অনন্য জীবনযাত্রার জন্য আজও পরিচিত। এই স্পম্প্রদায়ের মানুষ ঐতিহ্যবাহীভাবে সাদামাটা জীবন যাপন করেন।

তারা দুধ উৎপাদনের জন্য গবাদি পশুর লালন-পালন করেন, ঘোড়ায় টানা গাড়ি ব্যবহার করেন- ঠিক যেমনটা বহু শতাব্দী ধরে তাদের পূর্বপুরুষরা করে এসেছে। পরিবার এবং কমিউনিটিকে প্রাধান্য দিতে তারা আধুনিক প্রযুক্তির দিকে তেমন মনোনিবেশ না করে পূর্বপুরুষদের জীবনযাত্রাকেই অনুসরণ করেন।

তাদের জীবনযাত্রা অনেকের নজর কেড়েছে। গত কয়েক দশক ধরে হলিউডের চিত্রনাট্যকার, ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং সমাজবিজ্ঞানীদের কল্পনাকে উসকে দিয়েছে তাদের জীবনধারণের এই পথ।

শধু তাই নয়, গত দশ বছরে চিকিৎসা জগতের কাছেও তাদের এই জীবনযাত্রা আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।

কারণ, আধুনিক সময়ের একটা প্রবণতাকে এড়িয়ে যেতে পেরেছে তারা। ১৯৬০ এর দশক থেকে হাঁপানি, একজিমা এবং অ্যালার্জির মতো প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত রোগের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গেলেও তা কিন্তু আমিশদের প্রভাবিত করতে পারেনি।

এর নেপথ্যে থাকা কারণ একদিকে যেমন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে তার বিষয়ে যেমন আভাস দেয়, তেমনই প্রাণীর উপস্থিতি ওই প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে সেটাও তুলে ধরে।

কাঠের তৈরি একটি ঘরে কালো রংয়ের একটি গরুর দুধ দোয়াচ্ছেন এক নারী ও এক পুরুষ, পাশে একই রকম আরেকটি গরুর দুধ দোয়াচ্ছে দুই কিশোরী

দুধ উৎপাদনের জন্য গবাদি পশু লালন-পালন আমিশ সম্প্রদায়ের সদস্যরা- প্রতীকী ছবি

অনন্য সম্প্রদায়

আমিশ সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েকটা রোগের প্রকোপ কেন কম দেখা যায়। তা জানার জন্য ২০১২ সালে একদল গবেষক ইন্ডিয়ানায় বসবাসকারী আমিশ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেছিলেন।

একইভাবে তারা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন সাউথ ডাকোটায় হুটেরাইটস বা হুটেরিয়ান নামে পরিচিত আরেক সম্প্রদায়ের মানুষকেও।

দুই ক্ষেত্রেই গবেষকরা ৩০জন শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।

হুটেরাইটস কৃষিভিত্তিক সম্প্রদায় এবং তারাও আমিশদের মতোই নিজেদের কমিউনিটির মাঝে থাকতে পছন্দ করে।

আমিশ এবং হুটেরাইটসদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তাদের পূর্বপুরুষরা ইউরোপীয়, দুই সম্প্রদায়ের মানুষই দুষিত বায়ুর সংস্পর্শে কম এসেছেন এবং তারা প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।

তবে হুটেরাইটস সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে হাঁপানি এবং শৈশবকালীন অ্যালার্জির হার আমিশ সম্প্রদায়ের শিশুদের তুলনায় চার থেকে ছয়গুণ বেশি।

গবেষকরা এর কারণ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন। তাদের মতে, এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা পার্থক্য হলো হুটেরাইটসরা শিল্পায়িত কৃষি প্রযুক্তিগুলোকে পুরোপুরি গ্রহণ করেছে, কিন্তু আমিশ সম্প্রদায় তা করেনি।

এর অর্থ হলো অল্প বয়স থেকেই আমিশ সম্প্রদায়ের মানুষ প্রাণীদের সাহচর্যে রয়েছে এবং তাদের (ওই প্রাণীদের) বয়ে আনা করা জীবাণুর সংস্পর্শেও থেকেছে।

এই বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করেছেন আয়ারল্যান্ডস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক’-এর মেডিসিন বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক ফার্গুস শানাহান। তার কথায়, “যদি আমিশ বসতির ছবি দেখেন এবং তাকে হুটেরাইটসদের বসতির সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে লক্ষ্য করবেন আমিশ সম্প্রদায়ের মানুষ খামারে প্রাণীদের সঙ্গে বাস করে।”

“হুটেরাইটসরা বাস করে ছোট ছোট গ্রামে। তাদের খামারগুলো অনেক সময় বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির একদল গবেষক এই নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে আমিশ সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির ঝুঁকি কম থাকার কারণ, পরিবেশ তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এইভাবে গড়ে তুলেছে।

তাদের ওই গবেষণা ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় এবং একে যুগান্তকারী গবেষণা বলে মনে করা হয়।

ওই গবেষকরা লক্ষ্য করেন, হুটেরাইট সম্প্রদায়ের শিশুদের তুলনায় আমিশ শিশুদের শরীরে ‘টি কোষগুলো’ আরও বেশি কার্যকর। এই ‘টি কোষ’ই মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দুই সম্প্রদায়ের শিশুদের বাড়ি থেকে ধুলোবালির নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকরা। উদ্দেশ্য ছিল, ওই ধূলিকণায় কী কী ধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে তা খতিয়ে দেখা।

সেই সময় স্পষ্ট প্রমাণ মেলে যে আমিশ স্পম্প্রদায়ের শিশুরা আরও বেশি পরিমাণে মাইক্রোবের (অণুজীব বা জীবাণু) সংস্পর্শে এসেছে এবং সেটা সম্ভবত সেই প্রাণীদের থেকে আসা যাদের সাহচর্যে তারা বাস করে।

একটি বেড়ালকে গোসল করানো হচ্ছে

পোষা প্রাণীদের সংস্পর্শে থাকলে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংস্পর্শে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটা প্রশিক্ষণ পায় বলে গবেষকরা দাবি করছেন, প্রতীকী ছবি

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা গবেষকদের পরীক্ষাও একই কথা বলছে।

ইমিউনোলজিস্টদের (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ) একটা দল পরীক্ষা করে জানিয়েছে, আলপাইন খামারে বেড়ে ওঠা শিশুরা হাঁপানি, হে ফিভার এবং একজিমার মতো রোগ থেকে সুরক্ষিত। গরু পালন করা হয় ওই সব খামারে এবং তাদের মালিকদের বাড়িগুলো এসব খামারের কাছাকাছি।

শৈশবের প্রথমদিকে বাচ্চারা যত সংখ্যক পোষা প্রাণীর উপস্থিতিতে থেকেছে, তার সঙ্গে অ্যালার্জির ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে বলেও গবেষণায় দেখা গিয়েছে।

গবেষকদের মতে, সাত থেকে নয় বছর বয়সের শিশুর অ্যালার্জির ঝুঁকি তাদের জীবনের প্রথম বছরগুলোতে বাড়িতে উপস্থিত পোষা প্রাণীর সংখ্যার সাথে আনুপাতিকভাবে হ্রাস পায়। একে ‘মিনি-ফার্ম এফেক্ট’ বলা হয়।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান দিয়েগোর অধ্যাপক জ্যাক গিলবার্ট আমিশ সম্প্রদায়ের ওপর চালানো ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

তার কথায়, “এটা কোনো সার্বজনীন নিরাময় নয়। যখনই আমি এই বিষয় নিয়ে কোথাও বিষয়ে বক্তৃতা দিই, কেউ না কেউ বলে ওঠে- আমি খামারে বড় হয়েছি, আমার অ্যালার্জি হয়েছে।”

“কিন্তু আমরা দেখেছি, আপনি যদি খামারের প্রাণীদের সঙ্গে মেলামেশা করে বেড়ে ওঠেন, তাহলে আপনার অ্যাজমা বা অ্যালার্জি হওয়ার শঙ্কা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। এমন কি আপনি যদি একটা কুকুরের সঙ্গে বড় হন তাহলে বা অ্যালার্জির ঝুঁকি ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ কমে যায়।”

মি. গিলবার্ট ‘আমেরিকান গাট প্রজেক্ট’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এটা একটা নাগরিক বিজ্ঞান প্রকল্প যা আমাদের জীবনধারা কীভাবে মাইক্রোবায়োমকে প্রভাবিত করে, সেই বিষয়ে নিয়ে গবেষণা করে।

চলতি বছরের সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত একটা নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, জিনগতভাবে একজিমার প্রবণতা রয়েছে এমন শিশুর বাড়িতে কুকুর পোষা হলে তা ওই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার জনের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যাদের মধ্যে ‘ইন্টারলিউকিন -সেভেন রিসেপ্টর’ বা ‘আইএল – সেভেন আর’ (যাকে একজিমার জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে ধরা হয়) উপস্থিত, তারা যদি শৈশবের প্রথম দুই বছরে বাড়ির কুকুরের সঙ্গে কাটায় তাহলে তাদের মধ্যে একজিমার ঝুঁকি কমতে পারে।

ইমিউন সেল ফাংশন এবং প্রদাহের সঙ্গে সম্পর্কিত জিনের একটা নির্দিষ্ট রূপ ‘আইএল-সেভেন আর’।

ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে যে কুকুরের ‘মলিকিউলার সিগন্যাল’ বা আণবিক সংকেত ত্বকের প্রদাহকে দমন করতে পারে।

তবে গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যাদের ইতোমধ্যে একজিমা রয়েছে, তাদের নতুনভাবে কুকুরের সাহচর্যে রাখলে, রোগের লক্ষণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একটি কুকের মুখের সঙ্গে গাল লাগিয়ে হাসছে একটি মেয়ে শিশু, তার মাথায় কোঁকড়ানো চুল

পোষা প্রাণীর উপস্থিতি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা- প্রতীকী ছবি

প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা

আমিশ সম্প্রদায়ের রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর শৈশবে প্রাণীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সম্ভাব্য প্রভাব অনেকের কাছেই আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি পোষা প্রাণী নতুন “প্রোবায়োটিক” (উপকারী ব্যাকরেটিয়ার মতো কাজ করে) কি না- এই প্রশ্ন তুলে নিউ ইয়র্ক টাইমস নিবন্ধও প্রকাশ করেছে।

তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াচ্ছে?

সম্ভবত এবং আশ্চর্যজনকভাবে আমরা যখন পোষা প্রাণীদের আদর করি বা তাদের সাহচর্যে থাকি, তখন ওই প্রাণীর লোম বা পাঞ্জা থেকে তাদের শরীরে থাকা মাইক্রোব আমাদের ত্বকে এসে পৌঁছায়। অস্থায়ীভাবে হলেও, তা থাকে।

তাই বলা যেতে পারে ওই প্রাণীদের শরীরে থাকা পরজীবীরা আমাদের মাইক্রোবায়োম-এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

মাইক্রোবদের এই বড়সড় বসতি আমাদের ত্বকে, মুখের ভেতরে এমনকি অন্ত্রেও বাস করে এবং আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক নাসিয়া সাফদারের মতে, পোষা প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের রোগ প্রতিরোধের সম্পর্কের ধারণা পেট ফুড ইন্ডাস্ট্রির (যারা প্রাণীদের জন্য খাবার প্রস্তুত করে) আগ্রহ জাগাতে পারে।

কুকুর ও বিড়ালের মধ্যে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে পারে এমন খাবারকে বাজারজাত পণ্য হিসেবে তৈরি করা এবং তার প্রচার করার কথা ভাবতে পারে পেট ফুড ইন্ডাস্ট্রি। পোষা প্রাণীর দেহে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া যাতে পোষ্যের মালিকের দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে সেই ভাবনার ওপর জোর দিতে পারে তারা।

অধ্যাপক সফদার বলেছেন, “এই দৃষ্টিভঙ্গিটা ফান্ডিংয়ের দিক থেকে অনেকের নজর কেড়েছে, কারণ আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই মানুষের শারীরিক অবস্থার বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে।”

“তাহলে এতে প্রাণীর কী ভূমিকা থাকতে পারে?”

এই বিষয়ে তিনি একটা পরীক্ষা চালানোর কথা ভাবছেন, যেখানে পোষা প্রাণী এবং তাদের মালিক যখন একাধিকবার পশুচিকিৎসকের কাছে আসবেন, তখন তাদের দুজনেরই মলের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তারপর পরীক্ষা করে দেখতে হবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দু’জনের অন্ত্রে উপস্থিত মাইক্রোবায়োমের মধ্যে মিল পাওয়া যায় কি না।

তিনি দেখতে চান, দু’জনের শরীরে একই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি শনাক্ত করা যায় কি না যাতে স্বাস্থ্যগত সুবিধা মিলতে পারে।

তবে, কুকুর, বিড়াল বা অন্য প্রাণীর জীবাণু আমাদের মাইক্রোবায়োমে অন্তর্ভুক্ত করার ধারণা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদেরই একজন অধ্যাপক গিলবার্ট।

তিনি বলেন, “এর কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। আমরা সত্যিই আমাদের ত্বকে, মুখে বা অন্ত্রে কুকুরের দেহ থেকে আসাকে ব্যাকটেরিয়ার দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকতে দেখি না। তারা থেকে যায় না।”

তবে অধ্যাপক নাসিয়া সফদর জানিয়েছেন তিনি এখনো মনে করেন ওই গবেষণা সার্থক হতে পারে। তার মতে, অন্ত্রে উপস্থিত মাইক্রোবের পোষা প্রাণী থেকে তাদের মালিকদের দেহে এবং মানবদেহ থেকে প্রাণীর দেহে স্থানান্তরের বিষয়টা প্রশংসার যোগ্য।

তার কথায়, “এই বিষয়ে গবেষণা মূল্যবান এবং এখনো এই নিয়ে নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হয়নি।”

কাদামাটিতে বসে আছে একটি কুকুর

পোষা প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে মাইক্রোব স্থানান্তরিত হতে পারে-প্রতীকী ছবি

অধ্যাপক গিলবার্ট একটা অন্য তত্ত্ব উল্লেখ করেছেন।

তার তত্ত্ব হলো যেহেতু আমাদের পূর্বপুরুষরা বিভিন্ন প্রজাতির পশুকে পালন করতো তাই আমাদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা প্রাণীদের বয়ে আনা বহন মাইক্রোব দ্বারা উদ্দীপিত হওয়ার জন্য বিকশিত হয়েছে। তবে এই মাইক্রোব স্থায়ীভাবে মানবশরীরে থাকে না।

কিন্তু আমাদের প্রতিরোধক কোষগুলো ওই পরিচিত সংকেতকে শনাক্ত করতে পারে যা পরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করে।

মি. গিলবার্ট বলেন, “বহু সহস্রাব্দ ধরে মানুষের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা কুকুর, ঘোড়া ও গরুর ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আর তাই তারা যখন সেই একই জিনিস শনাক্ত করে, তখন তা উপকারী প্রতিরোধক ক্ষমতার বিকাশকে উদ্দীপিত করে তোলে। তারা (ইমিউন সিস্টেম) বুঝতে পারে কী করতে হবে।”

গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে পরিবারে পোষ্য প্রাণী রয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের অন্ত্রে উপস্থিত মাইক্রোবায়োমের মধ্যে মিল রয়েছে।

মি. গিলবার্ট ব্যাখ্যা করেছেন, ওই প্রাণী সম্ভবত তার মালিকদের মধ্যে ‘হিউম্যান মাইক্রোব’ স্থানান্তর করার বিষয়ে বাহকের কাজ করেছে।

একইসঙ্গে, পোষা প্রাণীর নিজেদের মাইক্রোবায়মের নিয়মিত সংস্পর্শ তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করে তোলে।

পাশাপাশি, অন্ত্রে এবং ত্বকে মাইক্রোবায়োমকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করতে, সংক্রামক জীবাণু রুখতে এবং উপকারী ব্যাকটিরিয়াকেও উদ্দীপিত করে।

গোলাপী জামা পরা একটি মেয়ে শিশুর কোলে একটি বিড়াল

যারা শৈশবের প্রথম দিকে পোষা প্রাণীর সান্নিধ্যে থেকেছে তাদের মধ্যে অ্যালার্জি, একজিমার মতো রোগ হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম বলে দেখা গিয়েছে- প্রতীকী ছবি

প্রাচীন মাইক্রোব

পশুপ্রেমীদের জন্য একটা মস্ত সুখবর হলো আরও অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে যে পোষ্য প্রাণীদের সাহচর্য মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ভালো।

আমিশ এবং হুটেরাইটসের ওপর চালানো ওই গবেষণার বিষয়ে জানার পর ফার্গুস শানাহান ‘আইরিশ ট্র্যাভেলারস’দের ওপর নিজে গবেষণা করেন। আইরিশ ট্র্যাভেলারস একটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা সীমাবদ্ধ জায়গায় বাস করে। তারা কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে ঘোড়া, ফেরেটসহ বিভিন্ন প্রাণী পোষে।

অধ্যাপক শানাহান তাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমগুলোর সিকোয়েন্সিং করেছেন এবং তার সাথে তুলনা করেছেন সেই আইরিশ ব্যাক্তিদের যারা আজ আরও আধুনিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করেন।

পাশাপাশি ফিজি, মাদাগাস্কার, মঙ্গোলিয়া, পেরু এবং তানজানিয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাইক্রোবায়োমেরও সিকোয়েন্সিং-এরও তুলনা করেছেন যারা এখনো আমাদের শিকারী পূর্বপুরুষদের কাছাকাছি জীবনযাপন করে।

তিনি আবিষ্কার করেন আইরিশ ট্রাভেলারদের মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে আদিবাসী গোষ্ঠীর মাইক্রোবায়োমের বেশি মিল রয়েছে। তাদের মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে প্রাক-শিল্পায়িত বিশ্বের মানুষের (প্রাচীন গুহা থেকে পাওয়া প্রাচীন মলের সংরক্ষিত নমুনা সংগ্রহ করে তার গবেষণার মাধ্যমে) মাইক্রোবায়োমের মিল রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তার কথায়, “আইরিশ ট্র্যাভেলারস স্পম্প্রদায়ের মানুষেরা একটা প্রাচীন মাইক্রোবায়োম ধরে রাখতে পেরেছেন। তানজানিয়ার উপজাতি (যারা এখনো শিকারী) বা মঙ্গোলিয়ান ঘোড়সওয়ারদের (পালিত পশুদের কাছাকাছি ইয়ার্টে বাস করে) মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে তার মিল রয়েছে।”

অধ্যাপক শানাহান মনে করেন যে এটা আইরিশ ট্র্যাভেলারসদের মধ্যে অটোইমিউন রোগের নিম্ন হারকে ব্যাখ্যা করতে পারে।

সাম্প্রতিক দশকে প্রদাহজনক পেটের রোগ, ক্রোহন ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, মাল্টিপল স্কলেরোসিস-এর মতো রোগ প্রায়শই দেখা যায়।

তিনি বলেছেন, “এর মানে এটা নয়, যে তাদের স্বাস্থ্য ভালো। বসতি স্থাপনকারী সম্প্রদায়ের চেয়ে আইরিশ ট্র্যাভেলারদের মৃত্যু হচ্ছে অনেক আগে। তবে দারিদ্র্য, প্রান্তিকতা এবং তাদের সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মদ্যপান, আত্মহত্যার কারণে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া দুর্ঘটনাও রয়েছে।”

“কিন্তু একজন আইরিশ রিউম্যাটোলজিস্টের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন যে তারা সেখানে সিস্টেমিক লুপাস (এক প্রকার অটোইমিউন রোগ) রয়েছে এমন কাউকে দেখেছেন কি না। উত্তর হবে- না। তারা কখনো দেখেননি।”

একজন পুরুষের নাক চাটছে একটি ওয়ালের ওপ দাঁড়িয়ে থাকা একটি কুকুর, কুকুরটির গলায় দড়ি পরানো একটি দড়ির শেষ মাথা লোকটির হাতে ধরা

একাধিক গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে পোষ্য প্রাণীদের সাহচর্য মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য উপকারী-প্রতীকী ছবি

গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখতে চাইছেন, বিভিন্ন উপায়ে প্রাণীদের আমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে কি না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অবাঞ্ছিত কুকুরকে পুনর্বাসনের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের সংস্পর্শে এনে দেখতে চেয়েছেন তাদের উপস্থিতি মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে কি না।

ইতালির একদল গবেষক একটা শিক্ষামূলক খামার তৈরি করেছিল যেখানে পোষা প্রাণী নেই এমন পরিবারের শিশুরা নিয়মিত অন্যদের তত্ত্বাবধানে ঘোড়া পুষতে পারে। দেখা গিয়েছিল, খামারে আসা শিশুদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম আরও উপকারী মেটাবোলাইটস (বিপাক) উৎপাদন করা শুরু করেছে।

অধ্যাপক গিলবার্ট জানিয়েছেন শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার এটা একটা সম্ভাব্য উপায় হতে পারে।

তার কথায়, “আপনি যদি আরও বেশি ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসেন তবে তা আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নানাভাবে স্টিমুলেট করবে। এর ফলে আপনার ত্বক এবং আপনার অন্ত্রে থাকা মাইক্রোব নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও উন্নত হতে পারে।”

“কিন্তু আপনার দেহে প্রাণী ব্যাকটেরিয়ার বসতি তৈরি হওয়া সম্ভব নয়।”

গবেষকরা জানিয়েছেন সারা জীবন পোষা প্রাণীর সাহচর্যে থাকলে তা অন্যান্য উপায়েও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে মাইক্রোবায়ামের মিথস্ক্রিয়াকে সহজতর করে তুলতে পারে।

এই প্রসঙ্গে একটা ছোট উদাহরণ দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্কের মাইক্রোবায়োম কেন্দ্রিক গবেষণা কেন্দ্র ‘এপিসি মাইক্রোবায়োম আয়ারল্যান্ডের ইমিউনোলজি’র অধ্যাপক লিয়াম ওমাহোনি।

তার কথায়, “আপনার বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে আপনি বাইরে যাবেন, হাঁটাহাঁটি করবেন। এইভাবে আপনি পার্কে বা মাটিতে থাকা মাইক্রোবের সংস্পর্শে আসতে পারেন। এটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।”

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

পোষা প্রাণী ঘরে থাকলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি বাড়ে?

০৬:১৮:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

পোষা প্রাণীর উপস্থিতি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এটা অ্যালার্জি, একজিমা বা চুলকানি এবং এমনকি থাইরয়েড সংক্রান্ত রোগ, টাইপ ওয়ান ডায়বেটিসের মতো অটোইমিউনো ডিজিজের ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারে বলে গবেষকরা দাবি করছেন।

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে আমিশ সম্প্রদায়ের মতো সম্প্রদায়ের কথাও উল্লেখ করা দরকার।

অষ্টাদশ শতকে মধ্য ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় চলে আসা আমিশরা তাদের অনন্য জীবনযাত্রার জন্য আজও পরিচিত। এই স্পম্প্রদায়ের মানুষ ঐতিহ্যবাহীভাবে সাদামাটা জীবন যাপন করেন।

তারা দুধ উৎপাদনের জন্য গবাদি পশুর লালন-পালন করেন, ঘোড়ায় টানা গাড়ি ব্যবহার করেন- ঠিক যেমনটা বহু শতাব্দী ধরে তাদের পূর্বপুরুষরা করে এসেছে। পরিবার এবং কমিউনিটিকে প্রাধান্য দিতে তারা আধুনিক প্রযুক্তির দিকে তেমন মনোনিবেশ না করে পূর্বপুরুষদের জীবনযাত্রাকেই অনুসরণ করেন।

তাদের জীবনযাত্রা অনেকের নজর কেড়েছে। গত কয়েক দশক ধরে হলিউডের চিত্রনাট্যকার, ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং সমাজবিজ্ঞানীদের কল্পনাকে উসকে দিয়েছে তাদের জীবনধারণের এই পথ।

শধু তাই নয়, গত দশ বছরে চিকিৎসা জগতের কাছেও তাদের এই জীবনযাত্রা আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।

কারণ, আধুনিক সময়ের একটা প্রবণতাকে এড়িয়ে যেতে পেরেছে তারা। ১৯৬০ এর দশক থেকে হাঁপানি, একজিমা এবং অ্যালার্জির মতো প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত রোগের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গেলেও তা কিন্তু আমিশদের প্রভাবিত করতে পারেনি।

এর নেপথ্যে থাকা কারণ একদিকে যেমন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে তার বিষয়ে যেমন আভাস দেয়, তেমনই প্রাণীর উপস্থিতি ওই প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে সেটাও তুলে ধরে।

কাঠের তৈরি একটি ঘরে কালো রংয়ের একটি গরুর দুধ দোয়াচ্ছেন এক নারী ও এক পুরুষ, পাশে একই রকম আরেকটি গরুর দুধ দোয়াচ্ছে দুই কিশোরী

দুধ উৎপাদনের জন্য গবাদি পশু লালন-পালন আমিশ সম্প্রদায়ের সদস্যরা- প্রতীকী ছবি

অনন্য সম্প্রদায়

আমিশ সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েকটা রোগের প্রকোপ কেন কম দেখা যায়। তা জানার জন্য ২০১২ সালে একদল গবেষক ইন্ডিয়ানায় বসবাসকারী আমিশ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেছিলেন।

একইভাবে তারা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন সাউথ ডাকোটায় হুটেরাইটস বা হুটেরিয়ান নামে পরিচিত আরেক সম্প্রদায়ের মানুষকেও।

দুই ক্ষেত্রেই গবেষকরা ৩০জন শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।

হুটেরাইটস কৃষিভিত্তিক সম্প্রদায় এবং তারাও আমিশদের মতোই নিজেদের কমিউনিটির মাঝে থাকতে পছন্দ করে।

আমিশ এবং হুটেরাইটসদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তাদের পূর্বপুরুষরা ইউরোপীয়, দুই সম্প্রদায়ের মানুষই দুষিত বায়ুর সংস্পর্শে কম এসেছেন এবং তারা প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।

তবে হুটেরাইটস সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে হাঁপানি এবং শৈশবকালীন অ্যালার্জির হার আমিশ সম্প্রদায়ের শিশুদের তুলনায় চার থেকে ছয়গুণ বেশি।

গবেষকরা এর কারণ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন। তাদের মতে, এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা পার্থক্য হলো হুটেরাইটসরা শিল্পায়িত কৃষি প্রযুক্তিগুলোকে পুরোপুরি গ্রহণ করেছে, কিন্তু আমিশ সম্প্রদায় তা করেনি।

এর অর্থ হলো অল্প বয়স থেকেই আমিশ সম্প্রদায়ের মানুষ প্রাণীদের সাহচর্যে রয়েছে এবং তাদের (ওই প্রাণীদের) বয়ে আনা করা জীবাণুর সংস্পর্শেও থেকেছে।

এই বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করেছেন আয়ারল্যান্ডস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক’-এর মেডিসিন বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক ফার্গুস শানাহান। তার কথায়, “যদি আমিশ বসতির ছবি দেখেন এবং তাকে হুটেরাইটসদের বসতির সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে লক্ষ্য করবেন আমিশ সম্প্রদায়ের মানুষ খামারে প্রাণীদের সঙ্গে বাস করে।”

“হুটেরাইটসরা বাস করে ছোট ছোট গ্রামে। তাদের খামারগুলো অনেক সময় বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির একদল গবেষক এই নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে আমিশ সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির ঝুঁকি কম থাকার কারণ, পরিবেশ তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এইভাবে গড়ে তুলেছে।

তাদের ওই গবেষণা ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় এবং একে যুগান্তকারী গবেষণা বলে মনে করা হয়।

ওই গবেষকরা লক্ষ্য করেন, হুটেরাইট সম্প্রদায়ের শিশুদের তুলনায় আমিশ শিশুদের শরীরে ‘টি কোষগুলো’ আরও বেশি কার্যকর। এই ‘টি কোষ’ই মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দুই সম্প্রদায়ের শিশুদের বাড়ি থেকে ধুলোবালির নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকরা। উদ্দেশ্য ছিল, ওই ধূলিকণায় কী কী ধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে তা খতিয়ে দেখা।

সেই সময় স্পষ্ট প্রমাণ মেলে যে আমিশ স্পম্প্রদায়ের শিশুরা আরও বেশি পরিমাণে মাইক্রোবের (অণুজীব বা জীবাণু) সংস্পর্শে এসেছে এবং সেটা সম্ভবত সেই প্রাণীদের থেকে আসা যাদের সাহচর্যে তারা বাস করে।

একটি বেড়ালকে গোসল করানো হচ্ছে

পোষা প্রাণীদের সংস্পর্শে থাকলে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংস্পর্শে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটা প্রশিক্ষণ পায় বলে গবেষকরা দাবি করছেন, প্রতীকী ছবি

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা গবেষকদের পরীক্ষাও একই কথা বলছে।

ইমিউনোলজিস্টদের (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ) একটা দল পরীক্ষা করে জানিয়েছে, আলপাইন খামারে বেড়ে ওঠা শিশুরা হাঁপানি, হে ফিভার এবং একজিমার মতো রোগ থেকে সুরক্ষিত। গরু পালন করা হয় ওই সব খামারে এবং তাদের মালিকদের বাড়িগুলো এসব খামারের কাছাকাছি।

শৈশবের প্রথমদিকে বাচ্চারা যত সংখ্যক পোষা প্রাণীর উপস্থিতিতে থেকেছে, তার সঙ্গে অ্যালার্জির ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে বলেও গবেষণায় দেখা গিয়েছে।

গবেষকদের মতে, সাত থেকে নয় বছর বয়সের শিশুর অ্যালার্জির ঝুঁকি তাদের জীবনের প্রথম বছরগুলোতে বাড়িতে উপস্থিত পোষা প্রাণীর সংখ্যার সাথে আনুপাতিকভাবে হ্রাস পায়। একে ‘মিনি-ফার্ম এফেক্ট’ বলা হয়।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান দিয়েগোর অধ্যাপক জ্যাক গিলবার্ট আমিশ সম্প্রদায়ের ওপর চালানো ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

তার কথায়, “এটা কোনো সার্বজনীন নিরাময় নয়। যখনই আমি এই বিষয় নিয়ে কোথাও বিষয়ে বক্তৃতা দিই, কেউ না কেউ বলে ওঠে- আমি খামারে বড় হয়েছি, আমার অ্যালার্জি হয়েছে।”

“কিন্তু আমরা দেখেছি, আপনি যদি খামারের প্রাণীদের সঙ্গে মেলামেশা করে বেড়ে ওঠেন, তাহলে আপনার অ্যাজমা বা অ্যালার্জি হওয়ার শঙ্কা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। এমন কি আপনি যদি একটা কুকুরের সঙ্গে বড় হন তাহলে বা অ্যালার্জির ঝুঁকি ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ কমে যায়।”

মি. গিলবার্ট ‘আমেরিকান গাট প্রজেক্ট’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এটা একটা নাগরিক বিজ্ঞান প্রকল্প যা আমাদের জীবনধারা কীভাবে মাইক্রোবায়োমকে প্রভাবিত করে, সেই বিষয়ে নিয়ে গবেষণা করে।

চলতি বছরের সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত একটা নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, জিনগতভাবে একজিমার প্রবণতা রয়েছে এমন শিশুর বাড়িতে কুকুর পোষা হলে তা ওই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার জনের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যাদের মধ্যে ‘ইন্টারলিউকিন -সেভেন রিসেপ্টর’ বা ‘আইএল – সেভেন আর’ (যাকে একজিমার জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে ধরা হয়) উপস্থিত, তারা যদি শৈশবের প্রথম দুই বছরে বাড়ির কুকুরের সঙ্গে কাটায় তাহলে তাদের মধ্যে একজিমার ঝুঁকি কমতে পারে।

ইমিউন সেল ফাংশন এবং প্রদাহের সঙ্গে সম্পর্কিত জিনের একটা নির্দিষ্ট রূপ ‘আইএল-সেভেন আর’।

ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে যে কুকুরের ‘মলিকিউলার সিগন্যাল’ বা আণবিক সংকেত ত্বকের প্রদাহকে দমন করতে পারে।

তবে গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যাদের ইতোমধ্যে একজিমা রয়েছে, তাদের নতুনভাবে কুকুরের সাহচর্যে রাখলে, রোগের লক্ষণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একটি কুকের মুখের সঙ্গে গাল লাগিয়ে হাসছে একটি মেয়ে শিশু, তার মাথায় কোঁকড়ানো চুল

পোষা প্রাণীর উপস্থিতি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা- প্রতীকী ছবি

প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা

আমিশ সম্প্রদায়ের রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর শৈশবে প্রাণীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সম্ভাব্য প্রভাব অনেকের কাছেই আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি পোষা প্রাণী নতুন “প্রোবায়োটিক” (উপকারী ব্যাকরেটিয়ার মতো কাজ করে) কি না- এই প্রশ্ন তুলে নিউ ইয়র্ক টাইমস নিবন্ধও প্রকাশ করেছে।

তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াচ্ছে?

সম্ভবত এবং আশ্চর্যজনকভাবে আমরা যখন পোষা প্রাণীদের আদর করি বা তাদের সাহচর্যে থাকি, তখন ওই প্রাণীর লোম বা পাঞ্জা থেকে তাদের শরীরে থাকা মাইক্রোব আমাদের ত্বকে এসে পৌঁছায়। অস্থায়ীভাবে হলেও, তা থাকে।

তাই বলা যেতে পারে ওই প্রাণীদের শরীরে থাকা পরজীবীরা আমাদের মাইক্রোবায়োম-এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

মাইক্রোবদের এই বড়সড় বসতি আমাদের ত্বকে, মুখের ভেতরে এমনকি অন্ত্রেও বাস করে এবং আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক নাসিয়া সাফদারের মতে, পোষা প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের রোগ প্রতিরোধের সম্পর্কের ধারণা পেট ফুড ইন্ডাস্ট্রির (যারা প্রাণীদের জন্য খাবার প্রস্তুত করে) আগ্রহ জাগাতে পারে।

কুকুর ও বিড়ালের মধ্যে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে পারে এমন খাবারকে বাজারজাত পণ্য হিসেবে তৈরি করা এবং তার প্রচার করার কথা ভাবতে পারে পেট ফুড ইন্ডাস্ট্রি। পোষা প্রাণীর দেহে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া যাতে পোষ্যের মালিকের দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে সেই ভাবনার ওপর জোর দিতে পারে তারা।

অধ্যাপক সফদার বলেছেন, “এই দৃষ্টিভঙ্গিটা ফান্ডিংয়ের দিক থেকে অনেকের নজর কেড়েছে, কারণ আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই মানুষের শারীরিক অবস্থার বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে।”

“তাহলে এতে প্রাণীর কী ভূমিকা থাকতে পারে?”

এই বিষয়ে তিনি একটা পরীক্ষা চালানোর কথা ভাবছেন, যেখানে পোষা প্রাণী এবং তাদের মালিক যখন একাধিকবার পশুচিকিৎসকের কাছে আসবেন, তখন তাদের দুজনেরই মলের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তারপর পরীক্ষা করে দেখতে হবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দু’জনের অন্ত্রে উপস্থিত মাইক্রোবায়োমের মধ্যে মিল পাওয়া যায় কি না।

তিনি দেখতে চান, দু’জনের শরীরে একই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি শনাক্ত করা যায় কি না যাতে স্বাস্থ্যগত সুবিধা মিলতে পারে।

তবে, কুকুর, বিড়াল বা অন্য প্রাণীর জীবাণু আমাদের মাইক্রোবায়োমে অন্তর্ভুক্ত করার ধারণা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদেরই একজন অধ্যাপক গিলবার্ট।

তিনি বলেন, “এর কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। আমরা সত্যিই আমাদের ত্বকে, মুখে বা অন্ত্রে কুকুরের দেহ থেকে আসাকে ব্যাকটেরিয়ার দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকতে দেখি না। তারা থেকে যায় না।”

তবে অধ্যাপক নাসিয়া সফদর জানিয়েছেন তিনি এখনো মনে করেন ওই গবেষণা সার্থক হতে পারে। তার মতে, অন্ত্রে উপস্থিত মাইক্রোবের পোষা প্রাণী থেকে তাদের মালিকদের দেহে এবং মানবদেহ থেকে প্রাণীর দেহে স্থানান্তরের বিষয়টা প্রশংসার যোগ্য।

তার কথায়, “এই বিষয়ে গবেষণা মূল্যবান এবং এখনো এই নিয়ে নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হয়নি।”

কাদামাটিতে বসে আছে একটি কুকুর

পোষা প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে মাইক্রোব স্থানান্তরিত হতে পারে-প্রতীকী ছবি

অধ্যাপক গিলবার্ট একটা অন্য তত্ত্ব উল্লেখ করেছেন।

তার তত্ত্ব হলো যেহেতু আমাদের পূর্বপুরুষরা বিভিন্ন প্রজাতির পশুকে পালন করতো তাই আমাদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা প্রাণীদের বয়ে আনা বহন মাইক্রোব দ্বারা উদ্দীপিত হওয়ার জন্য বিকশিত হয়েছে। তবে এই মাইক্রোব স্থায়ীভাবে মানবশরীরে থাকে না।

কিন্তু আমাদের প্রতিরোধক কোষগুলো ওই পরিচিত সংকেতকে শনাক্ত করতে পারে যা পরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করে।

মি. গিলবার্ট বলেন, “বহু সহস্রাব্দ ধরে মানুষের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা কুকুর, ঘোড়া ও গরুর ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আর তাই তারা যখন সেই একই জিনিস শনাক্ত করে, তখন তা উপকারী প্রতিরোধক ক্ষমতার বিকাশকে উদ্দীপিত করে তোলে। তারা (ইমিউন সিস্টেম) বুঝতে পারে কী করতে হবে।”

গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে পরিবারে পোষ্য প্রাণী রয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের অন্ত্রে উপস্থিত মাইক্রোবায়োমের মধ্যে মিল রয়েছে।

মি. গিলবার্ট ব্যাখ্যা করেছেন, ওই প্রাণী সম্ভবত তার মালিকদের মধ্যে ‘হিউম্যান মাইক্রোব’ স্থানান্তর করার বিষয়ে বাহকের কাজ করেছে।

একইসঙ্গে, পোষা প্রাণীর নিজেদের মাইক্রোবায়মের নিয়মিত সংস্পর্শ তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করে তোলে।

পাশাপাশি, অন্ত্রে এবং ত্বকে মাইক্রোবায়োমকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করতে, সংক্রামক জীবাণু রুখতে এবং উপকারী ব্যাকটিরিয়াকেও উদ্দীপিত করে।

গোলাপী জামা পরা একটি মেয়ে শিশুর কোলে একটি বিড়াল

যারা শৈশবের প্রথম দিকে পোষা প্রাণীর সান্নিধ্যে থেকেছে তাদের মধ্যে অ্যালার্জি, একজিমার মতো রোগ হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম বলে দেখা গিয়েছে- প্রতীকী ছবি

প্রাচীন মাইক্রোব

পশুপ্রেমীদের জন্য একটা মস্ত সুখবর হলো আরও অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে যে পোষ্য প্রাণীদের সাহচর্য মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ভালো।

আমিশ এবং হুটেরাইটসের ওপর চালানো ওই গবেষণার বিষয়ে জানার পর ফার্গুস শানাহান ‘আইরিশ ট্র্যাভেলারস’দের ওপর নিজে গবেষণা করেন। আইরিশ ট্র্যাভেলারস একটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা সীমাবদ্ধ জায়গায় বাস করে। তারা কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে ঘোড়া, ফেরেটসহ বিভিন্ন প্রাণী পোষে।

অধ্যাপক শানাহান তাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমগুলোর সিকোয়েন্সিং করেছেন এবং তার সাথে তুলনা করেছেন সেই আইরিশ ব্যাক্তিদের যারা আজ আরও আধুনিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করেন।

পাশাপাশি ফিজি, মাদাগাস্কার, মঙ্গোলিয়া, পেরু এবং তানজানিয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাইক্রোবায়োমেরও সিকোয়েন্সিং-এরও তুলনা করেছেন যারা এখনো আমাদের শিকারী পূর্বপুরুষদের কাছাকাছি জীবনযাপন করে।

তিনি আবিষ্কার করেন আইরিশ ট্রাভেলারদের মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে আদিবাসী গোষ্ঠীর মাইক্রোবায়োমের বেশি মিল রয়েছে। তাদের মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে প্রাক-শিল্পায়িত বিশ্বের মানুষের (প্রাচীন গুহা থেকে পাওয়া প্রাচীন মলের সংরক্ষিত নমুনা সংগ্রহ করে তার গবেষণার মাধ্যমে) মাইক্রোবায়োমের মিল রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তার কথায়, “আইরিশ ট্র্যাভেলারস স্পম্প্রদায়ের মানুষেরা একটা প্রাচীন মাইক্রোবায়োম ধরে রাখতে পেরেছেন। তানজানিয়ার উপজাতি (যারা এখনো শিকারী) বা মঙ্গোলিয়ান ঘোড়সওয়ারদের (পালিত পশুদের কাছাকাছি ইয়ার্টে বাস করে) মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে তার মিল রয়েছে।”

অধ্যাপক শানাহান মনে করেন যে এটা আইরিশ ট্র্যাভেলারসদের মধ্যে অটোইমিউন রোগের নিম্ন হারকে ব্যাখ্যা করতে পারে।

সাম্প্রতিক দশকে প্রদাহজনক পেটের রোগ, ক্রোহন ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, মাল্টিপল স্কলেরোসিস-এর মতো রোগ প্রায়শই দেখা যায়।

তিনি বলেছেন, “এর মানে এটা নয়, যে তাদের স্বাস্থ্য ভালো। বসতি স্থাপনকারী সম্প্রদায়ের চেয়ে আইরিশ ট্র্যাভেলারদের মৃত্যু হচ্ছে অনেক আগে। তবে দারিদ্র্য, প্রান্তিকতা এবং তাদের সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মদ্যপান, আত্মহত্যার কারণে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া দুর্ঘটনাও রয়েছে।”

“কিন্তু একজন আইরিশ রিউম্যাটোলজিস্টের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন যে তারা সেখানে সিস্টেমিক লুপাস (এক প্রকার অটোইমিউন রোগ) রয়েছে এমন কাউকে দেখেছেন কি না। উত্তর হবে- না। তারা কখনো দেখেননি।”

একজন পুরুষের নাক চাটছে একটি ওয়ালের ওপ দাঁড়িয়ে থাকা একটি কুকুর, কুকুরটির গলায় দড়ি পরানো একটি দড়ির শেষ মাথা লোকটির হাতে ধরা

একাধিক গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে পোষ্য প্রাণীদের সাহচর্য মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য উপকারী-প্রতীকী ছবি

গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখতে চাইছেন, বিভিন্ন উপায়ে প্রাণীদের আমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে কি না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অবাঞ্ছিত কুকুরকে পুনর্বাসনের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের সংস্পর্শে এনে দেখতে চেয়েছেন তাদের উপস্থিতি মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে কি না।

ইতালির একদল গবেষক একটা শিক্ষামূলক খামার তৈরি করেছিল যেখানে পোষা প্রাণী নেই এমন পরিবারের শিশুরা নিয়মিত অন্যদের তত্ত্বাবধানে ঘোড়া পুষতে পারে। দেখা গিয়েছিল, খামারে আসা শিশুদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম আরও উপকারী মেটাবোলাইটস (বিপাক) উৎপাদন করা শুরু করেছে।

অধ্যাপক গিলবার্ট জানিয়েছেন শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার এটা একটা সম্ভাব্য উপায় হতে পারে।

তার কথায়, “আপনি যদি আরও বেশি ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসেন তবে তা আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নানাভাবে স্টিমুলেট করবে। এর ফলে আপনার ত্বক এবং আপনার অন্ত্রে থাকা মাইক্রোব নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও উন্নত হতে পারে।”

“কিন্তু আপনার দেহে প্রাণী ব্যাকটেরিয়ার বসতি তৈরি হওয়া সম্ভব নয়।”

গবেষকরা জানিয়েছেন সারা জীবন পোষা প্রাণীর সাহচর্যে থাকলে তা অন্যান্য উপায়েও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে মাইক্রোবায়ামের মিথস্ক্রিয়াকে সহজতর করে তুলতে পারে।

এই প্রসঙ্গে একটা ছোট উদাহরণ দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্কের মাইক্রোবায়োম কেন্দ্রিক গবেষণা কেন্দ্র ‘এপিসি মাইক্রোবায়োম আয়ারল্যান্ডের ইমিউনোলজি’র অধ্যাপক লিয়াম ওমাহোনি।

তার কথায়, “আপনার বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে আপনি বাইরে যাবেন, হাঁটাহাঁটি করবেন। এইভাবে আপনি পার্কে বা মাটিতে থাকা মাইক্রোবের সংস্পর্শে আসতে পারেন। এটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।”

বিবিসি নিউজ বাংলা