চীনের নানজিংয়ের দেজি প্লাজা এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত কেনাকাটার কেন্দ্রগুলোর একটি। ছয়তলা জুড়ে শিল্পময়, ঝলমলে টয়লেট—কোথাও নীয়ন আলো, কোথাও সোনালি সাজসজ্জা আর পিয়ানোর প্রর্দশন—দেখতেই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে। শুধু ঘুরতে নয়, কেনাকাটাও হচ্ছে জমজমাট। গত বছর ২৫ বিলিয়ন ইউয়ান বিক্রি করে দেজি চীনের সবচেয়ে বেশি আয় করা শপিংমল হয়ে ওঠে।
চীনে ভোক্তা খরচ দীর্ঘদিন ধরেই নিম্নমুখী। এই সংকট কাটাতে সরকার এখন ‘সরবরাহের মান বাড়িয়ে চাহিদা তৈরির’ কৌশল নিচ্ছে—যা শুরু হয়েছে দেজির মতো অভিজ্ঞতা-নির্ভর শপিং স্পেস দিয়ে, কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন প্রকৃত সমস্যা অনেক গভীর।
দেজি মডেল: সরবরাহ বাড়ালেই কি চাহিদা জাগবে?
চীনে বছরের পর বছর ভোক্তা মনোভাব দুর্বল। অক্টোবরেও টানা পাঁচ মাস খুচরা বিক্রি কমেছে। অথচ সরকারের নতুন ব্যয়-উদ্দীপনা পরিকল্পনার ফোকাস চাহিদার নয়—সরবরাহের মান উন্নয়নে।
২ নভেম্বর প্রকাশিত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, শপিং ভেন্যুতে আরও “কিউট” পণ্য, পপ মার্টের লাবুবুর মতো সংগ্রহযোগ্য খেলনা, এবং ‘ইমারসিভ অভিজ্ঞতা’ যুক্ত দোকান বাড়াতে হবে।
আরেক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকার সঙ্গে আরও আরামদায়ক সংযোগ, পপ-আপ স্টোর, অ্যানিমে ও গেমিং—এসব শখের দোকান বাড়াতে হবে।

সরকার কেন খুচরা পরামর্শক হয়ে উঠছে
অর্থনীতিবিদদের মতে, এসব উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ভোক্তা খরচ বাড়ানো নয়—বরং উৎপাদন শিল্পকে শক্তিশালী রাখা। আগের গৃহস্থালি পণ্য বদলানো কর্মসূচিও সরাসরি ভোক্তা নয়, নির্দিষ্ট শিল্পে ব্যয় বাড়াতেই ব্যবহৃত হয়।
মূল সংকট: চাকরি, সম্পত্তি বাজার ও আস্থা
চীন ইউরোপ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলের ঝু টিয়েন বলেন, চীনে ভোক্তা খরচের দুর্বলতাকে কেবল ‘সরবরাহ ঘাটতি’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। স্থানীয় ব্র্যান্ডের সফলতা দেখলে স্পষ্ট হয়—গুণমানগত দিক থেকে চীন উন্নতি করেছে।
রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক উ শিয়াওচিউ বলেন, দুর্বল চাকরি বাজারই খরচ কমার বড় কারণ।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সম্পত্তি খাতের ঐতিহাসিক সংকট; বাড়ির দাম পড়ে যাওয়ায় ধনী শ্রেণিও ব্যয় করতে ভয় পাচ্ছে।
ঝু’র পরামর্শ—চীনের উচিত অন্তত ৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান সরাসরি ভোক্তা প্রণোদনা দেওয়া, নইলে চাহিদা জাগানো কঠিন হবে।
উপসংহার
অর্থনীতির কাঠামোগত চাপ এতটাই গভীর যে কেবল ঝকঝকে টয়লেট বা চমকপ্রদ শপিংমল দিয়ে চাহিদা জাগানো সম্ভব নয়। চীনের ভোক্তা আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন আরও সাহসী, বাস্তবসম্মত নীতির।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















