তুরস্কের পদক্ষেপ: নেতানিয়াহু ও শীর্ষ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ ৩৭ জন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে “গণহত্যা” ও “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ”-এর অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্ক। শুক্রবার ইস্তানবুলের প্রধান প্রসিকিউটরের দপ্তর থেকে এই আদেশ জারি করা হয়, যা মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র কূটনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
গাজা হামলা ও সাহায্যবাহী জাহাজে আক্রমণের অভিযোগ
প্রসিকিউটরের দপ্তর জানিয়েছে, এই অভিযোগগুলো মূলত গাজায় পরিচালিত সামরিক অভিযানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং গত মাসে গাজামুখী সাহায্যবাহী নৌবহরে হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত।
তুর্কি কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে এবং তা গণহত্যার শামিল।
ইসরায়েলের তীব্র প্রতিক্রিয়া
তুরস্কের এই পদক্ষেপের পর ইসরায়েল দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সাআর এই পদক্ষেপকে “রাজনৈতিক প্রচারণা” বলে অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাংবাদিকদের দমন করতে বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করছেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এরদোয়ানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামওগলু-কে চলতি বছরের মার্চে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

হামাসের সমর্থন ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
প্যালেস্টাইনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস তুরস্কের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত “তুর্কি জনগণ ও নেতৃত্বের ন্যায়বিচারপন্থী অবস্থানের প্রতিফলন।”
গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনীতে তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
তুরস্কের এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে একটি বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের আলোচনা চলছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশ গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (ISF) গঠনের বিষয়ে মতবিনিময় করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই বাহিনী অস্থায়ীভাবে গাজায় মোতায়েন হয়ে নতুন প্যালেস্টাইনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে এবং অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, তুরস্ক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং সম্ভাব্যভাবে ওই নিরাপত্তা বাহিনীতে অংশ নিতে পারে।
তবে ইসরায়েল স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা গাজায় তুর্কি সেনা মোতায়েনে সম্মত নয়।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভ্যান্সও বলেন, গাজায় কোনো বিদেশি সেনা মোতায়েনের আগে ইসরায়েলের সম্মতি প্রয়োজন হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পদক্ষেপের প্রেক্ষাপট
তুরস্কের এই পরোয়ানা আসে প্রায় এক বছর পর, যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
সেই সময় নেটানিয়াহুর দপ্তর আইসিসির অভিযোগকে “অযৌক্তিক ও ইহুদিবিদ্বেষী” বলে অভিহিত করেছিল।
#তুরস্ক #ইসরায়েল #নেটানিয়াহু #গাজা #গণহত্যা #আন্তর্জাতিক_রাজনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















