১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৪) পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা

সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক নবজাগরণ— এক ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে বিশ্ব পর্যটনের নতুন কেন্দ্র

সৌদির নতুন চেহারা: তেল থেকে পর্যটন

দীর্ঘদিন ধরে তেল ও মরুভূমির দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব এখন নিজেকে বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটি প্রায় ৬ কোটি পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যাদের ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল। গত বছরের তুলনায় এটি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি, যা দেশটির দ্রুত উত্থানের প্রমাণ।


ভিশন ২০৩০: অর্থনীতির বৈচিত্র্য আনতে বড় পরিকল্পনা

সৌদি সরকারের ‘ভিশন ২০৩০’ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনীতিকে তেলনির্ভরতা থেকে মুক্ত করে পর্যটন, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিনির্ভর খাতে রূপান্তর করা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশটি আগামী দশকে পর্যটন খাতে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটনের অবদান ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত তিন বছরেই সরকার ৩,৫০০টির বেশি পর্যটন বিনিয়োগ লাইসেন্স অনুমোদন করেছে— যা দেশটির নতুন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের স্পষ্ট ইঙ্গিত।


ই-ভিসা ব্যবস্থায় সহজ ভ্রমণ

২০১৯ সালে চালু হওয়া সৌদি আরবের ই-ভিসা ব্যবস্থা দেশটির পর্যটন বিপ্লবের অন্যতম চালিকাশক্তি। এই ডিজিটাল ভিসা ব্যবস্থা বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করেছে। ফলে অকল্যান্ড থেকে শুরু করে আন্ডারলেখট পর্যন্ত বিশ্বের নানা প্রান্তের ভ্রমণপিপাসুরা এখন সৌদি আরবের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অনাবিষ্কৃত স্থানগুলো ঘুরে দেখছেন।


ঐতিহ্যের ভাণ্ডার: সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন

সৌদি আরবের পর্যটন আকর্ষণের মূলভিত্তি হলো এর সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও হাজার বছরের ইতিহাস। নিচে কিছু বিখ্যাত স্থান উল্লেখ করা হলো, যা পর্যটকদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়—

  • আত-তুরাইফ জেলা, আড-দিরিয়াহ:
    রিয়াদের কাছাকাছি অবস্থিত এই ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানটি সৌদি রাষ্ট্রের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও সংস্কৃতির বিবর্তনের এক অনন্য নিদর্শন এটি।
  • হেগরা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, আলউলা:
    আরব উপদ্বীপের অন্যতম প্রাচীন শহর হেগরা তার শিলাকাটা সমাধি ও ধ্বংসাবশেষের জন্য বিখ্যাত। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এটি এক অবশ্যদর্শন স্থান।
  • হাইলের প্রাচীন শিলাচিত্র:
    হাজার বছরের পুরনো এই চিত্রশিল্প আরব উপদ্বীপের প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতি সম্পর্কে অমূল্য ধারণা দেয়।
  • ঐতিহাসিক জেদ্দা:
    লাল সাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরটি তার প্রাচীন প্রবালপাথরের ঘর ও ব্যস্ত বাজারের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি একদিকে যেমন ঐতিহ্যের প্রতীক, অন্যদিকে আধুনিক সৌদির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
  • আল আহসা মরূদ্যান:
    বিশ্বের বৃহত্তম খেজুরবাগান হিসেবে পরিচিত আল আহসা পূর্বাঞ্চলের সবুজ মরূদ্যান। প্রকৃতি ও ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এটি এক স্বর্গীয় স্থান।


বিনিয়োগ ও ব্যবসার সুবর্ণ সুযোগ

পর্যটনের এই উত্থান কেবল সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্যও বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। দেশটিতে দ্রুতগতিতে নতুন হোটেল, রিসোর্ট ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠছে, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করছে।

বিভিন্ন বিদেশি বিনিয়োগকারী সৌদি বাজারে প্রবেশ করছে— বিলাসবহুল হোটেল, রিটেইল স্টোর থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক প্রকল্প পর্যন্ত। ব্যবসার সহজ পরিবেশ এবং সরকারপ্রদত্ত প্রণোদনা সৌদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বিনিয়োগবান্ধব গন্তব্যে পরিণত করছে।


ভবিষ্যতের পথে: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন

সৌদি আরবের পর্যটন খাতের এই দ্রুত উন্নয়ন দেশটির ঐতিহ্য রক্ষা ও আধুনিক উন্নয়নের এক চমৎকার ভারসাম্য। অব্যাহত বিনিয়োগ, নতুন অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ফলে দেশটি আগামী দশকে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে প্রধান অবস্থান দখল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এখন সৌদি আরব কেবল ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ধর্মীয় স্থান নয়, বরং আধুনিক উদ্ভাবন, উষ্ণ আতিথেয়তা এবং অর্থনৈতিক সুযোগের কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠছে, যা বিশ্ব ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুতি দেয়।


#ট্যাগ
#সৌদিআরব #ভিশন২০৩০ #পর্যটন #অর্থনীতি #বিনিয়োগ #সংস্কৃতি #ইতিহাস #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭)

সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক নবজাগরণ— এক ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে বিশ্ব পর্যটনের নতুন কেন্দ্র

০২:২৭:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

সৌদির নতুন চেহারা: তেল থেকে পর্যটন

দীর্ঘদিন ধরে তেল ও মরুভূমির দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব এখন নিজেকে বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটি প্রায় ৬ কোটি পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যাদের ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল। গত বছরের তুলনায় এটি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি, যা দেশটির দ্রুত উত্থানের প্রমাণ।


ভিশন ২০৩০: অর্থনীতির বৈচিত্র্য আনতে বড় পরিকল্পনা

সৌদি সরকারের ‘ভিশন ২০৩০’ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনীতিকে তেলনির্ভরতা থেকে মুক্ত করে পর্যটন, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিনির্ভর খাতে রূপান্তর করা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশটি আগামী দশকে পর্যটন খাতে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটনের অবদান ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত তিন বছরেই সরকার ৩,৫০০টির বেশি পর্যটন বিনিয়োগ লাইসেন্স অনুমোদন করেছে— যা দেশটির নতুন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের স্পষ্ট ইঙ্গিত।


ই-ভিসা ব্যবস্থায় সহজ ভ্রমণ

২০১৯ সালে চালু হওয়া সৌদি আরবের ই-ভিসা ব্যবস্থা দেশটির পর্যটন বিপ্লবের অন্যতম চালিকাশক্তি। এই ডিজিটাল ভিসা ব্যবস্থা বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করেছে। ফলে অকল্যান্ড থেকে শুরু করে আন্ডারলেখট পর্যন্ত বিশ্বের নানা প্রান্তের ভ্রমণপিপাসুরা এখন সৌদি আরবের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অনাবিষ্কৃত স্থানগুলো ঘুরে দেখছেন।


ঐতিহ্যের ভাণ্ডার: সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন

সৌদি আরবের পর্যটন আকর্ষণের মূলভিত্তি হলো এর সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও হাজার বছরের ইতিহাস। নিচে কিছু বিখ্যাত স্থান উল্লেখ করা হলো, যা পর্যটকদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়—

  • আত-তুরাইফ জেলা, আড-দিরিয়াহ:
    রিয়াদের কাছাকাছি অবস্থিত এই ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানটি সৌদি রাষ্ট্রের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও সংস্কৃতির বিবর্তনের এক অনন্য নিদর্শন এটি।
  • হেগরা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, আলউলা:
    আরব উপদ্বীপের অন্যতম প্রাচীন শহর হেগরা তার শিলাকাটা সমাধি ও ধ্বংসাবশেষের জন্য বিখ্যাত। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এটি এক অবশ্যদর্শন স্থান।
  • হাইলের প্রাচীন শিলাচিত্র:
    হাজার বছরের পুরনো এই চিত্রশিল্প আরব উপদ্বীপের প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতি সম্পর্কে অমূল্য ধারণা দেয়।
  • ঐতিহাসিক জেদ্দা:
    লাল সাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরটি তার প্রাচীন প্রবালপাথরের ঘর ও ব্যস্ত বাজারের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি একদিকে যেমন ঐতিহ্যের প্রতীক, অন্যদিকে আধুনিক সৌদির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
  • আল আহসা মরূদ্যান:
    বিশ্বের বৃহত্তম খেজুরবাগান হিসেবে পরিচিত আল আহসা পূর্বাঞ্চলের সবুজ মরূদ্যান। প্রকৃতি ও ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এটি এক স্বর্গীয় স্থান।


বিনিয়োগ ও ব্যবসার সুবর্ণ সুযোগ

পর্যটনের এই উত্থান কেবল সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্যও বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। দেশটিতে দ্রুতগতিতে নতুন হোটেল, রিসোর্ট ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠছে, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করছে।

বিভিন্ন বিদেশি বিনিয়োগকারী সৌদি বাজারে প্রবেশ করছে— বিলাসবহুল হোটেল, রিটেইল স্টোর থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক প্রকল্প পর্যন্ত। ব্যবসার সহজ পরিবেশ এবং সরকারপ্রদত্ত প্রণোদনা সৌদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বিনিয়োগবান্ধব গন্তব্যে পরিণত করছে।


ভবিষ্যতের পথে: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন

সৌদি আরবের পর্যটন খাতের এই দ্রুত উন্নয়ন দেশটির ঐতিহ্য রক্ষা ও আধুনিক উন্নয়নের এক চমৎকার ভারসাম্য। অব্যাহত বিনিয়োগ, নতুন অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ফলে দেশটি আগামী দশকে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে প্রধান অবস্থান দখল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এখন সৌদি আরব কেবল ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ধর্মীয় স্থান নয়, বরং আধুনিক উদ্ভাবন, উষ্ণ আতিথেয়তা এবং অর্থনৈতিক সুযোগের কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠছে, যা বিশ্ব ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুতি দেয়।


#ট্যাগ
#সৌদিআরব #ভিশন২০৩০ #পর্যটন #অর্থনীতি #বিনিয়োগ #সংস্কৃতি #ইতিহাস #সারাক্ষণ_রিপোর্ট