যুদ্ধের চাপ কমাতে নতুন পদক্ষেপ
দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে এবং যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজা ও অন্যান্য অঞ্চলে অবস্থানরত রিজার্ভ সেনাদের সংখ্যা কমাতে শুরু করেছে ইসরায়েল। এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, দেশটি ধীরে ধীরে যুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে শান্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও দেশের উত্তরাঞ্চলসহ কয়েকটি ফ্রন্টে রিজার্ভ বাহিনীর সংখ্যা হ্রাস করছে। সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকে যেসব রিজার্ভ সেনাকে বারবার ডাকা হয়েছিল, তাদের দীর্ঘ ক্লান্তি ও মানসিক চাপ কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সম্পন্ন
বর্তমানে ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সম্পন্ন করছে। এতে প্রচুর সেনা উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা কমেছে। তবে দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে।
পরবর্তী ধাপটি আরও জটিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশগ্রহণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তবে এসব পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট কাঠামো এখনো নির্ধারিত হয়নি।
হাজারো রিজার্ভ সেনা ফেরানো হবে
ইসরায়েলি সূত্রগুলো জানিয়েছে, দেশটি কয়েক হাজার রিজার্ভ সেনাকে ফেরত পাঠাবে। কিছু ক্ষেত্রে তাদের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় থাকা নতুন সৈন্যদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের হামলার পর ইসরায়েল ৩ লাখেরও বেশি রিজার্ভ সেনাকে ডেকেছিল, যখন ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়েছেন এবং গাজা যুদ্ধের সূচনা হয়। দীর্ঘ এই সংঘাতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গাজা উপত্যকার বিশাল অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ছোট স্থায়ী বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল ইসরায়েল
ইসরায়েলের স্থায়ী সেনাবাহিনী তুলনামূলকভাবে ছোট হওয়ায় যুদ্ধের সময় তারা রিজার্ভ সদস্যদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু দীর্ঘ দায়িত্ব পালনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এই সেনারা। সাধারণত রিজার্ভ দায়িত্ব বছরে কয়েক সপ্তাহের বেশি নয়, কিন্তু যুদ্ধের শুরু থেকে তাদের মাসের পর মাস মাঠে থাকতে হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতিতেও চাপ বাড়ছে।
টেল-আবিবভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর গবেষক ইদিত শাফরান গিটলম্যান বলেন,
“রিজার্ভ সেনারা প্রায় ভেঙে পড়ছে, আর অর্থনীতি এত চাপ সহ্য করতে পারছে না। সামরিক বাহিনীর আর কোনো বিকল্প নেই, তাই তারা রাজনৈতিক নির্দেশনার অপেক্ষা না করেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।”

ক্লান্ত সৈন্য ও সামাজিক সংকট
যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ক্লান্ত রিজার্ভ সদস্যদের দায়িত্বে ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছিল। ফলে কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও চ্যাট গ্রুপের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহের মতো অস্বাভাবিক পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
অনেক সেনা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ যুদ্ধ তাদের পারিবারিক ও পেশাগত জীবন বিপর্যস্ত করেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, তারা আসলে এখনো কেন গাজায় যুদ্ধ করছেন।
উত্তরের সীমান্তে নতুন হামলা
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও বৃহস্পতিবার ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে হামলা চালিয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ আবার শক্তি সঞ্চয় করছে বলে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে এক বছর আগে যুদ্ধবিরতি হলেও, ইসরায়েলি সেনারা এখনও হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে।
যুদ্ধ ও শান্তির মধ্যবর্তী এক সময়
গবেষক গিটলম্যান বলেন, “ইসরায়েল এখন এমন এক সময়ের মধ্যে আছে যা পুরোপুরি যুদ্ধ নয়, আবার স্বাভাবিক অবস্থায়ও ফিরে আসেনি। এটি এক ধরনের অন্তর্বর্তী সময়।”
#ইসরায়েল #গাজাযুদ্ধ #রিজার্ভসেনা #হামাস #যুদ্ধবিরতি #মধ্যপ্রাচ্য #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















