প্রাচীন চার্চের অপূর্ব রত্ন ভাণ্ডার প্রদর্শন করছে নিউ ইয়র্কের দ্য ফ্রিক কালেকশন। ইউরোপের বিভিন্ন সম্রাট ও শাসকের উপহার হিসেবে জেরুজালেমের পবিত্র সমাধিক্ষেত্র গির্জায় পৌঁছানো এসব দুষ্প্রাপ্য রত্ন এখন ‘টু দ্য হোলি সেপাল্কার: ট্রেজারস ফ্রম দ্য টেরা স্যাংটা মিউজিয়াম’ প্রদর্শনীতে উন্মুক্ত। এতে ৪০টিরও বেশি বিরল ধর্মীয় সামগ্রী ও টেক্সটাইল—সবই ১৭তম ও ১৮তম শতকের ইউরোপীয় শিল্পকুশলতার অসাধারণ নিদর্শন।
প্রদর্শনীটি সাজিয়েছেন ফ্রিক কালেকশনের সাবেক প্রধান কিউরেটর জ্যাভিয়ার এফ. সালোমন, যিনি বর্তমানে লিসবনের কালাউস্টে গুলবেনকিয়ান মিউজিয়ামের পরিচালক। তাঁর সঙ্গে আছেন জ্যাক চার্লস-গাফিয়ো ও বেনোয়া কনস্তাঁসু, টেরা স্যাংটা মিউজিয়ামের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য।
এ প্রদর্শনী দেখায়, কীভাবে সেই সময়ের ক্যাথলিক ইউরোপ—হোলি রোমান সম্রাট, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, নেপলস এবং ইতালির শহরগুলোর শাসকেরা—জেরুজালেমে না গিয়েও নিজেদের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যয়বহুল উপহার গির্জায় পাঠাতেন। সম্রাট কনস্টানটাইন প্রতিষ্ঠিত এই চার্চকে খ্রিস্টধর্মের অন্যতম ভিত্তি ধরা হয়। এটি লাতিন (রোমান) ক্যাথলিক, গ্রিক অর্থোডক্স, আর্মেনিয়ান, ইথিওপীয় ও কপ্টিক খ্রিস্টানদের যৌথ তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
এই প্রদর্শনীতে দেখা যায় ‘কাস্টোডি অব দ্য হোলি ল্যান্ড’-এর গোপন ভাণ্ডার, যা ১৩০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জেরুজালেমের খ্রিস্টীয় পবিত্র স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। যদিও এসব পবিত্র সামগ্রী ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়, তবু এগুলো দীর্ঘদিন ধরে জনসমক্ষে প্রদর্শিত হয়নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো—দরিদ্রতা প্রতিশ্রুত ফ্রান্সিসকান সম্প্রদায়ই এসব অমূল্য ধন সংরক্ষণ করে এসেছে।
উজ্জ্বল সোনা-রূপার দীপশিখা, রত্নখচিত বেদীপাত্র ও ভারী সূচিশিল্পে তৈরি ধর্মীয় পোশাক—সবই ইউরোপীয় শিল্পকলার শীর্ষ মানের। এর বাইরে কেবল একটি ব্যতিক্রম, গ্যালারির প্রবেশপথে রাখা ১৮শ শতকের প্যালেস্টাইনি কারিগরের তৈরি ‘মডেল অব দ্য বাসিলিকা অব দ্য হোলি সেপাল্কার’। জলপাই ও পিস্তাশিও কাঠে তৈরি এই সূক্ষ্ম নকশা, মুক্তো, উটের হাড়ের অলংকরণ—সবই দর্শকের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
প্রদর্শনীর শুরুতে বিশাল রূপার রিলিফ ‘দ্য রেজারেকশন’ (১৭৩৬, নেপলস)। এর উজ্জ্বলতা ও সূক্ষ্ম খোদাই খ্রিস্টের পুনরুত্থানের পবিত্র মুহূর্তকে ফুটিয়ে তোলে। পাশেই ১৭শ শতকের ফরাসি সোনার রেলিক, যেটি স্বর্গদূত দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি ক্রস—ফরাসি দানের শক্ত উপস্থিতি জানান দেয়।
পরবর্তী অংশে দেখা যায় ১৬১৯ সালে লুই ত্রয়োদশের দেওয়া কারমাইন রঙের ধর্মীয় পোশাক ও বেদীর আবরণ। সোনালি ফ্লোর-দ্য-লি এর নকশা ফরাসি পরিচয়কে স্পষ্ট করে। লুই চতুর্দশের দেওয়া রত্নখচিত ক্রসিয়ার, পাত্র ও প্যাটেনসহ আরও অনেক সামগ্রী চোখে পড়ে। লুই পঞ্চদশের দেওয়া ১৭৪১ সালের সূক্ষ্ম সূচিশিল্পের পোশাক দেয়ালে ঝলমল করে।
সবচেয়ে বড় গ্যালারিটি ভরে রয়েছে হোলি রোমান সাম্রাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, নেপলস, ভেনিস ও জেনোয়ার উপহারসামগ্রীতে। এর মধ্যে অন্যতম ‘থ্রোন অব ইউকারিস্টিক এক্সপোজিশন’ (১৬৬৫, সিসিলি)—ছয় ফুট উচ্চতার রূপা-সোনার অলংকরণে ভরা এই সিংহাসনটি স্পেনের রাজা ফিলিপ চতুর্থ অর্ডার করেছিলেন।
তার পাশে রয়েছে ভেনিসের আট ফুট উঁচু রূপার টর্চিয়ার (১৭৬২), এবং নেপলসের তৈরি ১৭৩১ সালের রূপা-সোনার বেদীর সামনের অলংকরণ, যেখানে পেন্টেকস্ট দৃশ্য ভাস্বর ভঙ্গিতে ফুটে উঠেছে।
প্রদর্শনীর সবচেয়ে চমকপ্রদ অংশ কোনটি তা বলা কঠিন। তবে নেপলসের মধ্য ১৮শ শতকের সোনার ও ল্যাপিস লাজুলি ক্রসসহ সোনার মনস্ট্রান্স নিঃসন্দেহে শীর্ষে থাকবে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো—এমন মহামূল্য শিল্পকর্ম এখনো টিকে আছে কেবল ফ্রান্সিসকানদের কারণে। ইউরোপের অন্যত্র অধিকাংশই সোনা-রূপার মূল্যে গলিয়ে ফেলা হয়েছে।
এ অসাধারণ ভাণ্ডারের সম্পূর্ণ ইতিহাস জানতে প্রদর্শনীর ক্যাটালগটিই যথেষ্ট।
শিল্পকলা ধর্মীয়ঐতিহ্য জেরুজালেম ফ্রিককালেকশন প্রদর্শনী
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















