১২:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
অন্ধকার ভ্রমণের উত্থান: অতীতের ক্ষত দেখতেই কেন বাড়ছে পর্যটকের ভিড় সেনেগালে দুর্নীতি দমন না রাজনৈতিক প্রতিশোধ? ফায়ে–সোঙ্কো সরকারের কড়াকড়িতে বিতর্ক তুঙ্গে মরক্কোর দাখলা অ্যাটলান্টিক বন্দর: আফ্রিকা-সাহেল বাণিজ্যের নতুন প্রবেশদ্বার বিশ্বের ৯৯% চিপ প্রযুক্তির নায়ক: সেমিকন্ডাক্টর কিংবদন্তি চি-তাং সা’র অস্থি চীনে সমাহিত রাশিয়ায় নির্বাসন থেকে সিরীয় উপকূলে নতুন বিদ্রোহের ছক আঁকছেন আসাদের সাবেক গুপ্তচরপ্রধান ও কোটিপতি চাচাতো ভাই সপ্তাহের শুরুতেই শেয়ারবাজারে সূচকপতন ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৫১৬ জন ভর্তি যে ভারী বোঝা নামে না কখনও বিশ্বায়নের যুগে নেতার নতুন ভূমিকা মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভে আগারগাঁও সড়ক অবরোধ

সবুজ শক্তিতে ব্রেক নয়,‘অ্যাডভাইজারি’ জল্পনা উড়িয়ে দিল ভারত সরকার

তহবিল বন্ধের গুঞ্জন আর উদ্বিগ্ন বাজার

ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় সপ্তাহান্তে এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি নতুন সৌর–বায়ু প্রকল্পে ঋণ অনুমোদন থামানোর কোনো নির্দেশ তারা দেয়নি। সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নাকি সরকারি স্তরে পরিষ্কার ইঙ্গিত গেছে যে নতুন গ্রিন প্রজেক্টে অর্থছাড় আপাতত ধীর করতে হবে। মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্প মূল্যায়ন ও অনুৎপাদক ঋণ কমানোর বিষয়ে ভেতরে ভেতরে নানা আলোচনার কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু নীতিগতভাবে নবায়নযোগ্য খাতে তহবিল প্রবাহ নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে এই ব্যাখ্যা এল, যখন ভারত আগামী এক দশকে সৌর, বায়ু ও সবুজ হাইড্রোজেন খাতে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ টানার পরিকল্পনা করছে।

India urges caution on lending for new solar module capacity as oversupply looms, ministry letter shows | Reuters

প্রকল্প নির্মাতারা বলছেন, বাস্তবে তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ কম নয়। অনেক রাজ্য মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঠিক সময়ে বিল পরিশোধ করছে না, জমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও গ্রিড সংযোগের সীমাবদ্ধতাও প্রকল্প ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনানুষ্ঠানিক ‘সতর্কবার্তা’ পেয়ে ঋণ অনুমোদনে গতি কমিয়ে দেয়, তবে নিলাম প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাবে এবং সুদের হারও বাড়তে পারে। ঠিক এই দুশ্চিন্তাই বাজারে হাতবদল হচ্ছিল, যা ভারতের নিজেদেরকে ‘গ্রিন ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ হিসেবে তুলে ধরার প্রচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সংকেত পাঠাচ্ছিল। তাই প্রকাশ্য বিবৃতিতে সরকার একটি বিষয় পরিষ্কার করল—যোগ্য, ব্যাংকযোগ্য নবায়নযোগ্য প্রকল্পে ঋণ দিতে কোনো বাধা নেই; বরং প্রকল্প বাছাই ও ঝুঁকি যাচাই আরও কঠোর হোক, সেটাই তাদের প্রত্যাশা।

ভারতের জ্বালানি রূপান্তরের ভেতরের জটিলতা এই ঘটনাতেই স্পষ্ট। এখনও দেশটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশ আসছে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে, আর কয়লা–নির্ভর রাজ্যগুলো দ্রুতগতির রূপান্তরে স্বস্তি পাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়গুলো একদিকে রাজ্যগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি নবায়নযোগ্য ক্রয়চুক্তি সই ও তা মেনে চলার জন্য চাপ দিচ্ছে, অন্যদিকে বাজারে কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে অনেক রাজ্য আবার স্বল্পমেয়াদি সস্তা সরবরাহের দিকে ঝুঁকে পড়ে। একই সময়ে, অতীতের অবকাঠামো ঋণ–খেলাপির দাগ এখনো ব্যাংকগুলোর ব্যালান্স শিটে তাজা; নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপও রয়েছে ভবিষ্যতে যেন নতুন কোনো ‘গ্রিন এনপিএ’ তৈরি না হয়। সব মিলিয়ে এক কাঠামোগত টানাপোড়েন—কাগজে যত বেশি গিগাওয়াট লক্ষ্য, বাস্তবে ততটা দ্রুত এগোনোর জন্য আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি কতটা আছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।

Despite Bold Targets, India's Clean Energy Drive Lacks Investor Backing – Outlook Business

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই ব্যাখ্যার গুরুত্ব আছে। জলবায়ু আলোচনায় ভারত নিজেকে একদিকে উন্নয়নশীল অর্থনীতির প্রতিনিধি, অন্যদিকে বড় কার্বন নির্গমনকারী হিসেবে তুলে ধরে বলছে—সবুজ বিনিয়োগের স্থিতিশীল নীতি সংকেত ছাড়া বৈশ্বিক পুঁজি আসবে না। যদি ধারণা হয় যে দিল্লি নবায়নযোগ্য খাতে কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে, তবে সমালোচকেরা বলবে, উদীয়মান অর্থনীতিগুলো এখনও কয়লা ও ফসিল জ্বালানির ওপর বাজি ধরে রেখেছে। তাই কোনো বাস্তব নীতিপরিবর্তনের আগেই ‘অ্যাডভাইজারি’ গুঞ্জনকে খণ্ডন করে মন্ত্রণালয় আগামী বিনিয়োগ সম্মেলন ও জলবায়ু সম্মেলনের আগে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট রাখার চেষ্টা করছে। এখন নজর থাকবে, কেন্দ্র কত দ্রুত রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থা, ব্যাংক ও প্রকল্প নির্মাতাদের একই দিকে হাঁটাতে পারে এবং ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রাকে গ্রিডে টেকসই গিগাওয়াটে রূপ দিতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

অন্ধকার ভ্রমণের উত্থান: অতীতের ক্ষত দেখতেই কেন বাড়ছে পর্যটকের ভিড়

সবুজ শক্তিতে ব্রেক নয়,‘অ্যাডভাইজারি’ জল্পনা উড়িয়ে দিল ভারত সরকার

০৩:৫৮:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

তহবিল বন্ধের গুঞ্জন আর উদ্বিগ্ন বাজার

ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় সপ্তাহান্তে এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি নতুন সৌর–বায়ু প্রকল্পে ঋণ অনুমোদন থামানোর কোনো নির্দেশ তারা দেয়নি। সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নাকি সরকারি স্তরে পরিষ্কার ইঙ্গিত গেছে যে নতুন গ্রিন প্রজেক্টে অর্থছাড় আপাতত ধীর করতে হবে। মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্প মূল্যায়ন ও অনুৎপাদক ঋণ কমানোর বিষয়ে ভেতরে ভেতরে নানা আলোচনার কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু নীতিগতভাবে নবায়নযোগ্য খাতে তহবিল প্রবাহ নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে এই ব্যাখ্যা এল, যখন ভারত আগামী এক দশকে সৌর, বায়ু ও সবুজ হাইড্রোজেন খাতে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ টানার পরিকল্পনা করছে।

India urges caution on lending for new solar module capacity as oversupply looms, ministry letter shows | Reuters

প্রকল্প নির্মাতারা বলছেন, বাস্তবে তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ কম নয়। অনেক রাজ্য মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঠিক সময়ে বিল পরিশোধ করছে না, জমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও গ্রিড সংযোগের সীমাবদ্ধতাও প্রকল্প ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনানুষ্ঠানিক ‘সতর্কবার্তা’ পেয়ে ঋণ অনুমোদনে গতি কমিয়ে দেয়, তবে নিলাম প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাবে এবং সুদের হারও বাড়তে পারে। ঠিক এই দুশ্চিন্তাই বাজারে হাতবদল হচ্ছিল, যা ভারতের নিজেদেরকে ‘গ্রিন ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ হিসেবে তুলে ধরার প্রচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সংকেত পাঠাচ্ছিল। তাই প্রকাশ্য বিবৃতিতে সরকার একটি বিষয় পরিষ্কার করল—যোগ্য, ব্যাংকযোগ্য নবায়নযোগ্য প্রকল্পে ঋণ দিতে কোনো বাধা নেই; বরং প্রকল্প বাছাই ও ঝুঁকি যাচাই আরও কঠোর হোক, সেটাই তাদের প্রত্যাশা।

ভারতের জ্বালানি রূপান্তরের ভেতরের জটিলতা এই ঘটনাতেই স্পষ্ট। এখনও দেশটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশ আসছে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে, আর কয়লা–নির্ভর রাজ্যগুলো দ্রুতগতির রূপান্তরে স্বস্তি পাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়গুলো একদিকে রাজ্যগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি নবায়নযোগ্য ক্রয়চুক্তি সই ও তা মেনে চলার জন্য চাপ দিচ্ছে, অন্যদিকে বাজারে কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে অনেক রাজ্য আবার স্বল্পমেয়াদি সস্তা সরবরাহের দিকে ঝুঁকে পড়ে। একই সময়ে, অতীতের অবকাঠামো ঋণ–খেলাপির দাগ এখনো ব্যাংকগুলোর ব্যালান্স শিটে তাজা; নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপও রয়েছে ভবিষ্যতে যেন নতুন কোনো ‘গ্রিন এনপিএ’ তৈরি না হয়। সব মিলিয়ে এক কাঠামোগত টানাপোড়েন—কাগজে যত বেশি গিগাওয়াট লক্ষ্য, বাস্তবে ততটা দ্রুত এগোনোর জন্য আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি কতটা আছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।

Despite Bold Targets, India's Clean Energy Drive Lacks Investor Backing – Outlook Business

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই ব্যাখ্যার গুরুত্ব আছে। জলবায়ু আলোচনায় ভারত নিজেকে একদিকে উন্নয়নশীল অর্থনীতির প্রতিনিধি, অন্যদিকে বড় কার্বন নির্গমনকারী হিসেবে তুলে ধরে বলছে—সবুজ বিনিয়োগের স্থিতিশীল নীতি সংকেত ছাড়া বৈশ্বিক পুঁজি আসবে না। যদি ধারণা হয় যে দিল্লি নবায়নযোগ্য খাতে কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে, তবে সমালোচকেরা বলবে, উদীয়মান অর্থনীতিগুলো এখনও কয়লা ও ফসিল জ্বালানির ওপর বাজি ধরে রেখেছে। তাই কোনো বাস্তব নীতিপরিবর্তনের আগেই ‘অ্যাডভাইজারি’ গুঞ্জনকে খণ্ডন করে মন্ত্রণালয় আগামী বিনিয়োগ সম্মেলন ও জলবায়ু সম্মেলনের আগে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট রাখার চেষ্টা করছে। এখন নজর থাকবে, কেন্দ্র কত দ্রুত রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থা, ব্যাংক ও প্রকল্প নির্মাতাদের একই দিকে হাঁটাতে পারে এবং ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রাকে গ্রিডে টেকসই গিগাওয়াটে রূপ দিতে পারে।