মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের আগামী চেয়ারম্যান হিসেবে কেভিন হ্যাসেটের নামই এখন আলোচনার শীর্ষে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে মনোনীত করতে পারেন বলে বাজারে জোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে হ্যাসেটকে ঘিরে বিশেষজ্ঞদের বড় উদ্বেগ—ফেডের স্বাধীনতা কি রাজনৈতিক চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
ফেডের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা
হ্যাসেটের রয়েছে অর্থনীতিতে পিএইচডি, ওয়াশিংটনে বহু দশকের অভিজ্ঞতা, এবং ফেডে আগের একটি কর্মজীবনের পর্ব। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের দুই মেয়াদে তাঁর রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা তাঁকে প্রচলিত ফেড নীতিবিদদের থেকে আলাদা করেছে। করনীতি নিয়ে তাঁর আগের কাজ যথেষ্ট পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ট্রাম্পের নীতিকে সমর্থন করে প্রশ্নবিদ্ধ বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন। কোভিড-১৯ মহামারির শুরুতে তাঁর “কিউবিক মডেল” ব্যাপক সমালোচিত হয়, কারণ এটি ভুলভাবে দ্রুত সংক্রমণ কমে যাওয়ার ধারণা দিয়েছিল।
রাজনৈতিক প্রভাব ও মুদ্রানীতির ঝুঁকি

এর আগেও ফেড চেয়ারম্যানদের রাজনৈতিক পরিচয় ছিল, তবে শেষবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা গিয়েছে ১৯৭০ সালে নিক্সন নিয়োগপ্রাপ্ত আর্থার বার্নসের ক্ষেত্রে। তাঁর সময় রাজনৈতিক চাপের কারণে সুদের হার অস্বাভাবিকভাবে কমানো হয়েছিল, যা মার্কিন অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতির ভয়াল চক্রে ফেলে দেয়। গবেষণা বলছে, এমন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আবার ঘটলে মূল্যস্ফীতি এক লাফে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
নতুন চেয়ারম্যান কি স্বাধীন থাকতে পারবেন?
হ্যাসেট প্রকাশ্যে বলেছেন, ফেডের নীতিতে রাজনৈতিক প্রভাব থাকা উচিত নয়। এ কারণে বন্ড ও মুদ্রাবাজারও এখনো শান্ত। ইতিহাসে দেখা গেছে, দায়িত্ব পাওয়ার পর বহু কর্মকর্তা স্বাধীন সিদ্ধান্তে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। তবে হ্যাসেট অন্যদিকে বলেছেন—ট্রাম্প এমন কাউকেই বেছে নেবেন, যাঁর সিদ্ধান্তে গাড়ির ঋণ ও মর্টগেজ আরও সস্তা হবে। অর্থাৎ সুদের হার কমানোই তাঁর অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ফেডের ভবিষ্যৎ গঠন নিয়ে বড় আশঙ্কা
আরও বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে যদি ট্রাম্প ফেড গভর্নর লিসা কুককে বরখাস্ত করতে সফল হন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তিনি নাকচ করেছেন। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে শুনানি অপেক্ষায়। আদালত যদি ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে তিনি ফেড বোর্ডে নিজের অনুগতদের বসাতে সক্ষম হবেন। সে ক্ষেত্রে ফেডের কাঠামো ও বিশ্বাসযোগ্যতা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
হ্যাসেট যদি চেয়ারম্যান হন এবং ফেড রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তা হলে তাঁর ক্যারিয়ারের এই পর্যায়টি হতে পারে একই সঙ্গে প্রতীকী এবং অস্বস্তিকর—একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















