ভারতে ওকাফ সম্পত্তি নিবন্ধনের ছয় মাসের নির্ধারিত সময়সীমা শনিবার রাতে শেষ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু স্পষ্ট করেছেন—এই সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না। তবে মানবিক বিবেচনায় সরকার জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা তথ্য আপলোড করতে পারেননি, তারা আগামী তিন মাসের মধ্যে ওকাফ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এ সময় কোনো জরিমানা বা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
ওকাফ ডিজিটাল ইনভেন্টরির যাত্রা
ওকাফ (সংশোধন) আইন, ২০২৫ অনুযায়ী দেশে থাকা সব ওকাফ সম্পত্তিকে ডিজিটাল তালিকাভুক্তির আওতায় আনতে জুনে চালু হয় ইউনিফায়েড ওয়াক্ফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (UMEED) পোর্টাল। প্রতিটি সম্পত্তির জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে আলাদা ইউনিক আইডি নম্বর।
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পোর্টালে ৪ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ওকাফ সম্পত্তির তথ্য জমা পড়েছে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি দেশের ওকাফ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের অস্বচ্ছতা কাটাতে সহায়ক হবে।

কেন সময় বাড়ানো সম্ভব নয়
সরকার জানিয়েছে, আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ছয় মাসের এই সীমা অপরিবর্তনীয়। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর আইন অনুযায়ী সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
তবে মুতাওয়াল্লিদের বাস্তব উদ্বেগ বিবেচনা করে মন্ত্রণালয় তিন মাসের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা স্থগিত রেখেছে, যাতে তারা প্রয়োজনীয় নথি ও তথ্য ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে পারেন।
ওকাফ ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা
যারা শনিবার রাতের মধ্যে নিবন্ধন সম্পূর্ণ করতে পারছেন না, তারা ওকাফ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন। আইন অনুযায়ী, যথাযথ কারণ দেখাতে পারলে ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ ছয় মাস অতিরিক্ত সময় অনুমোদন দিতে পারে। এই প্রক্রিয়া ছাড়া সময়সীমা বাড়ানোর অন্য কোনো পথ নেই।
নিবন্ধনে বিলম্ব কেন
মন্ত্রকের ব্যাখ্যা—বহু মুতাওয়াল্লি প্রযুক্তিগত অসুবিধা, দূরবর্তী অঞ্চলের সংযোগ সমস্যা কিংবা তথ্য সংগ্রহের জটিলতার কারণে সময়মতো আপলোড করতে পারেননি। তাদের কথা বিবেচনা করেই কোনো জরিমানা ছাড়াই ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
মন্ত্রী রিজিজু আবারও জানিয়েছেন—পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইন ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার সীমা অতিক্রম করে সরকার সময়সীমা পরিবর্তন করবে না।

ভারতের ওকাফ ব্যবস্থাপনায় যে নতুন বাস্তবতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল ইনভেন্টরি ও ইউনিক আইডি ব্যবস্থা ওকাফ সম্পত্তির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজ্যে জমিজমা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও দখলদারি নিয়ে অভিযোগ ছিল; নতুন এই ডিজিটাল প্রক্রিয়া তা কমাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
সময়সীমা না বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রের কঠোর মনোভাবের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হলেও মানবিক বিবেচনায় তিন মাসের সুযোগ অনেক মুতাওয়াল্লির জন্য স্বস্তির।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















