ডটকম থেকে এআই—বাজার বুদ্বুদের ইতিহাস কি আবার ফিরছে?
বিশ্ববাজারে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বহুবার বুদ্বুদ চিনেছেন, কিন্তু কখন তা ফেটে যায়—সে মুহূর্ত নির্ভুলভাবে ধরতে পারেননি কেউই। দামের উড়াল যত দ্রুত বাড়ে, পতনও ততটাই হঠাৎ হয়। বর্তমান সময়ে এআই-নির্ভর প্রযুক্তি শেয়ার ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে।
ডটকম বুদ্বুদের প্রতিচ্ছবি
রেয় ডালিও, পিটার লিঞ্চ, হাওয়ার্ড মার্কস—সবাই আগেই ডটকম বুদ্বুদের ঝুঁকি দেখেছিলেন। জর্জ সোরস ইন্টারনেট স্টক শর্ট করে বড় লোকসান গুনেছিলেন। ওয়ারেন বাফেটও প্রযুক্তি খাতে হাত দিতে অস্বীকার করেছিলেন।
কিন্তু সতর্কবার্তা দেওয়ার পাঁচ বছর পর, ২০০০ সালের মার্চে NASDAQ ৮০% ধসে পড়ে। ততদিনে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা অনেক দেরিতে এসেছিল।
আজকের উদ্বেগ: এআই শেয়ার কি বেশি উত্তপ্ত?
এখন বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক এআই-সম্পর্কিত স্টক নিয়ে।

প্যালান্টিয়রের মতো কোম্পানির শেয়ারের মূল্যায়ন আগামী বছরের সম্ভাব্য আয়ের ২০০ গুণেরও বেশি।
S&P 500-এর মূল্যায়নও ইতিহাসে মাত্র দু’বার—১৯৯৯ এবং ২০০০ সালে—এত বেশি হয়েছিল।
অনেকেই ভাবছেন, এআই বুদ্বুদ কি তার চূড়ায় পৌঁছে গেছে?
উচ্চ মূল্যায়ন দীর্ঘমেয়াদে ইঙ্গিত দেয়, স্বল্পমেয়াদে নয়
সাইক্লিক্যালি অ্যাডজাস্টেড পিই (CAPE) অনুযায়ী ১০ বছরের রিটার্ন বেশ নির্ভরযোগ্যভাবে অনুমান করা গেলেও
এক বছরের রিটার্ন অনুমান করতে এর প্রায় কোনো ক্ষমতাই নেই।
অর্থাৎ, দাম যতই বেশি হোক, ধস কখন আসবে তা পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন।
গুগল সার্চ: বাজার ধসের নতুন সূচক
হাওয়ার্ড মার্কসের ধারণার মতো, যখন সাধারণ মানুষ বিনিয়োগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়—তখনই বুদ্বুদ ফাটার সম্ভাবনা বাড়ে।
বিটকয়েন, ডজকয়েন, স্প্যাক, ওয়্যারেবল টেক, ক্যানাবিস স্টক—সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে:
গুগল সার্চ যখন শীর্ষে পৌঁছেছে, তার পরের ১২ মাসেই দাম বড় ধস নেমেছে।

কিন্তু এআই স্টক নিয়ে আগস্টে সার্চ শীর্ষে উঠলেও দাম তখনও বাড়ছিল।
অক্টোবর-নভেম্বরেই এসে বড় পতন দেখা যায়—এখন সার্চ কমছে, দামও কমছে একসঙ্গে।
এআই বাজারে ইতিমধ্যেই চাপ
এনভিডিয়ার শেয়ার দাম শীর্ষ থেকে ১৩% কমেছে।
ফিলাডেলফিয়া সেমিকন্ডাক্টর সূচক তিন সপ্তাহে ১৩% কমে আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
AIQ ETF সর্বোচ্চ থেকে ১২% পড়েছে।
বিটকয়েন অক্টোবরের শুরু থেকে ২৫% পতন দেখেছে।

এই সংকেতগুলো দেখাচ্ছে—ঝুঁকির appetite কমছে, যা প্রায়ই ধসের দিকে নির্দেশ করে।
বুদ্বুদ ফাটার শেষ সংকেত: বিশেষজ্ঞের পতন
ডটকম বুদ্বুদের সময় বহু বড় বিনিয়োগকারী ধীরে ধীরে বাজারচ্যুত হয়েছিলেন।
জুলিয়ান রবার্টসনের ফান্ড বুদ্বুদ ফাটার দুই দিন আগেই বন্ধ হয়ে যায়।
ইতিহাস বলছে—যখন বুদ্বুদের বিপক্ষে বাজি ধরা বড় বড় নামগুলো হাল ছাড়ে, তখনই ধসের সময় ঘনিয়ে আসে।
২০২৫ সালের সেই চিত্র আবারও দেখা যাচ্ছে:
মাইকেল বারি—যিনি ২০০৮ সালের সংকট আগেই ধরেছিলেন—এআই স্টকের পতন অনুমান করে শর্ট করেছিলেন। অক্টোবরেই তিনি নিজের ফান্ড বন্ধ করার ঘোষণা দেন।
এটি কি নতুন বাজার ধসের আগাম ইঙ্গিত?
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















