এশীয় আমেরিকানদের জীবনের অদেখা ইতিহাস পর্দায় তুলে ধরার যে সংগ্রাম, তার অগ্রদূত রবার্ট নাকামুরা আর নেই। স্মৃতি, পরিচয় আর বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শিল্পকে হাতিয়ার করা এই নির্মাতা, শিক্ষক ও কর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। বয়স হয়েছিল আটাশি বছর।
শৈশবের ক্ষত থেকে শিল্পের জন্ম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাত্র ছয় বছর বয়সে পরিবারসহ জাপানি বংশোদ্ভূত মানুষের সঙ্গে তাঁকেও যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়। ঘরছাড়া হওয়ার সেই যাত্রা, শিবিরের একঘেয়ে ব্যারাক, অপমান আর ভয় তাঁর মনে গভীর দাগ কাটে। সেই ক্ষতই পরে হয়ে ওঠে তাঁর সৃষ্টির মূল প্রেরণা। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্পই পারে ট্রমার মুখোমুখি দাঁড়াতে।
মানজানার দিয়ে ইতিহাস বলা
উনিশশো একাত্তরে নির্মিত তাঁর স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র মানজানার প্রথম দিকের কাজগুলোর একটি, যেখানে বন্দিশিবিরের জীবন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরা হয়। এই ছবি এশীয় আমেরিকানদের নিজস্ব কণ্ঠে নিজেদের ইতিহাস বলার পথ খুলে দেয়। পরে আরও একাধিক প্রামাণ্যচিত্রে তিনি স্মৃতি, বর্ণবাদ ও আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন সামনে আনেন।
আন্দোলন ও প্রতিষ্ঠানের নির্মাতা
চলচ্চিত্রকে তিনি শুধু শিল্প নয়, প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে দেখেছেন। এশীয় আমেরিকান আন্দোলনের জাগরণে যুক্ত হয়ে তিনি সহপ্রতিষ্ঠা করেন ভিজুয়াল কমিউনিকেশনস, যা আজও এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় শিল্পীদের কাজ তুলে ধরছে। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে নতুন প্রজন্মকে শেখান নিজেদের গল্প নিজেরা বলার গুরুত্ব।
পরিচয়ের সন্ধানে জীবনভর পথচলা
শৈশবে নিজেকে পুরোপুরি আমেরিকান ভাবলেও যুদ্ধের পর হঠাৎই তিনি হয়ে যান সন্দেহের চোখে দেখা একজন মানুষ। স্কুল, সমাজ, এমনকি নিজের ভেতরেও চলেছে দ্বন্দ্ব। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বুঝেছিলেন, অদৃশ্য করে রাখা একটি জনগোষ্ঠীর জন্য দৃশ্যমান হওয়াই সবচেয়ে বড় লড়াই।
শেষ অধ্যায়েও সত্যের কথা
জীবনের শেষ দিকে তাঁকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে তিনি খোলামেলা বলেছেন শিবিরের স্মৃতি কীভাবে আজও মানুষের মন ভেঙে দেয়। তাঁর ভাষায়, বর্ণবাদী সমাজ মানুষের ভেতরটা এলোমেলো করে দেয়, আর শিল্পই সেই ক্ষত সারানোর পথ।
রবার্ট নাকামুরার প্রয়াণে এশীয় আমেরিকান চলচ্চিত্র শুধু একজন নির্মাতাকে নয়, হারাল নিজের ইতিহাস বলার এক নির্ভীক কণ্ঠ।
#রবার্টনাকামুরা #এশীয়আমেরিকান #চলচ্চিত্রইতিহাস #প্রামাণ্যচলচ্চিত্র #বর্ণবাদেরবিরুদ্ধে #সাংস্কৃতিকস্মৃতি #সারাক্ষণ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















