রাশিয়ার প্রধান দুটি তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকওইলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে ৩ শতাংশের বেশি। ভারতের তেল পরিশোধন কোম্পানিগুলো রুশ তেল কেনা পুনর্বিবেচনা শুরু করায় বাজারে নতুন অনিশ্চয়তা ও সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞায় বাজারে অস্থিরতা
মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য—রাশিয়ার যুদ্ধ তহবিল বন্ধ করা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের এই পদক্ষেপে রাশিয়ার তেল রাজস্ব কমানোর পাশাপাশি বিশ্ববাজারে সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, বৃহস্পতিবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২.১২ ডলার বেড়ে ৬৪.৭১ ডলারে পৌঁছায়, আর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬০.৫৯ ডলারে—যা ৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

ভারতীয় ক্রেতাদের দ্বিধা
ভারতের পরিশোধন কোম্পানিগুলো নতুন নিষেধাজ্ঞার পর রুশ তেল আমদানি সীমিত করার পরিকল্পনা করছে। শিল্পসূত্র জানায়, ভারতের বেসরকারি কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ—যা রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা—রুশ তেল আমদানি কমানো বা বন্ধ করার কথা ভাবছে।
২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে ভারত ছাড়মূল্যে তেল আমদানির বড় বাজারে পরিণত হয়। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশটি প্রতিদিন গড়ে ১.৭ মিলিয়ন ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছে।
যদিও ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত পরিশোধনাগারগুলো সাধারণত রসনেফট বা লুকওইলের কাছ থেকে সরাসরি কেনে না, বরং মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে কেনাবেচা সম্পন্ন করে থাকে।
বিশ্লেষকদের মন্তব্য: ‘অস্থায়ী প্রতিক্রিয়া, কাঠামোগত পরিবর্তন নয়’
বিশ্লেষকদের মতে, এই তেলের দাম বৃদ্ধি মূলত বাজারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, কাঠামোগত পরিবর্তন নয়। রাইস্ট্যাড এনার্জির বিশ্লেষক ক্লদিও গালিমবার্তি বলেন, “গত তিন বছরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বহু নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলেও দেশটির উৎপাদন ও আয়ে তেমন কোনো বড় প্রভাব পড়েনি।”
তিনি আরও বলেন, “ভারত ও চীনের কিছু ক্রেতা এখনো রুশ তেল কিনছে, তাই সরবরাহে বড় পরিবর্তন ঘটবে না। তবে স্বল্পমেয়াদে বাজারের মনোভাবই দাম বাড়িয়েছে।”

তেলের দাম নির্ধারণে আগাম প্রভাবক
বাজার এখন নজর রাখছে তিনটি বিষয়ের ওপর—
- ওপেক প্লাস দেশগুলোর উৎপাদন সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়া,
- চীনের কাঁচা তেল মজুদ নীতি,
- ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি।
গালিমবার্তির মতে, “এই তিনটি উপাদান নভেম্বরে বৈশ্বিক তেলের মূলধারাকে প্রভাবিত করবে।”
নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শুধু ভূ-রাজনৈতিক চাপই নয়, বরং বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলছে। ভারত যদি সত্যিই রুশ তেল কেনা কমায়, তবে এশীয় বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের চাহিদা বাড়তে পারে—ফলে আটলান্টিক অঞ্চলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
#
রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, তেলবাজার, নিষেধাজ্ঞা, রসনেফট, লুকওইল, জ্বালানি সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধ, সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















