মেনিনজিওমা টিউমারের জটিলতা এখন নতুনভাবে বোঝা যাচ্ছে
মস্তিষ্কের সবচেয়ে সাধারণ টিউমার মেনিনজিওমা সাধারণত তিনটি ধাপে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়—ধীরগতির, মধ্যম ও আক্রমণাত্মক। কিন্তু সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক গবেষণা জানাচ্ছে, কেবল টিউমারের চেহারা দেখে এর প্রকৃতি নির্ধারণ করা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, টেলোমেরেজ রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ (TERT) নামের একটি জিন সক্রিয় থাকলে টিউমারটি দেখতে নিরীহ হলেও দ্রুত ফিরে আসতে পারে। ১ সেপ্টেম্বর ল্যানসেট অনকোলজি-তে প্রকাশিত এই গবেষণাটি মেনিনজিওমা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ধারা পরিবর্তন করতে পারে।
“TERT” জিনের সক্রিয়তা: বিপদের ইঙ্গিত
মেনিনজিওমা মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডকে ঘিরে থাকা প্রতিরক্ষামূলক ঝিল্লি থেকে তৈরি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি অক্ষতিকর ধরা হয়। কিন্তু কিছু টিউমারে TERT জিনে মিউটেশন দেখা যায়, যা দ্রুত বৃদ্ধি ও চিকিৎসার পর পুনরুত্থানের সঙ্গে যুক্ত।
TERT হলো টেলোমেরেজ নামের এক এনজাইমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ক্রোমোজোমের প্রান্তে থাকা টেলোমিয়ার রক্ষা করে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ কোষে এই জিন নিষ্ক্রিয় থাকে। কিন্তু যখন এটি পুনরায় সক্রিয় হয়, তখন কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি শুরু হয়—যা ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
গবেষণার ফলাফল: নতুন ধরণের জিনগত ঝুঁকি
মায়ো ক্লিনিকসহ কানাডা, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা ১,২০০-এরও বেশি মেনিনজিওমা নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ টিউমারে উচ্চ TERT কার্যকলাপ থাকলেও কোনো জিনগত মিউটেশন ছিল না।
এই রোগীদের মধ্যে টিউমার আগেভাগেই পুনরায় ফিরে আসে, যদিও পূর্ণ মিউটেশনযুক্ত রোগীদের তুলনায় তাদের অবস্থা কিছুটা ভালো ছিল।
গবেষণার সিনিয়র লেখক ডা. গেলারেহ জাদেহ বলেন,
“TERT-পজিটিভ টিউমারগুলো যেন তাদের আসল শ্রেণির চেয়ে এক ধাপ বেশি গুরুতর আচরণ করছিল। যেমন, গ্রেড-১ টিউমারটি বাস্তবে গ্রেড-২-এর মতো আচরণ করছিল।”
চিকিৎসা পরিকল্পনায় নতুন দিকনির্দেশ
গবেষকেরা বলছেন, TERT পরীক্ষার মাধ্যমে আগেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে কোন রোগীর টিউমার দ্রুত ফিরে আসতে পারে। ফলে চিকিৎসকরা এমন রোগীদের ঘন ঘন পর্যবেক্ষণ বা আরও আগ্রাসী চিকিৎসা দিতে পারবেন।
ডা. জাদেহ আরও বলেন,
“যেহেতু মেনিনজিওমা সবচেয়ে সাধারণ প্রাথমিক মস্তিষ্কের টিউমার, তাই এই জিনগত সূচক বিশ্বব্যাপী হাজারো রোগীর চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় নতুন দিক নির্দেশ করতে পারে।”
গবেষণার প্রধান লেখক ও টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি রেসিডেন্ট ডা. ক্লোয়ি গুই বলেন,
“TERT-এর উপস্থিতি আমাদেরকে আগ্রাসী মেনিনজিওমা রোগী সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। এর ফলে চিকিৎসা নির্ধারণ করা যাবে টিউমারের প্রকৃতি অনুযায়ী।”
ভবিষ্যৎ দিক ও ‘প্রিকিউর’ উদ্যোগ
গবেষক দল এখন কাজ করছে, কিভাবে TERT পরীক্ষাকে নিয়মিত ক্লিনিক্যাল প্রক্রিয়ার অংশ করা যায়। এটি মায়ো ক্লিনিকের Precure Initiative-এর অংশ, যার মূল লক্ষ্য হলো রোগের জৈবিক পরিবর্তন আগেভাগে শনাক্ত করে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এই নতুন জিনগত সূচক ভবিষ্যতে মেনিনজিওমা চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু রোগের প্রকৃতি বোঝাতেই নয়, রোগীর জীবনরক্ষায় দ্রুত ও লক্ষ্যভিত্তিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরিতেও এটি কার্যকর সহায়ক হতে পারে।