অনুষ্ঠানে উত্তেজনা: মিস মেক্সিকোকে প্রকাশ্যে তিরস্কার
থাইল্যান্ডে আয়োজিত মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার এক অনুষ্ঠানে বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যখন আয়োজক দেশের এক কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মিস মেক্সিকোকে অপমান করেন।
মঙ্গলবারের প্রাক-অনুষ্ঠানে মিস ইউনিভার্স থাইল্যান্ডের পরিচালক নাওয়াত ইৎসারাগ্রিসিল মিস মেক্সিকো ফাতিমা বোশকে প্রচারণামূলক কনটেন্ট পোস্ট না করার অভিযোগে প্রকাশ্যে তিরস্কার করেন।
বোশ আপত্তি জানালে নাওয়াত নিরাপত্তাকর্মী ডাকেন এবং যেসব প্রতিযোগী তাকে সমর্থন করছিলেন, তাদের প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। এরপর বোশ কক্ষ ত্যাগ করেন এবং অন্য প্রতিযোগীরাও তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাইরে চলে যান।
ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল, নাওয়াতের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা
ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল এবং পরে তা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন (এমইউও) নাওয়াতের আচরণকে “দুরভিসন্ধিমূলক” বলে নিন্দা জানিয়েছে। পরে নাওয়াত তার আচরণের জন্য প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, নাওয়াত উচ্চস্বরে বোশকে থামতে বলেন এবং তার কণ্ঠস্বর ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। অন্য প্রতিযোগীরা তখন প্রতিবাদ জানিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।
নাওয়াত বলেন, “যারা প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে চাও, বসে পড়ো। যারা বেরিয়ে যেতে চাও, বেরিয়ে যাও।” তবুও অধিকাংশ নারী দাঁড়িয়ে থেকে বোশের প্রতি সমর্থন জানায়।

মিস মেক্সিকোর অভিযোগ ও নাওয়াতের ব্যাখ্যা
ঘটনার পর ফাতিমা বোশ সংবাদমাধ্যমকে জানান, ৬০ বছর বয়সী ওই কর্মকর্তা তার সঙ্গে “অসম্মানজনক আচরণ” করেছেন এবং তাকে “বোকার মেয়ে” বলেছেন।
তবে নাওয়াত দাবি করেছেন, তার বক্তব্য ভুলভাবে অনুবাদ হয়েছে।
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি বোশকে “ডামহেড” বা “মাথামোটা” বলেছেন। কিন্তু পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তিনি বোশকে “ক্ষতি করেছে” বলতে চেয়েছিলেন।
মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষের কঠোর প্রতিক্রিয়া
এমইউও প্রেসিডেন্ট রাউল রোচা ভিডিও বার্তায় বলেন, নাওয়াত “আয়োজক হিসেবে প্রকৃত অর্থ ভুলে গেছেন”।
তিনি আরও বলেন, “নাওয়াত মিস মেক্সিকোকে অপমান, অবমাননা এবং ভয় দেখিয়েছেন—এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”
রোচা জানান, নাওয়াতের অংশগ্রহণ যতটা সম্ভব সীমিত করা হবে, প্রয়োজনে সম্পূর্ণ বাতিল করা হতে পারে। সংস্থাটি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে বলেও ঘোষণা দেয়।
রোচা বলেন, “মিস ইউনিভার্স এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে নারীরা তাদের কণ্ঠ শোনাতে পারে। এটি নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক।”
সংহতির বার্তা: প্রতিযোগীদের প্রতিবাদে বয়কট
মঙ্গলবারের ঘটনার পর একাধিক প্রতিযোগী অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান। তাদের মধ্যে ছিলেন বর্তমান মিস ইউনিভার্স ডেনমার্কের ভিক্টোরিয়া কেয়ার থাইলভিগ।
তিনি বলেন, “এটি নারীর অধিকারের প্রশ্ন। একজন প্রতিযোগীকে অপমান করা চরম অসম্মানজনক। তাই আমি এই অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি।”
বোশ পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি আমার দেশকে জানাতে চাই, আমি আমার কণ্ঠ তুলতে ভয় পাই না। আমি এখানে এসেছি নারীদের এবং মেয়েদের হয়ে কথা বলতে, যারা প্রতিনিয়ত তাদের অধিকারের জন্য লড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি কোনো পুতুল নই যে আমাকে সাজিয়ে মঞ্চে তোলা হবে। আমি এসেছি উদ্দেশ্য নিয়ে, কণ্ঠস্বর তোলার জন্য।”

দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ও নাওয়াতের ক্ষমা প্রার্থনা
ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ নাওয়াতের আচরণের নিন্দা জানায় এবং বোশের সাহসিকতার প্রশংসা করে।
এক ভিডিও বার্তায় নাওয়াত বলেন, “যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকে, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বিশেষ করে সেদিন উপস্থিত প্রায় ৭৫ জন প্রতিযোগীর কাছে আমি ক্ষমা চাই।”
প্রতিযোগিতা অব্যাহত
বিতর্ক সত্ত্বেও মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেমে নেই। বুধবার ব্যাংককে এক স্বাগত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার পরবর্তী পর্ব শুরু হয়েছে।
নতুন মিস ইউনিভার্স ২১ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















