প্রস্তাবনা
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রকৃত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সাংবাদিকদের অবশ্যই রাজনৈতিক দলীয় সংশ্লিষ্টতা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে। তিনি মনে করেন, সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার রক্ষা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হলো শক্তিশালী ও স্বাধীন সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলা।
সাংবাদিক ইউনিয়নকে শক্তিশালী করার আহ্বান
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ফখরুল বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে এবং এ পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করছে।
তিনি বলেন, গোলাম পারওয়ার যথার্থভাবেই উল্লেখ করেছেন—সাংবাদিকদের দাবি, পেশাগত প্রয়োজন ও ইউনিয়নের মৌলিক দায়িত্বকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। মালিকপক্ষ ও সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়ন করাই ইউনিয়নের প্রধান কর্তব্য।

রাজনৈতিক সমর্থন সাংবাদিকদের সমস্যার সমাধান নয়
ফখরুল স্পষ্টভাবে বলেন, সরকার বা বিরোধী—কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সাংবাদিকদের সমস্যার সমাধান করে না। তার অভিযোগ, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে পরিকল্পিতভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে—হোক তা চাকরির নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশ বা অন্যান্য অধিকার—ইউনিয়নকে শক্তিশালী করতে হবে এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে সরে আসতে হবে। তবেই সাংবাদিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবেন।
গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুরো দেশ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশায়। তিনি মনে করিয়ে দেন, গণতন্ত্রে মতভিন্নতার জায়গা থাকে এবং অন্যের মত প্রকাশের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো অপরিহার্য।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে প্রায়ই মতের অমিলের কারণে মানুষকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা হয় এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণার শিকার হতে হয়—যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপব্যবহারের অভিযোগ
ফখরুল বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জবাবদিহিতার অভাব এখন বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। নেতিবাচক প্রচারণা, ব্যক্তি বা ব্যবসার বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়ানো—এসবই গণতন্ত্রকে দুর্বল করে।
তার মতে, বাংলাদেশেও এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নানা ধরনের বিভ্রান্তি, গুজব ও উত্তেজনাপূর্ণ প্রচারণা ছড়িয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
বিএনপির গণমাধ্যমবান্ধব অবস্থান
তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন থেকে বহু দলীয় রাজনীতি পুনর্বহাল করেন এবং বাকশাল আমলে বন্ধ থাকা সব পত্রিকা পুনরায় চালু করেন। খালেদা জিয়াও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচিতেও স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ গণমাধ্যম স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া প্রার্থনা
বক্তৃতার শুরুতে তিনি গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চান। তিনি জানান, চিকিৎসকেরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
জামায়াত নেতার মন্তব্য: ঐক্যই সাংবাদিকদের শক্তি
একই অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেন, কঠিন সময়ে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো ঐক্য। বিভিন্ন সংগঠনে বিভাজন থাকা সত্ত্বেও ঐক্য বজায় রাখতে পারলে দেশের বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৮টি সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা এই কাউন্সিলে অংশ নেন। আলোচনায় সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মতপ্রকাশের গুরুত্ব বিশেষভাবে উঠে আসে।
#রাজনীতি #বিএনপি #সাংবাদিকতা #গণতন্ত্র #বাংলাদেশ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















