সরবরাহ উদ্বৃত্ত, ওপেক প্লাসের কৌশল ও বাজারের প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নতুন করে শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত এবং বাজারে সরবরাহ উদ্বৃত্তের লক্ষণে বৈশ্বিক তেলের দাম আবারও নিচের দিকে চাপ খাচ্ছে। শুরুর দিকের লেনদেনে আন্তর্জাতিক ক্রুড বেঞ্চমার্কগুলো টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পতনের দিকে থাকায় বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত ও পাইপলাইন হামলার আশঙ্কা ধরে যে ‘রিস্ক প্রিমিয়াম’ তৈরি হয়েছিল, তা এখন ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে কিছু উৎপাদনকারী দেশ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি রপ্তানি করছে এবং ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশে চাহিদা দুর্বল হওয়ায় বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের চাপ তৈরি হয়েছে।

এ অবস্থায় ওপেক-প্লাস জোট তাদের স্বেচ্ছায় নেওয়া উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তে কতদিন অটল থাকতে পারবে, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। অনেক দেশের বাজেটই তেল আয়ের ওপর নির্ভরশীল; দীর্ঘমেয়াদি মূল্যপতন হলে উৎপাদন সীমিত রাখার রাজনৈতিক ইচ্ছা ধরে রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে। এদিকে এশিয়ার রিফাইনারিগুলো সস্তা ক্রুডের সুবিধা নিতে গিয়ে দুর্বল মার্জিনের মুখে পড়ছে, কারণ মজুত হয়ে আছে ডিজেল, পেট্রোল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বড় স্টক। ভোক্তাদের জন্য সাময়িকভাবে পাম্পে জ্বালানি সস্তা হওয়ার সুযোগ থাকলেও, খুচরা বিক্রেতারা কত দ্রুত দাম সমন্বয় করবে এবং মুদ্রাবিনিময় হারের ওঠানামা কেমন হবে—তার ওপরেই নির্ভর করবে প্রকৃত সুফল।
জ্বালানি রূপান্তর, জলবায়ু লক্ষ্য ও বিনিয়োগের দ্বিধা
স্বল্পমেয়াদি দামের ওঠানামার বাইরে এই অনিশ্চয়তা জলবায়ু লক্ষ্য ও জ্বালানি রূপান্তর পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গ্রিড উন্নয়ন বা শক্তি সাশ্রয়ী প্রকল্পে বিনিয়োগের কথা ভাবা অনেক বিনিয়োগকারী বলছেন, তেলের দামের হঠাৎ পতন ফসিল ফুয়েলে বিনিয়োগকে আবারও লাভজনক করে তুলছে। ফলে সরকারগুলো যখন অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস ধীরে ধীরে বাদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, ঠিক তখনই কোম্পানিগুলো নতুন তেল প্রকল্পে টাকা ঢালার প্রলোভনে পড়ে যাচ্ছে।
![]()
জ্বালানি আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য বর্তমান পরিস্থিতি একদিকে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমানোর সুযোগ তৈরি করেছে, অন্যদিকে কৌশলগত মজুত গড়ে তোলারও অবকাশ দিচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু কর্মীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন—এমন সময়েই সাবসিডি কমিয়ে সেই অর্থ গণপরিবহন, বাড়িঘর সাশ্রয়ী সংস্কার আর পরিচ্ছন্ন বিদ্যুতে বিনিয়োগ করা উচিত, যেন ভবিষ্যতে ফসিল জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও জ্বালানি দামের দিকে কড়া নজর রাখছে; তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার দিকে আসতে সুবিধা হবে। তবে যে কোনো নতুন সরবরাহ সংকট বা নিরাপত্তা ইস্যু মুহূর্তেই এই প্রবণতা উল্টে দিতে পারে—এই আশঙ্কা মাথায় রেখেই তারা নীতি নির্ধারণ করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















