চীনের নতুন রপ্তানি নীতি: আংশিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত
চীন বিরল খনিজ (Rare Earth) রপ্তানি প্রক্রিয়ায় কিছুটা শিথিলতা আনতে নতুন লাইসেন্স ব্যবস্থা চালুর কাজ শুরু করেছে। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশিত পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট শিল্প সূত্রগুলো।
দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে নতুন ও সরলীকৃত রপ্তানি অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারবে। শিল্পক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রক্রিয়া নিয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের প্রেক্ষাপট
বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি প্রক্রিয়াজাত বিরল খনিজ ও ম্যাগনেট চীন উৎপাদন করে। গাড়ি থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত নানা উচ্চপ্রযুক্তি পণ্যে এসব খনিজ অপরিহার্য। তাই এই খাতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় বেইজিংয়ের জন্য বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে এপেক সম্মেলনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর, চীন ঘোষণা দেয় যে অক্টোবর মাসে আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হবে।
তবে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এপ্রিল মাসে আরোপিত বৃহত্তর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কোনো ঘোষণা দেয়নি, যা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আশাবাদ ও বাস্তব চিত্র
হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, চীন সাধারণ রপ্তানি লাইসেন্স চালু করতে সম্মত হয়েছে, যা কার্যত রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের অবসান নির্দেশ করে। কিন্তু বেইজিংয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এই লাইসেন্স ব্যবস্থার পূর্ণ বাস্তবায়নে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।
শিল্প পর্যবেক্ষকদের মতে, এই নতুন লাইসেন্সের অর্থ এই নয় যে এপ্রিলের কঠোর রপ্তানি বিধিনিষেধ বাতিল করা হয়েছে। বরং এটি কেবল নির্দিষ্ট খাতের জন্য কিছুটা সুবিধা এনে দেবে।
এক বছরের মেয়াদ ও রপ্তানি পরিমাণ বৃদ্ধি
নতুন লাইসেন্স এক বছরের জন্য কার্যকর থাকবে এবং এতে রপ্তানির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। তবে প্রতিরক্ষা বা সংবেদনশীল প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এই লাইসেন্স পাওয়া কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করছে, যেখানে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত তথ্য দিতে হবে। তবে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে বছরের শেষ নাগাদ বলে মনে করা হচ্ছে।
শিল্পখাতে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা
এপ্রিল ও অক্টোবর মাসে চীন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার পর প্রতিটি চালানের জন্য আলাদা লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। এতে রপ্তানি বিলম্বিত হচ্ছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইইউভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জমা দেওয়া প্রায় ২,০০০ আবেদনের মধ্যে এখন পর্যন্ত অর্ধেকের সামান্য বেশি অনুমোদন পেয়েছে।
চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি নীতিতে আংশিক শিথিলতার ইঙ্গিত মিললেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশিত মুক্ত বাণিজ্য পরিবেশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
চীনের নতুন লাইসেন্স ব্যবস্থা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন কিছুটা সহজ করতে পারে, তবে প্রতিরক্ষা ও উচ্চপ্রযুক্তি খাতে সীমাবদ্ধতা বহাল থাকায় এর প্রভাব সীমিত হতে পারে।
#চীন #বিরলখনিজ #রপ্তানিনীতি #যুক্তরাষ্ট্র #বাণিজ্যসম্পর্ক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















