কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শেয়ারের স্থায়িত্ব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগে শুক্রবার নাসডাক সামান্য নিম্নমুখীভাবে সপ্তাহ শেষ করেছে, যা এপ্রিলের পর থেকে এর সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক পতন। একই সঙ্গে, মার্কিন ট্রেজারি ফলনও সামান্য হ্রাস পেয়েছে।
এআই শেয়ারে পতনের প্রভাব
চিপ নির্মাতা ও প্রযুক্তি-সম্পর্কিত শেয়ারগুলো এই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো সপ্তাহে নাসডাক প্রায় ৩ শতাংশ হারিয়েছে। এপ্রিল থেকে নাসডাক প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমদানির ওপর নতুন শুল্ক ঘোষণা করেন। এআই প্রযুক্তিতে আশাবাদের ঢেউ তখন বাজারকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।
তবে এই সপ্তাহে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এনভিডিয়া প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং সতর্ক করেন যে, এআই প্রতিযোগিতায় চীন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলতে পারে।

জোনস্ট্রেডিং-এর প্রধান বাজার কৌশলবিদ মাইকেল ও’রুর্ক বলেন, “চীনের এআই প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত মন্তব্যের পর আমরা প্রযুক্তি খাতে বিক্রির চাপ দেখতে পাচ্ছি। বিনিয়োগকারীরা এখন শেয়ারের মূল্যায়নে নতুনভাবে ভাবছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটিকে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়াও বলা যেতে পারে। প্রযুক্তি খাতে বছরের শুরু থেকে শেয়ারের দারুণ উত্থান হয়েছে।”
শেয়ারবাজারের সামগ্রিক চিত্র
দিনের শেষদিকে ডাও জোন্স ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক সামান্য ঊর্ধ্বমুখী হলেও নাসডাক সামান্য হ্রাস পায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকারি অচলাবস্থার সমাধানে কংগ্রেসে কিছু অগ্রগতির খবর পাওয়ার পর বাজারে সামান্য স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
- • ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ বেড়েছে ৭৪.৮০ পয়েন্ট (০.১৬%) হয়ে ৪৬,৯৮৭.১০-এ পৌঁছেছে।
- • এসঅ্যান্ডপি ৫০০ বেড়েছে ৮.৪৯ পয়েন্ট (০.১৩%) হয়ে ৬,৭২৮.৮১-এ।
- • নাসডাক কম্পোজিট কমেছে ৪৯.৪৫ পয়েন্ট (০.২১%) হয়ে ২৩,০০৪.৫৪-এ নেমে গেছে।

বিশ্বজুড়ে বাজার সূচকের মধ্যেও দুর্বলতা দেখা যায়।
- • এমএসসিআই গ্লোবাল ইনডেক্স কমেছে ০.০৭%।
- • ইউরোপের স্টক্স ৬০০ সূচক নেমেছে ০.৫৫%।
চীনের রপ্তানিতে ধাক্কা
চীনের অক্টোবর মাসের রপ্তানি ১.১% কমেছে, যা ফেব্রুয়ারির পর সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির প্রভাবে এ পতন ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই তথ্য এশীয় বাজারে শীতলতা ছড়িয়েছে, কারণ এটি দেখিয়েছে—আমেরিকান ভোক্তাদের ওপর চীনের উৎপাদন নির্ভরতা কতটা বেশি।
মার্কিন বন্ড ফলন ও ভোক্তা আস্থার অবস্থা
মার্কিন ট্রেজারি ফলন সামান্য হ্রাস পেয়েছে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোক্তা আস্থা সূচক অনুযায়ী, নভেম্বরে মার্কিন ভোক্তা আস্থা নেমে এসেছে ৫০.৩-এ—২০২২ সালের জুনের পর এটি সর্বনিম্ন। সরকারি অচলাবস্থা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাই এই পতনের মূল কারণ।
১০-বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ফলন সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৪.০৯১ শতাংশে।
![Dólar à vista [chevron_left]brby[chevron_right] fecha em baixa de 0,59%, a r$5,3220 na venda | Reuters](https://www.reuters.com/resizer/v2/MHG23WQZTBOMNJQEQ63C3U42BA.jpg?auth=86d70463298b5736467ad6032cfa684ac4213d9ea1849272359f455e3ce2ce96&width=5500&quality=80)
ডলারের দুর্বলতা ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজার
মার্কিন ডলার প্রধান মুদ্রার বিপরীতে কিছুটা দুর্বল হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সম্প্রতি সুদের হার কমানোর ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করার পরও ডলার কিছুটা শক্তিশালী ছিল। তবে শুক্রবার ডলার সূচক ০.১১% হ্রাস পেয়ে ৯৯.৫৭-এ নেমেছে। ইউরো বেড়েছে ০.১৪% হয়ে ১.১৫৬৩ ডলারে এবং ইয়েনের বিপরীতে ডলার বেড়েছে ০.২৫% হয়ে ১৫৩.৪৫-এ।
তেলের দাম ও স্বর্ণের স্থিতি
তেলের দামও দিন শেষে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করার পর হাঙ্গেরি রুশ তেল ব্যবহারের অনুমতি পেতে পারে—এই প্রত্যাশায় বাজারে ইতিবাচক সাড়া দেখা যায়।
- • মার্কিন অপরিশোধিত তেল বেড়েছে ৩২ সেন্ট হয়ে ব্যারেলপ্রতি ৫৯.৭৫ ডলার।
- • ব্রেন্ট তেল বেড়েছে ২৫ সেন্ট হয়ে ৬৩.৬৩ ডলার।
স্বর্ণের দামও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এপ্রিলের পর থেকে প্রযুক্তিখাতের প্রবল উত্থান এখন কিছুটা সংশয়ে পড়েছে। এআই নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদের পর বাজার এখন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অচলাবস্থা, চীনের বাণিজ্য সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।
#আর্থিকসংবাদ #নাসডাক #এআইশেয়ার #বিশ্বঅর্থনীতি #চীনযুক্তরাষ্ট্রবাণিজ্য #স্টকমার্কেট #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















