ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গিভির গাজায় পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান পুনরায় শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এই দাবি আসে এমন সময়, যখন ইসরায়েল সরকার অভিযোগ করেছে যে হামাস সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ ও গাজায় উত্তেজনা
রবিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানায়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ এলাকায় হামাস যোদ্ধারা একটি অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং ইসরায়েলি সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এর জবাবে ইসরায়েল কয়েকটি বিমান হামলা চালায়, যেগুলোকে তারা “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু” বলে অভিহিত করেছে।
বেন গিভির এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছি—গাজা উপত্যকায় পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দিন। হামাস তার আচরণ বদলাবে বা কোনো চুক্তি মানবে—এই বিভ্রান্তিকর বিশ্বাস আমাদের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। এই নাৎসি-সন্ত্রাসী সংগঠনটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে হবে—যত দ্রুত সম্ভব।”
অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও জিম্মি বিনিময়
চলতি অক্টোবরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস একটি ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অধীনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।চুক্তির প্রথম ধাপে বলা হয়, হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, বিনিময়ে ইসরায়েলও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে।
সোমবার হামাস শেষ ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেয় এবং আরও ১২ জনের মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করে। সংগঠনটি জানায়, তারা চুক্তির সব শর্ত পূরণ করেছে; তবে গাজার ধ্বংসস্তূপ ও কিছু এলাকায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকায় সব মৃতদেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে ইসরায়েল অভিযোগ করে, হামাস এখনো ১৬ জন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেয়নি এবং যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে। দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে।
নেতানিয়াহুর নির্দেশ ও নতুন সামরিক পদক্ষেপ
রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানান, গাজায় “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে কঠোর পদক্ষেপ” নিতে আইডিএফকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এটি পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করা হবে কিনা—সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
হামাসের প্রতিক্রিয়া ও দায় অস্বীকার
অন্যদিকে সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা ইজজাত আল-রিশেক রবিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “হামাস এখনো যুদ্ধবিরতিতে অটল। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং তাদের অপরাধের জন্য অজুহাত খুঁজছে।”
হামাসের সামরিক শাখা জানায়, রাফাহ অঞ্চলের ঘটনাটির সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা জানায়, মার্চ মাসে ওই এলাকার কিছু স্বাধীন গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “রাফাহে কোনো সংঘর্ষ বা ঘটনা সম্পর্কে আমাদের কোনো তথ্য নেই; ওই এলাকা ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
ইসরায়েলি নেতৃত্বের কড়া অবস্থান ও হামাসের দায় অস্বীকারের পর গাজায় পুনরায় সংঘাত শুরু হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে কি না—এ নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, যা পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।