১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৪) পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা

চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারতের জন্য ছয় মাসের অব্যাহতি— যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে সাময়িক মুক্তি

ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা অব্যাহতি

ভারত ইরানের চাবাহার বন্দরের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে ছয় মাসের জন্য ছাড় পেয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়স্বাল এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ২৯ অক্টোবর থেকে এই অব্যাহতি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ভারত এখন পুনরায় আফগানিস্তানে খাদ্যশস্য, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি পণ্য পাঠাতে পারবে এই বন্দর দিয়ে।


চাবাহারের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সম্পর্ক

চাবাহার বন্দরের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন নয়। ২০০৫ সালে ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে ভারত প্রথমবারের মতো এই বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে উভয় দেশ শাহিদ বেহেশতি টার্মিনাল যৌথভাবে উন্নয়নের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (সমঝোতা স্মারক – MoU) স্বাক্ষর করে। সেই সময় ভারতের লক্ষ্য ছিল মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ার বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার পাওয়া, পাশাপাশি আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা।


ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ও জটিলতা

২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে চাবাহার প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কারণ, এই প্রকল্পে যুক্ত থাকা যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইরান ফ্রিডম অ্যান্ড কাউন্টার-প্রোলিফারেশন অ্যাক্ট’-এর আওতায় নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারতেন।

তবে একই বছর ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের চাবাহার কার্যক্রমের জন্য একটি বিশেষ ছাড় দেয়, কারণ বন্দরটি আফগানিস্তানের মানবিক সহায়তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


আফগানিস্তানে সরবরাহের নতুন সুযোগ

সাম্প্রতিক মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে ভারত এখন আবারও চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে আফগানিস্তানে পণ্য পাঠাতে পারবে। এতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্যশস্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে।

চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ভারত মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান এবং ইউরোপের সঙ্গে নতুন সংযোগ স্থাপন করতে চায়। ফলে এই ছাড় ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধিতে বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।


কৌশলগত তাৎপর্য

চাবাহার বন্দরটি পাকিস্তানের গওয়াদর বন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত, যা চীনের সহায়তায় নির্মিত। তাই এই বন্দর কেবল অর্থনৈতিক নয়, ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও ভারতের জন্য একটি কৌশলগত সম্পদ। এটি ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাণিজ্য রুটে প্রভাব বিস্তার করে এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (CPEC) বিকল্প সংযোগ হিসেবে কাজ করতে পারে।


ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

চাবাহার বন্দরের সাময়িক অব্যাহতি ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু আঞ্চলিক সংযোগ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার একটি উদাহরণও।

ছয় মাস পর এই অব্যাহতি নবায়ন হবে কিনা, তা নির্ভর করবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর এবং ভারত কতটা কার্যকরভাবে বন্দরটিকে আঞ্চলিক বাণিজ্যে ব্যবহার করতে পারে তার ওপর।


#ট্যাগ: ভারত_ইরান_চাবাহার #আফগানিস্তান_বাণিজ্য #যুক্তরাষ্ট্র_নিষেধাজ্ঞা #দক্ষিণ_এশিয়া_কূটনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭)

চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারতের জন্য ছয় মাসের অব্যাহতি— যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে সাময়িক মুক্তি

০২:৩৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা অব্যাহতি

ভারত ইরানের চাবাহার বন্দরের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে ছয় মাসের জন্য ছাড় পেয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়স্বাল এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ২৯ অক্টোবর থেকে এই অব্যাহতি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ভারত এখন পুনরায় আফগানিস্তানে খাদ্যশস্য, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি পণ্য পাঠাতে পারবে এই বন্দর দিয়ে।


চাবাহারের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সম্পর্ক

চাবাহার বন্দরের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন নয়। ২০০৫ সালে ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে ভারত প্রথমবারের মতো এই বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে উভয় দেশ শাহিদ বেহেশতি টার্মিনাল যৌথভাবে উন্নয়নের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (সমঝোতা স্মারক – MoU) স্বাক্ষর করে। সেই সময় ভারতের লক্ষ্য ছিল মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ার বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার পাওয়া, পাশাপাশি আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা।


ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ও জটিলতা

২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে চাবাহার প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কারণ, এই প্রকল্পে যুক্ত থাকা যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইরান ফ্রিডম অ্যান্ড কাউন্টার-প্রোলিফারেশন অ্যাক্ট’-এর আওতায় নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারতেন।

তবে একই বছর ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের চাবাহার কার্যক্রমের জন্য একটি বিশেষ ছাড় দেয়, কারণ বন্দরটি আফগানিস্তানের মানবিক সহায়তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


আফগানিস্তানে সরবরাহের নতুন সুযোগ

সাম্প্রতিক মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে ভারত এখন আবারও চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে আফগানিস্তানে পণ্য পাঠাতে পারবে। এতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্যশস্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে।

চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ভারত মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান এবং ইউরোপের সঙ্গে নতুন সংযোগ স্থাপন করতে চায়। ফলে এই ছাড় ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধিতে বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।


কৌশলগত তাৎপর্য

চাবাহার বন্দরটি পাকিস্তানের গওয়াদর বন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত, যা চীনের সহায়তায় নির্মিত। তাই এই বন্দর কেবল অর্থনৈতিক নয়, ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও ভারতের জন্য একটি কৌশলগত সম্পদ। এটি ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাণিজ্য রুটে প্রভাব বিস্তার করে এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (CPEC) বিকল্প সংযোগ হিসেবে কাজ করতে পারে।


ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

চাবাহার বন্দরের সাময়িক অব্যাহতি ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু আঞ্চলিক সংযোগ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার একটি উদাহরণও।

ছয় মাস পর এই অব্যাহতি নবায়ন হবে কিনা, তা নির্ভর করবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর এবং ভারত কতটা কার্যকরভাবে বন্দরটিকে আঞ্চলিক বাণিজ্যে ব্যবহার করতে পারে তার ওপর।


#ট্যাগ: ভারত_ইরান_চাবাহার #আফগানিস্তান_বাণিজ্য #যুক্তরাষ্ট্র_নিষেধাজ্ঞা #দক্ষিণ_এশিয়া_কূটনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট