নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা এক তরুণ, যিনি একসময় নিজের হাইতীয় পরিচয় লুকাতে চেয়েছিলেন, এখন সেই ঐতিহ্যই তাঁর শিল্পজীবনের কেন্দ্রবিন্দু। প্যাট্রিক ইউজিনের তেলচিত্রে প্রতিফলিত হয় হাইতির মানুষ, সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদার এক উজ্জ্বল গল্প—যা এবার প্রদর্শিত হবে আর্ট বাসেল প্যারিসে।
শৈশবের লজ্জা থেকে গর্বের যাত্রা
১৯৮০ ও ৯০—এর দশকে নিউইয়র্কে বড় হওয়া প্যাট্রিক ইউজিনের কাছে হাইতীয় পরিচয় ছিল একসময় বিব্রতকর বিষয়। তাঁর মা মাত্র ১২ বছর বয়সে হাইতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ভাষা ও পোশাকের কারণে বৈষম্যের শিকার হন। সন্তান হিসেবে ইউজিনও নিজেকে সেই অভিজ্ঞতা থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন, নিজের শিকড় আড়াল করতে চেষ্টা করেছিলেন।
তবে উচ্চবিদ্যালয়ে এক হাইতীয় ছাত্রসংগঠনে যোগ দেওয়ার পর তিনি নিজের পরিচয়ের প্রতি নতুন করে গর্ববোধ করতে শুরু করেন। স্কুলে হাইতির পতাকা গায়ে জড়িয়ে যাওয়া, পরে স্ত্রীসহ হাইতি সফরে গিয়ে দেশটির মানুষ ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয় তাঁর।

“তাদের আত্মসম্মান, সৌন্দর্য ও আত্মবিশ্বাস—এসবই আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে,” বলেন ইউজিন।
অভিবাসী জীবনের প্রতিচ্ছবি তাঁর শিল্পে
বর্তমানে প্যাট্রিক ইউজিনের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে মারিয়েন ইব্রাহিম গ্যালারিতে, যা আর্ট বাসেল প্যারিসের অংশ। তাঁর শিল্পে ফুটে ওঠে হাইতীয় ও হাইতীয়-আমেরিকান জীবনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো—নিঃশব্দ ধ্যান, একাকিত্বে প্রশান্তি, আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান।
তিনি বলেন, “বিশ্বে হাইতির মানুষ এখন নানা সংকটে—গ্যাং সহিংসতা, অভিবাসনবিরোধী নীতি, খাদ্যসংকট—তবুও তাদের শক্তি, ভালোবাসা ও সহনশীলতাই আমার অনুপ্রেরণা।”
মা ও দাদির প্রতি শ্রদ্ধা
ইউজিনের প্রায় সব চিত্রেই থাকে ফুল বা উদ্ভিদের প্রতীক—এ তাঁর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, যিনি বাগান ভালোবাসতেন। তাঁর দাদি ওয়াল স্ট্রিটে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করে জীবনের সঞ্চয়ে হাইতিতে একটি বাড়ি কিনেছিলেন; সবসময় মুক্তার হার পরতেন, যা ইউজিনের কাছে সৌন্দর্যের চিরন্তন প্রতীক।

“আমি আমার পূর্বপুরুষদের শক্তি থেকে শিখেছি বিপর্যয়েও কীভাবে মর্যাদা ধরে রাখতে হয়,” বলেন তিনি।
দর্শকের হৃদয়ে সংযোগ
প্যারিসের জে.কে. প্লেস হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার রিকার্ডো অরটোনি ইউজিনের একটি চিত্র ‘ননম চিতা’ দেখে মুগ্ধ হন। সেই চিত্রে এক গভীর-চিন্তামগ্ন মানুষ—যার দৃষ্টিতে তিনি নিজের পূর্বপুরুষদের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পান। তিনি বলেন, “আমি সেই চোখে স্থিতিশীলতা দেখি, দেখি আশার আলো।”
ডিওরের সঙ্গে সহযোগিতা: শিল্প ও ফ্যাশনের মেলবন্ধন
ইউজিনের কাজ এবার ছুঁয়ে গেছে ফ্যাশনের জগতেও। ফরাসি ফ্যাশন হাউস ডিওরের আমন্ত্রণে তিনি তৈরি করেছেন তিনটি লেডি ডিওর (Lady Dior) ব্যাগ, যেগুলো হাইতির প্রকৃতি ও রঙ থেকে অনুপ্রাণিত। তিনি এগুলোর নাম দিয়েছেন ‘পার্ল অব দ্য অ্যান্টিলস’—হাইতির পুরোনো উপনাম অনুসারে।
ব্যাগগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে হাইতির লাল-সবুজ-বাদামি উষ্ণ রঙ, রাফিয়া, সোনালি উপাদান, লেইস ও মুক্তা—যা দ্বীপের প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
শিল্পের মাধ্যমে পরিচয়ের পুনর্নির্মাণ
তেলচিত্র থেকে ভাস্কর্য, কোলাজ থেকে ফটোগ্রাফি—প্যাট্রিক ইউজিনের শিল্পচর্চা বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক। তবুও এক জিনিসে তিনি অনড়: তাঁর জনগণ ও ঐতিহ্যকে সম্মান জানানো।

“মাধ্যম যাই হোক আমার প্রতিটি সৃষ্টিই হাইতির মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন,” বলেন এই শিল্পী।
#হাইতি, #শিল্প, #প্যাট্রিক ইউজিন, #আর্ট বাসেল প্যারিস,# ডিওর,# সংস্কৃতি,# সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















